মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল নির্ধারণের ঐতিহাসিক দিন আজ

সানাউল হক চৌধুরী শামীম, মাধবপুর (হবিগঞ্জ), ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:১৪

আজ ঐতিহাসিক ৪ এপ্রিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চাবাগানের ব্যবস্থাপকের বাংলোতে মুক্তিযুদ্ধের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের বৈঠকে দেশকে স্বাধীন করার শপথ এবং যুদ্ধের রণকৌশল গ্রহণ করা হয়।

ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ঊর্ধ্বতন ২৭ সেনা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ওই বৈঠকে প্রথমে মুক্তিবাহিনীকে ভাগ করা হয় চারটি সেক্টর। চার সেনা কর্মকর্তাকে এসব সেক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে চার সেক্টরের কাজের সুবিধার্থে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়।

বৈঠকে অংশ নেন মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্নেল আতাউল গনি ওসমানী এমএনএ, আব্দুর রব, লে. কর্নেল সালেহ উদ্দিন মোহাম্মদ রেজা, মেজর কে এম শফিউল্লাহ, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর কাজী নুরুজ্জামান, মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী, মেজর নুরুল ইসলাম, মেজর সাফায়াত জামিল, মেজর সি আর দত্ত, ক্যাপ্টেন মো. নাসিম, ক্যাপ্টেন মতিন, ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূঁইয়া, লে. সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম, লে. হেলাল মুর্শেদ খাঁন, লে. নাসির উদ্দিন, লে. মাহবুব, লে. আনিস, লে. সেলিম, বিগ্রেডিয়ার ভি সি পান্ডে, এমএনএ মোস্তফা আলী ও মানিক চৌধুরী, এমপিএ মৌলানা আসাদ আলী ও এনামূল হক মোস্তফা শহীদ, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী, দুলাল চৌধুরী, দেওয়ান আশ্রাফ আলী ও কাজী কবির উদ্দিন, ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী পাঠান, এসডিও ড. আকবর আলী খান ও কাজী রকিব উদ্দিন, সিও মমতাজুর রহমান, মাহবুবুল হুদা ভূইয়া, আব্দুল ছাত্তার প্রমুখ।

তেলিয়াপাড়া চাবাগানের ম্যানেজার বাংলোটি ৪ এপ্রিল থেকে মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর এবং পরে ৩ ও ৪নং সেক্টর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

১নং সেক্টরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান, পরে মেজর রফিকুল ইসলাম। ২নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন প্রথমে খালেদ মোশাররফ, পরে মেজর হায়দার। ৩নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন প্রথমে মেজর শফিউল্লাহ, পরে মেজর নুরুজ্জামান। ৪নং সেক্টরে মেজর সি আর দত্ত, ৫নং সেক্টরে মেজর মীর শওকত আলী, ৬নং সেক্টরে উইং কমান্ডার বাশার ও ৭নং সেক্টরে মেজর কাজী নূরুজ্জামান কমান্ডার হন। ৮নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন প্রথমে মেজর ওসমান চৌধুরী, পরে মেজর এম এ মঞ্জুর। ৯নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন প্রথমে আব্দুল জলিল ও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন এম এ মঞ্জুর। ১০নং সেক্টর নৌ-বাহিনীর সৈনিকদের নিয়ে গঠন করা হয়। ১১নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু তাহের ও পরে ফ্লাইট লে. এম হামিদুল্লাহ।

প্রথম সেনা প্রধান কর্নেল আতাউল গনি ওসমানী এমএনএ ও সহ সেনা প্রধান ছিলেন লে. কর্র্নেল আব্দুর রউফ এমএনএ। এছাড়া আরও কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করে তাদেরকে অঞ্চলিক অধিনায়ক হিসাবে মনোনীত করা হয়।

সড়ক ও রেলপথে বৃহত্তর সিলেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়ার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এখান থেকে মুক্তিবাহিনী বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা ছাড়াও তেলিয়াপাড়া চাবাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে উঠে। ৩নং সেক্টর কমান্ডার মেজর কে এম শফিউল্লাহ তার হেডকোর্য়াটার স্থাপন করেন তেলিয়াপাড়া চাবাগানে। এম এ জি ওসমানীসহ কয়েকটি সেক্টরের কমান্ডাররাও বিভিন্ন সময়ে তেলিয়াপাড়া সফর করেন। ম্যানেজার বাংলোসহ পাশের এলাকা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সেনানায়কদের পদচারণায় মুখরিত।

১৯৭১ সালের ২১ জুনের পরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের কারণে তেলিয়াপাড়া চাবাগানে স্থাপিত সেক্টর হেডকোর্য়াটার তুলে নেওয়া হয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত তেলিয়াপাড়া চাবাগান স্মৃতিসৌধ এলাকা এখন আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। অত্যন্ত সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন বুলেট আকৃতির স্মৃতিসৌধ, ম্যানেজার বাংলো ও চাবাগানের অপূর্ব নৈর্সগিক দৃশ্যকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে পিকনিক স্পট। প্রতি বছর শীত মৌসুমে প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য পিপাসুরা পিকনিক করতে ছুটে আসেন তেলিয়াপাড়া চাবাগানে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক কিংবা তেলিয়াপাড়া রেলস্টেশন থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা স্থানে অবস্থিত তেলিয়াপাড়া চাবাগানের ম্যানেজার বাংলো। বাংলোর পাশে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি ধারণ করে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে বুলেট আকৃতির স্মৃতিসৌধ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ম্যানেজার বাংলোর যে ভবনটিতে সেনানায়ক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের বৈঠক হতো সেই বাংলোটির কক্ষগুলো ঘুরে ঘুরে দেখে গৌরব বোধ করেন দর্শনার্থীরা।

প্রতি বছরের ৪ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ বছরও বৃহস্পতিবার এ দিনটিকে জাতীয়ভাবে তেলিয়াপাড়া দিবস ঘোষণার দাবিতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানটিকে দর্শনাথীদের জন্য আরো আর্কষণীয় করে তুলতে রেস্টহাউজ নির্মাণসহ সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন অনেক দর্শনার্থী। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর ও যুদ্ধের নানা স্মৃতিবিজড়িত তেলিয়াপাড়া চাবাগানের এই বাংলোটিকে জাদুঘরে রুপান্তরের দাবি জানিয়ে আসছেন মুক্তিযোদ্ধারাও।

(ঢাকাটাইমস/০৪এপ্রিল/প্রতিবেদক/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :