বয়সের জন্য জেএসসির রেজিস্ট্রেশনে বাধা, ছাত্রের আত্মহত্যা

আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ৩০ জুন ২০২০, ২৩:১৭| আপডেট : ৩০ জুন ২০২০, ২৩:২৭
অ- অ+

আনোয়ারা উপজেলার কৈনপুরা গ্রামে জন্মনিবন্ধন সংশোধন ও জেএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে না পেরে দুর্জয় দাশ (১৪) নামে এক স্কুলছাত্র গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সোমবার রাতে নিজ ঘর থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে ওই গ্রামের মিলন দাশের ছেলে ও কৈনপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের এবারের জেএসসি পরীক্ষার্থী।

নিহতের পরিবার জানায়, মঙ্গলবার জেএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের শেষ দিন। কয়েকদিন আগে জেএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে স্কুল থেকে জানানো হয় জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী তার বয়স দুই বছর বেশি। তাই রেজিস্ট্রেশন করতে হলে জন্মনিবন্ধন সংশোধন করে আনতে হবে। এ কথা শুনে প্রথমে উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরীর কাছে গেলে তিনি চাতরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়াছিন হিরুকে ফোন করে জন্মনিবন্ধন সংশোধন করে দিতে বলেন।

সেখান থেকে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চাতরী ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রে পাঠান। তথ্য সেবা কেন্দ্রের মহিউদ্দিনের কাছে গেলে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় অথবা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে একটা প্রত্যয়নপত্র আনতে বলেন।

প্রত্যয়নপত্রের জন্য প্রথমে কৈনপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে গেলে তিনি বলেন ইউএনওর কাছে তথ্য সেবাকেন্দ্র থেকে আমাদের নামে অভিযোগ করেছেন। ইউএনও নিষেধ করেছেন প্রত্যয়নপত্র না দিতে। সেখানে না পেয়ে প্রত্যয়নপত্রের জন্য কৈনপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে গেলে তিনি বলেন এ দায়ভার আমরা দিতে পারবনা।

প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করে ছাত্রের পরিবার থেকে বলা হয়, প্রত্যয়নপত্র না দিলে সে পরীক্ষা দিতে পারবেনা। প্রত্যুত্তরে প্রধান শিক্ষক বলেন এবার দিতে না পারলে আগামী বছর দিবে।

সেখানেও না পেয়ে পরবর্তীতে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসারের কাছে যায় পরিবার। তিনি বলেন জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে আনলে আমরা এখানে থেকে সার্টিফিকেট দিয়ে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করে দেব।

সোমবার পুনরায় কৈনপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে অনেক অনুরোধের পর ২০০ টাকা দিয়ে স্কুলের কেরানি হুবহু আগের বয়স ঠিক রেখে একটা প্রত্যয়নপত্র দেয়। এটা নিয়ে ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের মহিউদ্দিনের কাছে গেলে তিনি বলেন এটা আগের বয়সের। এটা দিয়ে নতুন করে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে দেয়া যাবে না। বার বার বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে অনেক চেষ্টা করেও জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ও জেএসসির পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে না পেরে রাগে ক্ষোভে সোমবার রাতে রুমের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে দুর্জয় আত্মহত্যা করে। তার ছোট বোন দেখে দা দিয়ে দড়ি কেটে দিয়েও তাকে বাঁচাতে পারেনি।

একই সার্টিফিকেট দিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু জেএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের সময় সমস্যা হচ্ছে? –এই প্রশ্ন দুর্জয়ের পরিবারের। এ ঘটনার পরও স্কুলের কোনো শিক্ষক বা স্কুল কমিটির কোনো সদস্য শিক্ষার্থীর লাশ দেখতেও যায়নি।

মঙ্গলবার সকালে স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিহত ছাত্রের বাসায় যান। এসময় প্রধান শিক্ষক স্কুল কমিটির প্রতি দায় চাপান। স্কুল কমিটির সভাপতি বলেন, এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আমাদেরকে কিছু জানাননি। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, তারা বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিয়ে জন্মনিবন্ধন সংশোধন করে দেয়ার জন্য বলেছিলাম।

চাতরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়াসিন হিরু বলেন, ভোগান্তির বিষয়টি আমি জানলে সমাধান করে দিতাম।

এ বিষয় আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুলাল মাহমুদ বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

(ঢাকাটাইমস/৩০জুন/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আজ হাসিনা-কামাল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে দ্বিতীয় দিনের শুনানি
প্রথম প্রেমের স্পর্শ: পর্ব ১০- একটি অসমাপ্ত কবিতার ঘরে ফেরা
২৭ দিনে দেশে ফিরলেন ৭৩ হাজার ৪৯৩ হাজি, ১০ জুন পর্যন্ত ফিরতি ফ্লাইট
মাস্কের নতুন দল গঠনকে ‘উদ্ভট’ বললেন ট্রাম্প, সমালোচনা করলেন নিজেরই নাসা প্রধানের
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা