‘শীতের কাপড় কেনার টাকা নাই, তাই খ্যাতা গাত দিয়া থাকি’

মমিনুল ইসলাম বাবু, কুড়িগ্রাম
 | প্রকাশিত : ১১ ডিসেম্বর ২০২০, ১৮:৩১

টানা কয়েকদিন থেকে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে শীত জেঁকে বসেছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বয়ে যায় জেলার উপর দিয়ে। মাঝ রাত হতে গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশা আর উত্তরের হীম ঠান্ডায় চরম ভোগান্তিতে দিন কাটছে নিম্ন আয়ের মানুষজনের। এছাড়াও বৃহৎ নদ-নদীময় জেলায় পাঁচ শতাধিক চরাঞ্চলবাসীও ঠান্ডায় বিপাকে পড়েছেন।

চলতি বছর জেলার উপর দিয়ে ছোট-বড় ছয় দফা বন্যায় ব্যাপক ফসলহানিতে গৃহস্তসহ প্রান্তিক চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। বন্যায় আবাদি অনেক কৃষি জমিতে বালু পরে ঢেকে গেছে। নদী ভাঙনের শিকার প্রায় আট হাজার পরিবার রাস্তা, বাঁধ এবং বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে আছেন পুনর্বাসনের প্রহর গুণছেন তারা।

এ অবস্থায় টানা কর্মহীনতা আর চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অভাব বেড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে। অর্থাভাবে শীতবস্ত্র কিনতে না পেরে শিশু, নারী ও বয়স্ক মানুষরা চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। কর্ম সংস্থানহীন এই জেলায় কাজ না থাকায় অনেকে প্রাপ্তবয়স্ক ছাড়াও শিশু-কিশোররা কাজের খোঁজে ছুটছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

ঘনকুয়াশার কারণে সকালে কাজে যোগ দেয়া শ্রমিক, রিকশাচালক, কৃষি দিনমুজুরসহ অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষ ঠিকঠাক মতো কাজে যোগ দিতে পারছেন না। অর্থাভাবে অনেক পরিবারের সদস্যরা এক কাপড়েই শীত মোকাবেলা করছেন।

সরজমিনে কথা হয় শহরের ভেলাকোপা এলাকার শ্রমজীবী নারী বুলবুলি আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, টানা কয়েকদিন ধরে মোটামুটি ভালো শীত আর ঠান্ডা পড়েছে। কৃষি কাজ করেই সংসার চলে। শীতের কারণে কাজে টান পড়েছে। আরো দীর্ঘদিনের বন্যায় গৃহস্থদের আবাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কাজও তেমন জোটে না। এখন সংসার চালানোই দায়। সেখানে শীতের কাপড় কেনা কষ্টকর হয়েছে। বন্যা, করোনার কারণে সংসারে ভাত-কাপড়েরর অভাব যাচ্ছে। শীতের মধ্যে কম্বল না থাকায় বাচ্চাদের নিয়া খ্যাতা গাত দিয়া থাকি।

একই এলাকার হানাগড় বাসিন্দা মোকছেদ আলী(৬৫), আজগর আলী(৫৫)সহ অনেকেই বলেন, শীত পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। যেভাবে শীত বাড়ছে তাতে করে দুয়েকদিনের মধ্যে শীতের তীব্রতা আরো বেড়ে যাবে। এই ঠান্ডায় আমরা বয়স্ক আর শিশুরা ভোগান্তিতে পড়েছি বেশি।

হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব এলাকার বাসিন্দা আছিয়া খাতুন, রোকসানা বেগম বলেন, বন্যার পর থেকেই এক ধরনের অভাব যাচ্ছে আমাদের। এর মধ্যে চালসহ সবজি ও অন্যান্য জিনিসপত্রে দাম বেশি। ঠান্ডা কাপড় কেনার শক্তি নাই। নদী ভাঙা মানুষ কোনো রকমে একনা ছাপড়া তুলিয়া দিন কাটপাইছি।

কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের কালো গ্রামের বাসিন্দা ছকমল মিয়া, শমসের আলী, দিদারুল হোসেনসহ অনেক দিনমজুর বলেন, বর্তমানে কাজের খোঁজ নেই বললে চলে। প্রতিদিন এই কাঁঠালবাড়ি বাজারে এসে বসে থাকি কে কাজে ডাকে। কিন্তু হয় না। সপ্তাহের দুদিন কাজ জুটলেও বাকি দিন ফাঁকা যাচ্ছে। সংসার চালানো দায়। সেখানে শীতের কাপড় কেনা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। পামো কিনা জানিনা। যে কাপড় চোপড় আছে তাই দিয়ে শীত পার করা লাগবে।

জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকতা আব্দুল হাই জানান, জেলার শীতার্ত মানুষের জন্য এক লাখ কম্বল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে। সেগুলো নয়টি উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি উপজেলার জন্য ছয় লাখ টাকা শীতবস্ত্র কেনার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এগুলো বিতরণের প্রক্রিয়া চলছে। শুকনা খাবার হিসেবে নয় হাজার প্যাকেট মজুদ রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১১ডিসেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :