মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর স্বপ্ন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের একদল শিক্ষার্থীর

ময়মনসিংহ ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:৪৩ | প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:২২

ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একদল শিক্ষার্থী রকেট তৈরির সফলতার দাবি করেছে। ২০৩২ সালে মহাশূন্যে মানুষ বহনকারী ক্যাপসুল স্যাটেলাইট রকেট পাঠানোর স্বপ্নও দেখছেন তারা। এর ফলে ভারতের পরেই বাংলাদেশ হয়ে ওঠবে মহাকাশে স্যাটেলাইট রকেট পাঠানোর কৃতিত্ব অর্জনকারী তালিকার দ্বিতীয় দেশ । এই জন্য তাদের চাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও গবেষণার জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা।

যেভাবে গবেষণা শুরু:

ময়মনসিংহ ইনজিনিয়ারিং কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী নাহিয়ান ও নেয়ামুল ২০১০ সাল থেকে রকেট তৈরির স্বপ্নিল নেশায় মেতে ওঠেন। প্রথমে তারা কম্পিউটারে স্কেচ তৈরি করে প্রিন্ট করতেন। ভারতের পরে এই উপমহাদেশে আর কোনো দেশের রকেট নেই। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতেই রকেট তৈরির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন দুই বন্ধু। আজ তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে। ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ল্যাবে তারা ধুমকেতু নামে একাধিক রকেট তৈরি করেছেন। ল্যাবে পরীক্ষামুলকভাবে সফলতার সঙ্গে রকেটের ইনজিনের উড্ডয়ন সক্ষমতা পরীক্ষা করেছেন। এখন তাদের দাবি রকেট সফলভাবে উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত। তারা নিজেদের ক্যারিয়ার নয়, মেধাবীদের সঙ্গে নিয়ে রকেট বানিয়ে প্রথমবার দেশের জন্য কিছু করতে চান। তাদের ভাষায় রকেট ট্রাকের মতো বহনকারী বাহন। এই রকেট প্রযুক্তি দিয়েই মিসাইল আর মানুষ পাঠানোর স্যাটেলাইটের মালিক হতে পারে বাংলাদেশ। প্রাথমিকভাবে তাদের তৈরি এই রকেট দেশের কী কাজে লাগবে, এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিয়ান বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় পুরো প্রজেক্টটিই চলেছে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ও সামান্য নিজস্ব অর্থায়নে। প্রাথমিকভাবে নাহিয়ান তরল জ্বালানির ইঞ্জিন ডিজাইন করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে অর্থাভাব ও করোনা মহামারি সংকটে তরল অক্সিজেনের দাম বাড়ায় সিদ্ধান্ত পাল্টান তিনি। পরে বিকল্প হিসেবে সলিড ফুয়েলের ৪০০ নিউটন ও ১৫০ নিউটন থ্রাস্টের ২টি ইঞ্জিনের প্রোটোটাইপ তৈরি করেন এবং রকেটের আকৃতি ছোট করেন। বর্তমানে এই টিম ৬ ফুট ও ১০ ফুট উচ্চতার দুটি প্রোটোটাইপ রকেট উড্ডয়ন অনুমতির অপেক্ষায় আছে। তারা দেশের মাটিতে থেকেই নিজস্ব প্রযুক্তিতে মহাকাশে ন্যানোস্যাটেলাইট ও মানুষ পাঠাতে ইচ্ছুক। মহাকাশবিজ্ঞান, জলবায়ু গবেষণা, সামরিক প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ে কাজ করতে চায় তারা। আপাতত আবহাওয়া বিষয়ক সব তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। যেমন: ওজন লেয়ার, না্ট্রোজেন ইত্যাদি। এখন নাশা থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়। আগামীতে তাদের উদ্ভাবিত দেশীয় প্রযুক্তির এই রকেট ব্যবহার করেই এই সব তথ্য পাওয়া যাবে বলে দাবি করেছেন উদ্ভাবিত রকেট গবেষণা টিমপ্রধান নাহিয়ান আল রহমান অলি।

তিনি আরও বলেন, রকেট আসলে একটি ক্যারিয়ার ট্রাকের মতো। রকেটে বোমা সংযুক্ত করলে হবে মিসাইল আর মানুষ পাঠালে হবে স্যাটেলাইট। সরকারিভাবে অর্থ এবং পৃষ্ঠপোশকতা পেলে এই রকেটের প্রযুক্তি ব্যবহার করেই আগামী দুই হাজার বত্রিশ সালেই আমরা মহাকাশে মনুষ্যযান স্যাটেলাইট পাঠাতে পারব। আরও একধাপ এগিয়ে মিসাইলের মালিক হবে দেশ। এই উপমহাদেশে ভারত ব্যতীত কোনো দেশেই নিজস্ব স্যাটেলাইটে (মনুষ্যযান) মহাকাশে পাঠাতে পারেনি। আমরা সেটা করতে চাই। তার আগে আমাদের রকেট উৎক্ষেপণ করতে চাই। এজন্য প্রতিরক্ষা সচিবের কাছে উৎক্ষেপণের অনুমতি চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। অনুমতি পাইনি। অনুমতি পেলেই রকেট উৎক্ষেপণ করা হবে।

নাহিয়ান আল রহমানের অন্যতম সহপাঠী ও গবেষণা প্রধান নেয়ামুল ইসলাম বলেন, বিদেশে এধরনের গবেষণা এবং কর্মক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ অনেক বেশি এবং সহজ। আসলে এ ধরনের কাজে দেশে সুযোগ কম, আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। যারা গবেষণা করবেন তাদের সেটাই করতে দেওয়া উচিত। আর অনুমতি বা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে প্রশাসনের অর্থ সহায়তার জন্য সরকারের ভূমিকা পালন করা উচিত। একই ব্যক্তি গবেষণা আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মুখোমুখি হলে কিছুই হবে না। এই বাধা দূর হলে এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরাই এগিয়ে আসবে। দেশে এধরনের গবেষণাকে জোর দেওয়া উচিত ,বললেন নেয়ামুল ইসলাম।

আলফা সাইটিফিক ল্যাব সভাপতি আনাস বলেন, ১৯৬৭ সালে ভারতে প্রথম এধরনের কাজ হয়েছিল। সেই ভারতে বর্তমানে তিনটি সাউন্ডিং রকেট আছে। আর আমরা এখন ময়মনসিংহ থেকে শুরু করেছি ।

ইলেট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইাঞ্জনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, এ ধরনের গবেষণায় পদে পদে বাধা, আমাদের এবং সরকারের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমদেরকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং পাশাপাশি সরকারিভাবে অর্থসহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে শিক্ষাবোর্ডকে আমরা জানিয়েছি সেখান থেকে মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাগবে।

নাহিয়ান বলেন, প্রথমে দুই বন্ধু নাহিয়ান ও নেয়ামুল মিলেই গবেষণার কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাদের টিম সদস্য আস্তে আস্তে বেড়ে দাড়ায় বিশ জনে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাইদুর, নাদিম, লিয়ান, আবরার, রিজু, বিন্দু, নাইম, আশরাফসহ অনেকেই।

গবেষণায় জড়িত শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের আশা গবেষণার এই ফলাফল একদিন বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে মানবজাতির কল্যাণমূলক অবদানের তালিকায় ওঠবে দেশ ও তাদের উদ্ভাবিত রকেটের নাম।

(ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :