মধু সংগ্রহে ব্যস্ত আলফাডাঙ্গার মৌ-চাষিরা

মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর)
  প্রকাশিত : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:২২
অ- অ+

ঋতুরাজ বসন্তে নানা রকমের ফুল ফোটে। মৌমাছিরা ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ায় মধু সঞ্চয়ের জন্য। একমাত্র মৌমাছিরাই পারে ফুল থেকে বিন্দু বিন্দু করে বিশুদ্ধ মধু সঞ্চয় করতে। তাই মৌ-চাষিরা মৌমাছিদের কৌশলে বশে এনে লালন-পালন করে মধু সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই মৌ-চাষিরা বছরজুড়েই মধু সংগ্রহের জন্য মৌমাছি লালন-পালন করেন।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় রয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলে ভরা মাঠ, রয়েছে নানা রকম ফুলসমৃদ্ধ গাছপালা। বসন্তের এই সময় উপজেলার চারদিকে বিভিন্ন ফুলের সৌরভ ছড়াচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতি বছর ছুটে আসেন মৌ-চাষিরা। এ বছরও বাক্সবন্দি মৌমাছি নিয়ে মধু সংগ্রহের জন্য এসেছেন তারা।

এমনই একজন মৌ-চাষি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার লাঙ্গুলিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম। আলফাডাঙ্গা-কাশিয়ানী সড়কের লাঙ্গুলিয়া এলাকায় মধু সংগ্রহকালে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, মৌমাছি পালন করে দেশের বিভিন্ন জেলা ঘুরে মধু সংগ্রহ করা তার পেশা। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে কষ্ট ও ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মৌমাছি পালন ও মধু সংগ্রহকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। তার রয়েছে মৌমাছি পালনের ১৫০টি বাক্স। তিনি বছরের প্রায় সাত-আট মাস মধু সংগ্রহ করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লাঙ্গুলিয়া এলাকায় রাস্তার পাশে বসানো হয়েছে সারিবদ্ধ দেড় শতাধিক কাঠের বাক্স। বাক্সে চাষিদের পালিত মৌমাছি উড়ছে। মৌ-চাষি শহিদুল ইসলাম তার সঙ্গীদের নিয়ে বাক্সগুলো থেকে মধু সংগ্রহ করছেন। তাদের শরীরে অসংখ্য মৌমাছি হাঁটছে। মধু সংগ্রহের জন্য এক ধরনের চড়কির মাধ্যমে তৈরি মধু ভাঙার ফ্রেম বসিয়ে ঘুরালে মধু বের হচ্ছে। এ সময় মৌ-চাষি শহিদুল ইসলাম জানান, নভেম্বরের শেষের দিক থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত নদী তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন স্থানে সরিষা মওসুমে তারা মধু সংগ্রহ করেন। এরপর তারা বিভিন্ন এলাকায় কালিজিরা-ধনিয়াসহ মৌসুমি ফসলের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করেন। সেখানে মধু সংগ্রহ শেষে লিচুর মওসুমে তারা চলে যান রাজশাহী, নাটোর, দিনাজপুরে। সেখানে লিচু ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করেন। সেখানে তারা প্রায় দুই মাস মধু সংগ্রহ করেন। এভাবে মৌ-চাষিরা বছরে সাত-আট মাস মধু সংগ্রহ করার সুযোগ পান।

বাকি সময়টা খারাপ আবহাওয়ার কারণে তাদের মৌমাছিগুলো বাক্সে রেখে পালন করতে হয়। এ সময়ে মৌমাছিকে বাঁচিয়ে রাখতে চিনি জাতীয় খাবার খাওয়াতে হয়।

তিনি আরো জানান, প্রায় এক মাস ধরে তারা আলফাডাঙ্গায় মধু সংগ্রহ করছেন। পাঁচ থেকে ছয় দিন পরপর বাক্সগুলো থেকে মধু আহরণ করা হয়। প্রতিবার প্রতি বাক্স থেকে দেড় থেকে দুই লিটার মধু পাওয়া যায়।

শহিদুল ইসলামের মতে, কালিজিরা বা লিচুর মধু যেকোনো পাত্রে রাখা যায়। সেটি জমে না বা গুণাগুণ দীর্ঘ সময় অক্ষুণœ থাকে। কিন্তু সরিয়ার মধু সংগ্রহের মাসখানেকের মধ্যে জমে যায়। তবে কাঁচের পাত্রে রাখলে এ মধু এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

মৌ-চাষির নিকট থেকে মধু কিনতে আসা স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, যত দূর শুনেছি- কালিজিরার মধু খুবই ভালো মানের হয়। এর গুণাগুণও ভালো। বাজারে আসল মধু পাওয়া মুশকিল। ডিজিটাল যুগে মধুও ডিজিটালভাবে তৈরি হয়। তাই সরাসরি চাষির কাছে আসল মধু পেয়ে কিনে নিলাম।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপন প্রসাদ সাহা বলেন, উপজেলায় পর্যাপ্ত সরিষা, কালিজিরা, মসুরি, পেঁয়াজ, ধনিয়া, খেসারিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়। এসব ফসলের ফুল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। এসব ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধুর মানও অত্যন্ত ভালো। এছাড়াও মৌমাছি মধু সংগ্রহের সময় ফসলের পরাগায়ণ ঘটায়। এতে ফসলের উৎপাদনও ২০-৩০ শতাংশ বাড়ে।

(ঢাকাটাইমস/২৪ফেব্রুয়ারি/কেএম/এলএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ওপারে কারফিউ, সুনামগঞ্জের ১২ কিলোমিটার সীমান্তে বিজিবির সতর্ক অবস্থান
খালিশপুরে শহীদ মিনারের জমি দখলের ভিডিও করায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণায় শাহবাগে ছাত্র-জনতার উল্লাস
৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা