মাহাবুব আহমেদ সাদেক থেকে সাদেক বাচ্চু হওয়ার গল্প

ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা সাদেক বাচ্চু। সবাই তাকে খলনায়ক হিসেবে চিনেন। কিন্তু তার সাদেক বাচ্চু হওয়ার গল্পটা সহজ ছিল না। ১৯৬৩ সালে বেতারে ‘খেলাঘর’ নাটক দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু। ১৯৭২-৭৩ সময়ে তিনি ‘গণনাট্য পরিষদ’ নামের একটি থিয়েটারে যুক্ত হন। তিনি ‘উম্মোচন’, ‘প্রথম পদক্ষেপ’ নামের আরও দুটি থিয়েটার দলের হয়ে মঞ্চে অভিনয় করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি ‘মতিঝিল থিয়েটার’ প্রতিষ্ঠা করেন। তার রচিত ও নির্দেশিত নাটকগুলির মধ্যে কাফনের পকেট নাই, কুলাঙ্গার ও ক্যাপ উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৪ সালে তিনি টেলিভিশনে অভিষিক্ত হন।
তৎকালীন বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রযোজক আব্দুল্লাহ ইউসুফ ইমাম তার মঞ্চ অভিনয় দেখে আকৃষ্ট হন। ইমাম প্রযোজিত প্রথম ‘অঙ্গীকার’ নাটকের মাধ্যমে সাদেক বাচ্চু টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করেন। টেলিভিশনে তিনি ঝুমকা, পূর্ব রাত্রি পূর্বদিন সোজন বাদিয়ার ঘাট, নকশী কাঁথার মাঠ, জোনাকী জ্বলে, গ্রন্থিক গণ কহে-এর মত জনপ্রিয় নাটকসহ এক হাজারের বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন। টেলিভিশন নাটকের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনেও অভিনয় করেছেন তিনি। এরইমাঝে সাদেক বাচ্চু নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।
১৯৮৫ সালে ‘রামের সুমতি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় পা রাখেন সাদেক বাচ্চু। খল-অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও শুরুটা করেছিলেন নায়ক হিসেবে। ‘সুখের সন্ধানে’ চলচ্চিত্রে প্রথম খল চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এরপর থেকে খল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অধিক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। পরিচালক এহতেশাম এর ‘চাঁদনী’ চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। ২০১৮ সালে ‘একটি সিনেমার গল্প’ চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এই অভিনেতা।
সাদেক বাচ্চু নামটি তিনি পান এহতেশামের কাছ থেকে। তার আসল নাম মাহবুব আহমেদ। ‘চাঁদনী’ ছবি থেকে তাঁর নাম বদলে যায়। বদলে যায় তাঁর খ্যাতির ধরণও। চাঁদপুরে দেশের বাড়ি হলেও জন্ম ঢাকায়। সাদেক বাচ্চু ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ ডাক বিভাগে চাকরিতে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৩৩ বছর চাকরির পর ২০১৩ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অভিনয় ক্যারিয়ারে পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন সাদেক বাচ্চু।
এই অভিনেতার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে-কোটি টাকার কোবিন, পিতা মাতার আমানাত, মন বসে না পড়ার টেবিলে, আনন্দ অশ্রু, বিদ্রোহী, এক পৃথিবী প্রেম, চলো পালাই, বেপরোয়া, প্রেম চোর, ডনগিরি, পদ্মার প্রেম, ইন্দুবালা, পলকে পলকে তোমাকে চাই, বসগিরি, মাটির পরী, লাভ ম্যারেজ’সহ অসংখ্য ছবি।
ঢাকাই চলচ্চিত্রের শক্তিমান এ অভিনেতা করোনায় আক্রান্ত হয়ে সোমবার দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে মহাখালীর ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (আয়শা মেমোরিয়াল হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি এবং বহু অভিনয়শিল্পীসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকে। কানাডা থেকে শোক জানান অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাসও।
ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/এএইচ

মন্তব্য করুন