করোনা দিনে বাস ভ্রমণ
করোনাভাইরাস নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চাহিদা ও দাম বেড়েছে বহুগুণ। তারপরেও অনেকের মধ্যে এ ভাইরাস নিয়ে তেমন সচেতনতা নেই। ফলে রাস্তায়, পাবলিক পরিবহনে চলাচলে অনেকে সচেতন হয়েও ভোগান্তিতে পড়ছেন। বাঁধছে নানা বিপত্তিকর ঘটনা।
এমনই ঘটনা আজ অফিসে আসার পথে বাসে ঘটেছে। প্রতিদিনই ঠাসাটাসি করে বাসের হ্যান্ডেল বা সিট ধরে দাঁড়িয়ে যাওয়া আসা করতে হয়। রোজকার মত আজও মিরপুর কাজী পাড়া থেকে বাসে উঠেছি। কোনো সিট খালি ছিল না। দাঁড়িয়ে আছে অনেকেই। আমার উচ্চতা কম হওয়ায় সিট ধরেই দাঁড়াতে হয়। তো সিট ধরেই দাঁড়িয়ে আছি। তবে এখন বাসে উঠলে মাস্ক পরা মানুষের সংখ্যা বেশি চোখে পড়ে। বোঝা যায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে।
বাস শ্যাওড়াপাড়া পৌঁছালে আরো কয়েকজন উঠলেন। ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে আছে আছে সবাই। আমার পাশে আমারই উচ্চতার এক লোক দাঁড়ালেন সিট ধরে। মুখে মাস্ক নেই। বয়স ২৬ বা ২৭ এর কাছাকাছি হবে। লোকটা একটু পরপর কাশি দিচ্ছেন। তারপাশের সিটে যিনি বসে আছেন তিনি মাস্ক পরা।
কিছুক্ষণ পর সিটে বসা ভদ্রলোক রেগে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে বললেন, ‘ভাই আপনি কাশি থামান অথবা কাশির সময় মুখে হাত দেন।’ কথা শুনে লোকটি অত্যন্ত রেগে গেলেন।
প্রতিউত্তরে বললেন, ‘আমি কাশছি তাতে আপনার সমস্যা কী? আমার কাশি আসলে আমি কাশব না? সিটে বসা লোকটি বললেন, ‘ আপনি কাশি দিয়ে আমার সমস্যা করছেন। আপনার জন্য আমি তো বিপদে পড়তে পারি না?’ দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি আরও রেগে গিয়ে বলছেন, ‘আপনার জন্য আমি কাশব না? এমন কথায় বসে থাকা লোকটি আরো রেগে তাকে বাস থেকে নেমে যেতে বলেন।
এতেই চরম হট্টগোল বাঁধে। এবার বাসে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য যাত্রীরাও থেমে থাকলেন না। একজন বললেন, ‘এখন করোনা ভাইরাস যেভাবে ছড়াচ্ছে। তাতে করে কার হাঁচি কাশিতে ভাইরাস আছে বা নেই সেটা তো আমাদের কারো জানা নেই। তার উপর আপনি মাস্ক পরেন নি। কাশির সময় রুমালও ব্যবহার করছেন না। কাশির সময় মুখেও হাত দিচ্ছেন না। এটা তো মেনে নেওয়া যায় না।’ এসব কথা শুনে লোকটি একদম চুপ হয়ে গেলেন।
এবার লোকটি কাশি আসলেই মুখে হাত দিয়ে কাশছেন। আর কাশির পর হাত মুখ থেকে সরিয়ে সিট ধরছেন। ঝামেলা হবে ভেবে আমি আর কথা বাড়ালাম না। লোকটি কাশির সময় মুখে দেওয়া হাত দিয়ে বারবার সিট ধরছেন। ওই সিট আমিসহ আরো একজন ধরে ছিলাম। তার কাশি থেকে বের হওয়া কফ বা কোনো জীবাণু ওই সিটে তিনি মাখিয়ে দিচ্ছেন। যা থেকে আমাদের হাতের মাধ্যমে আবার ছড়াচ্ছে। এজন্য আমাদের অধিক সচেতন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। যেহেতু করোনা ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক নেই। প্রতিরোধই একমাত্র ভরসা।
মূলত চীনের উহান প্রদেশ থেকে উৎপত্তি করোনা ভাইরাস নিয়ে দুশ্চিন্তা বিশ্বব্যাপী। ইতিমধ্যে অনেক দেশ তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা দিয়েছে। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বন্ধ করেছে ফ্লাইট। বাতিল করা হচ্ছে পূর্বঘোষিত অনেক আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনেও বিভিন্ন পদক্ষেপ দেওয়া হচ্ছে।
এমনই সময়ে আমাদের দেশে প্রথমত তিন জনের দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তাদের কোয়ারেন্টাইন কেয়ারে রেখে চিকিৎসা সেবার পর সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। আবার নতুন করে দুজনের দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
দেশে করোনা ভাইরাস শনাক্তের প্রথম দিন থেকেই মাস্কের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। ১০ টাকার মাস্ক ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৩০ টাকার মাস্ক ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি হ্যান্ডওয়াশ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চাহিদাও বেড়েছে অনেক। অনেক জায়গায় দামও রাখা হচ্ছে চড়া।
সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণায় সরকার, রাজনৈতিক সংগঠন, টেলিভিশন, পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ মাধ্যমগুলো প্রতিনিয়ত কাজ করছে। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা প্রচার হচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতাও বেড়েছে। তারপরেও অনেকে এগুলো তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে যারা সচেতনতা অবলম্বন করছে তারা পড়ছে বিপত্তিতে। অনেক সময় পথচারীদের মাধ্যে বাক বিতণ্ডাও লেগে যাচ্ছে। আসুন সচেতন হই। নিজে নিরাপদ থাকি। অপরকে নিরাপদ রাখি।
ঢাকাটাইমস/১৫মার্চ/ এসএস