রাশিয়ান ডোপিংয়ের পর্দা ফাঁস
যেকোনও থ্রিলারকেও হার মানিয়ে দেবে এই ঘটনা। প্রকাশ্যে এল রাশিয়ান ডোপিংয়ের কেচ্ছা। যার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন, এই ডোপিং ঘটানোর কেন্দ্রে থাকা গ্রিগরি রোডচেঙ্কভ। যিনি ছিলেন সোচিতে, ২০১৪ শীতকালীন অলিম্পিকের সময় ডোপিং কন্ট্রোল ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর। তার আগের দশ বছর ধরে এই রোডচেঙ্কভ ছিলেন মস্কো ডোপিং বিরোধী সংস্থার প্রধান। তাই সোচিতে রাশিয়ান অ্যাথলিটদের ‘ক্লিন’ দেখানোর গুরুদায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর উপরেই।
সোচি অলিম্পিক শুরুর আগে কীভাবে এফএসবি (কেজিবি ভাঙার পর রাশিয়ার সিকিউরিটি সার্ভিস) আঁতাত তৈরি করে তাঁর সঙ্গে এবং কীভাবে মসৃণভাবে বিশ্বের সবচেয়ে নিয়ন্ত্রিত ডোপিং সংগঠিত করা হয় সোচিতে, তারই বর্ণনা রোডচেঙ্কভ লিখেছেন তাঁর সদ্য প্রকাশিত আত্মজীবনী ‘দ্য রোডচেঙ্কভ অ্যাফেয়ার’-এ।
এফএসবির অফিসার ইভজেনি ব্লোখিন সোচি অলিম্পিক শুরুর কয়েকমাস আগে রোডচেঙ্কভের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে বলেন, ‘আমাদের অফিসাররা কোনও প্রমাণ না রেখে ওয়াডা-র স্যাম্পেলের বোতলের ছিপি খুলে তা আবার লাগিয়ে দিতে পারে।’
শুনে রোডচেঙ্কভ থমকে যান। পরীক্ষাও করে দেখেন তাঁর কাছে থাকা দুটি স্যাম্পেলের বোতল তাঁর হাতে দিয়ে। ক’দিন পরেই ব্লোখিন হাজির হন হাসি মুখ নিয়ে। দেখিয়ে দেন বোতলের ছিপি খুলে লাগানো হয়েছে। কাঁচের কোনও দাগ নেই। রোডচেঙ্কভের কাছে খুলে গেল মূত্রের নমুনা পাল্টে দেওয়ার রাস্তা। তবে রোডচেঙ্কভ বলেছেন, ‘রাশিয়ার বিভিন্ন অ্যাথলেটদের শিবিরে অবশ্য স্বাভাবিক মূত্রের নমুনা পাওয়াই সমস্যা ছিল। অ্যাথলেটরা সবাই প্রায় ডোপিং করত।’
এর সঙ্গে রোডচেঙ্কভ নিজেই মাথা খাটিয়ে বের করেছিলেন কয়েকটি অ্যানাবলিক স্টেরয়েডের ককটেল। যা অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে মুখের মধ্যে একটু সময় নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খেলে মূত্রে স্টেরয়েডের প্রমাণ পাওয়া যায় না। শিভাস রিগাল হুইস্কির সঙ্গে স্টেরয়েড মিশিয়ে তৈরি হয়েছিল ককটেল। সোচি অলিম্পিকে প্রতিদিন সংগ্রহ করা রাশিয়ান অ্যাথলেটদের নমুনা পাল্টে দেওয়া হত এফএসবির সাহায্যে। আগের শীতকালীন অলিম্পিকে রাশিয়া তিনটি সোনা পেলেও সোচিতে সবচেয়ে বেশি ১৩টি সোনা পায়।
তবে ব্রিটিশ এক মিডিয়ার ডোপিং ফাঁসের খবরের পর সক্রিয় হয় ওয়াডা। ২০১৫ সালের নভেম্বরে ওয়াডা তদন্ত শুরু করে। রোডচেঙ্কভকে পাওয়া যায় এসব কেলেঙ্কারির কেন্দ্রে। সেই সময়ই রাশিয়া ছেড়ে পালিয়ে আমেরিকা চলে যান তিনি। হুইসলব্লোয়ার হয়ে সব গোপন তথ্য ফাঁস করে দেন। নিরাপত্তার কারণে তাঁকে রাখা হয়েছে আমেরিকার কোনও গোপন জায়গায়। সেখান থেকেই লিখছেন আত্মজীবনী।
(ঢাকাটাইমস/২৭ জুলাই/এসইউএল)