প্রতিটি ঘরে খাবার পৌঁছে দিলেই করোনা প্রতিরোধ সম্ভব!

সদর উদ্দীন লিমন
| আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২০, ২০:২৩ | প্রকাশিত : ১০ এপ্রিল ২০২০, ২০:১০

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) আক্রমণে এখন স্তম্ভিত পুরো বিশ্ব। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী এই লেখাটি লেখা পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ লাখ ৭ হাজার ৯১২ জন। মৃত্যু হয়েছে ৯৫ হাজার ৮১৩ জন। সুস্থ হয়েছে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ১৮০ জন।

বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনা রোগীর সংখ্যা ৪২৪ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ২৭ জন।

করোনা পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায় এখন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশ্বের ১৮৪টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই মারণ ভাইরাস। মহামারী এই ভাইরাসের কারণে বিশ্বের প্রায় ৭০০ কোটি মানুষ এখন অবরুদ্ধ অবস্থায় আছে।

করোনাভাইরাসের প্রতিকার কঠিন। কিন্তু কিছু নিয়ম মেনে চললে এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা সহজ। করোনা প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় ‘সামাজিক দূরত্ব’ মেনে চলা। কয়েকটি দেশ এই ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিয়ম মেনেই করোনা প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে। যে চীনে এই ভাইরাসের উৎপত্তি সেই চীনই ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিয়ম মেনে করোনা প্রতিরোধ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই ‘সামাজিক দূরত্ব’ মেনে চলছে কয়জন? সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী দিয়ে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তারপরও তারা হিমশিম খাচ্ছে।

আমার কাছে মনে হয়, সরকার যদি একটি পদ্ধতি গ্রহণ করে তাহলে করোনা প্রতিরোধ সম্ভব। সেটি হলো দেশে যে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ আছে তাদের সবাইকে অন্তত এক মাসের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। এবং সেই খাবার প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। কাউকে যেন ত্রাণ নেয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে না হয়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে দেখলাম, দেশের কয়েকটি এলাকায় এমনটি করা হচ্ছে। কিন্তু খাবার তো আর প্রতিটি পরিবার পাচ্ছে না।

মানুষকে বাজার করার জন্য বাইরে যেতে হচ্ছে। কিন্তু সরকারকে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, বাজার করার জন্যও যেন কারো বাইরে যেতে না হয়। সবার ঘরে যদি বাজার পৌঁছে দেয়া যায় তাহলে মানুষের আর বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। তারপরও যদি কেউ বের হয় তাহলে তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রাখতে হবে।

সরকার যদি দেশের সকল মানুষের অন্তত এক মাসের খাবারের দায়িত্ব নিতে পারে এবং তা সবার বাড়িতে পৌঁছে দেয়া যায় তাহলে মনে হয়, করোনা মোকাবেলা সম্ভব।

করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশে শুরুতেই দুইটি ভুল হয়ে গিয়েছে বলে মনে করি। এর মধ্যে একটি হলো সাধারণ ছুটি ঘোষণার সাথে সাথেই গণপরিবহন বন্ধ না করা। কারণ, ছুটি পেয়ে লাখ লাখ মানুষ যেভাবে গ্রামের বাড়িতে ফিরে গিয়েছে তাতে করোনার ঝুঁকি আরো বেড়ে গিয়েছে। আরেকটি হলো শুরুতে ১০ দিনের সাধারণ ছুটির পর আবার গার্মেন্টস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত। কারণ, গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্তের কারণেই হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক চাকরি বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে ঢাকায় ফিরে এসেছে। এই দুইটি ‘ভুল’ সিদ্ধান্তের কারণেই বাংলাদেশে করোনার হুমকি আরো বেড়ে গিয়েছে বলে মনে করি। ভবিষ্যতে এমন আর কোনো ‘ভুল’ করলে চলবে না।

দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার ত্রাণের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু ত্রাণের শতশত বস্তা চাল কিছু অসাধু লোকজন চুরি করছে বলেও আমরা গণমাধ্যমের খবরে দেখতে পাচ্ছি। দেশের এমন ক্রান্তিকালে যারা এমন গর্হিত কাজ করছে তাদেরকে এমন শাস্তি দিতে হবে যেন, তারা আর এমন চুরির কথা মুখেও না আনে।

করোনা কোনো নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়। এটি পুরো বিশ্বের সমস্যা। তাই আমার মনে হয়, পুরো বিশ্বকে এক হয়েই এই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে। দ্বিপাক্ষিকভাবে অনেক দেশই পারস্পরিক সহযোগিতা করছে। কিন্তু আমার মনে হয়, করোনা মোকাবেলার জন্য সব দেশের অংশগ্রহণে জরুরি ভিত্তিতে একটি প্লাটফর্ম তৈরি করতে হবে। সেই প্লাটফর্মের আওতায় করোনায় আক্রান্ত দেশগুলো প্রয়োজনে ডাক্তার, নার্স, অর্থ, ওষুধ, মেডিকেল সরঞ্জামাদি ভাগাভাগি করে নিতে পারবে।

সম্প্রতি করোনা মোকাবেলার জন্য সার্কের সদস্য দেশগুলো মিলে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। কিন্তু বৈশ্বিক পর্যায়ে এমন কোনো প্লাটফর্ম গঠন করা হয়নি।

লেখক: সাংবাদিক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :