আমানত ঋণ রেমিট্যান্সসহ সব সূচকেই ঊর্ধ্বমুখী অগ্রণী ব্যাংক

রহমান আজিজ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৪ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৫২| আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২০, ১০:০৭
অ- অ+

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে আর্থিক সব সূচকে ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রেখেছে অগ্রণী ব্যাংক। আমানত, ঋণ ও অগ্রীম, এডিআর রেশিও, মোট সম্পদ, পরিচালন মুনাফা, আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্স, শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ, শ্রেণীকৃত ঋণ থেকে নগদ আদায়, পুনঃতফসিল, অবলোপন ইত্যাদি সূচকে ব্যাংকটি পাঁচ বছরের ধারাবাহিতকা বজায় রেখেছে। বিশেষ করে রেমিট্যান্স আনয়নে রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে অগ্রণী। ব্যাংকটির গত পাঁচ বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।

অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, আর্থিক সূচকে ব্যাপক পরিবর্তন আসার পেছনে বর্তমান চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত্ নিরবচ্ছিন্ন ভূমিকা রেখে চলেছেন। তার নেতৃত্বে দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের যৌথ প্রচেষ্ঠায় অগ্রণী ব্যাংক এ পর্যায়ে আসতে পেরেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে অগ্রণী ব্যাংক আগামীতে সেরা ব্যাংকের কাতারে জায়গা করে নেবে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে ব্যাংকটির মোট আমানত ছিল ৪৯ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে বেড়ে ৫৩ হাজার ৩৫ কোটি, ২০১৮ সালে ৬২ হাজার ১৯৩ কোটি, ২০১৯ সালে ৬৯ হাজার ২২৪ কোটি এবং সর্বশেষ চলতি বছরে আগস্ট শেষে ব্যাংকটির মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা।

ব্যাংকটির ঋণ ও অগ্রীম সূচকটিও ক্রমান্বয়ে ঊর্ধ্বমুখী। ২০১৬ সালে ছিল ২৬ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে বেড়ে ৩১ হাজার ৯১২ কোটি, ২০১৮ সালে ৩৯ হাজার ৫৭৫ কোটি, ২০১৯ সালে ৪৬ হাজার ৫৮৩ কোটি এবং ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৪৭ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঋণ আমানতের হারও প্রতিবছর বাড়ছে। ২০১৬ সালে ৫৩ দশমিক ৮১ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৬০ দশমিক ১৭ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৬৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ , ২০১৯ সালে ৬৭ দশমিক ২৯ শতাংশ, ২০২০ সালের আগস্ট শেষে ৬৩ দশমিক ৫৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমান ২০১৬ সালে ৬২ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা ছিল। ২০১৭ সালে ৬৭ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ৭৮ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা, ২০১৯ সালে ৮৫ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা, ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৯১ হাজার ২৬ কোটি টাকা।

পরিচালন মুনাফা ২০১৬ সালে ৫৫৫ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ৮১৩ কোটি, ২০১৮ সালে ৮৩২ কোটি , ২০১৯ সালে ৯০০ কোটি এবং ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৬৭৭ কোটি টাকা।

ব্যাংকের মাধ্যমে আমদানী ২০১৬ সালে ১০ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ১৩ হাজার ২৬৭ কোটি, ২০১৮ সালে ২৩ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা, ২০১৯ সালে ৩৮ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা এবং ২০২০ সালে আগস্ট পর্যন্ত ১৫ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিবছর এ সূচকটিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রপ্তানির ক্ষেত্রে রাষ্ট্র মালিকানাধীন এ ব্যাংক বিশেষ ভুমিকা রেখেয়াচ্ছে। ২০১৬ সালে ৭ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ৭ হাজার ৫৯ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ৮ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, ২০১৯ সালে ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৬ হাজার ৮ কোটি টাকা।

প্রণোদনার সুবিধা দিয়ে হুন্ডি বন্ধ করে প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের কষ্টে অর্জিত আয় পাঠাতে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে এ ব্যাংক। এতে করে ব্যাংকের রেমিট্যান্স সূচকটিতেও অগ্রগতি হয়েছে। ২০১৬ সালে ১২ হাজার ২২ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ১০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ১২ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ১৪ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা, ২০২০ সালে আগস্ট পর্যন্ত ১৩ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আরো দেখা গেছে, ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ২০১৬ সালে ৬ হাজার ৮০৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে ৫ হাজার ৫৬৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, ২০১৮ সালে ৬ হাজার ৯৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, ২০১৯ সালে ৬ হাজার ৬৪২ কোটি ৮২ লাখ টাকা, ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিবছরই ক্রমান্বয়ে নিম্নমূখী হওয়ার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এ সূচকটি ভালোর দিকে ধাবিত হচ্ছে।

শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ও বাড়ছে। ২০১৬ সালে ৯৫৪ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা, ২০১৯ সালে ২ হাজার ৬৬২ কোটি, ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৩০৯ কোটি ১২ লাখ টাকা আদায় হয়েছে।

এছাড়া, শ্রেণীকৃত ঋণের হারও কমছে। ২০১৬ সালে ২৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ ছিল, ২০১৭ সালে কমে ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ, ২০১৮ সালে ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ২০১৯ সালে ১৪ দশমিক ২৬ শতাংশ, ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ।

এদিকে ২০১৯ সালে সরকারি ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচক সর্ম্পকিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাষ্ট্র মালিকানাধীন অন্য ব্যাংকের তুলনায় অগ্রণী ব্যাংক এগিয়ে। এর মধ্যে আমানত প্রবৃদ্ধি অগ্রণী ব্যাংকের ১১.৩ শতাংশ, রূপালীর ৬.৪ শতাংশ, সোনালীর ৫.৬ শতাংশ এবং জনতার ২.৩ শতাংশ।

নীট সুদ আয়েও এগিয়ে অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকটির আয় ৬৩৩ কোটি টাকা, এরপর জনতার ৪৫৪ কোটি, রূপালীর ২ কোটি এবং সোনালীর ঋনাত্মক ৪১২ কোটি টাকা।

পরিচালন মুনাফা প্রবৃদ্ধিতেও এগিয়ে অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকটির মুনাফার হার ২০১৯ সালে ৮.২ শতাংশ। এছাড়া বাকি তিনটি ব্যাংক ঋণাত্মক অবস্থানে। জনতা ঋণাত্মক ১৩.৯, সোনালীর ১৫.২ এবং রূপালীর ৩৭.৭ শতাংশ।

২০১৯ সালের প্রতিবেদনে, অগ্রণী ব্যাংক আমদানি সূচকেও অন্য ব্যাংকের চেয়ে এগিয়ে। ব্যাংকটির আমদানি প্রবৃদ্ধি ৬৪.৯ শতাংশ, এরপর রূপালী ব্যাংক ৩৫.১ শতাংশ, সোনালী ব্যাংক দশমিক ৪ শতাংশ এবং জনতা ব্যাংক ঋণাত্মক ৪.৩ শতাংশ।

রপ্তানি প্রবৃদ্বিতে এগিয়ে অগ্রণী ব্যাংক। অগ্রণী ব্যাংকের রপ্তানী প্রবৃদ্ধি ৩১.৩ শতাংশ, রূপালী ৩.৪ শতাংশ, জনতা ঋণাত্মক ১৮ শতাংশ এবং সোনালী ঋণাত্মক ২১ শতাংশ। রেমিট্যান্সেও শীর্ষে অগ্রণী ব্যাংক। এরপর সোনালী, জনতা এবং রূপালী ব্যাংক।

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত্ ঢাকা টাইমসকে জানান, পাঁচ বছর আগের অগ্রণী ব্যাংক আর বর্তমানের মধ্যে অনকে পার্থক্য। অগ্রণী ব্যাংক বর্তমানে সরকারি অন্য ব্যাংকের তুলনায় অধিকাংশ সূচকে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এ সাফল্যর জন্য দুটি কৌশলই কাজে লেগেছে।

ড. জায়েদ বখত্ বলেন, ‘আমরা খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছি কম খরচে আমানত সংগ্রহ, রেমিট্যান্স এবং আমদানি- রপ্তানির ওপর। এর সুফলও পেয়েছি আমরা। এ সূচকগুলোতে অন্য সরকারি ব্যাংকের চেয়ে আমরা ভাল অবস্থানে। রেমিট্যান্সে আমরা সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম অবস্থানে আর সব ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে। আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।’

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছি। সরকারি অন্য ব্যাংকের মধ্যে আমরাই প্রথম ৯৫৮টি শাখায় অনলাইন সেবা নিয়মিত করেছি। গ্রাহকরা আস্থা ফিরে পাওয়ায় আমাদের পুরাতন গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত অগ্রণী ব্যাংকমুখি হচ্ছে।’

ড. জায়েদ বখত্ আরও বলেন, আমাদের আরেকটি কৌশল-কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে বর্তমানে কোনও তদবির গ্রহণ করা হয় না। কাজের পারফরমেন্সের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়। এতে করে কর্মকর্তারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমরাই প্রথম সবোর্চ্চ ইন্সেন্টিভ বোনাস দিয়েছি।’

এদিকে করোনা মহামারীর সংকটে দেশের আর্থিক খাত সচল করতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ শতভাগ বাস্তবায়নেও চেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছে অগ্রণী ব্যাংক। রপ্তানিমূখি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন প্রদানের নিমিত্তে প্রনদোনাও শতভাগ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি।

এবিষয়ে অগ্রণী ব্যাংক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের বরাদ্দ ছিল ১৩৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। কৃষি খাতে বিশেষ প্রনোদনা ৩ হাজার ৬৭৩ জনকে দেয়া হয়েছে। এটি ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। শস্য ও ফসল খাতে ২৩ হাজার ১৪৪ জনের মধ্যে ৯৭ কোটি ২১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে এবং এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’

ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘চলতি মূলধনের ওপর যে প্রণোদনা ঋণ সেটি বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ৮৯৪ কোটি টাকা। ক্রেডিট কমিটির সুপারিশ করা হয়েছে ৮৫৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক ৬৩৭ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। বাকিটা প্রসেসিং করা হচ্ছে। আশাকরি অক্টোবরের মধ্যে এ খাতে প্রণোদনার অর্থ শতভাগ বিতরণ করতে পারবো।’

(ঢাকাটাইমস/১৪অক্টোবর/ডিএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এপ্রিলের ২৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার
নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই সব দেনা পরিশোধ করল পেট্রোবাংলা
ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব: অর্থ উপদেষ্টা
উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময়, বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশ্বাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা