জিডি তদন্তের সর্বোচ্চ সময় কতদিন? কী বলছে পিআরবি? নিয়ম কানুনে কী আছে?

যদি কেউ আপনাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হুমকি দেয়, আপনার মূল্যবান কিছু (পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, সাটিফিকেট ইত্যাদি) হারিয়ে যায় বা হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়, কিংবা বাড়ির কাজের মেয়ে বা ছেলে না বলে চলে যায় সে ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনি নিকটবর্তী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করবেন।
জিডি কী
জিডির পূর্ণরূপ জেনারেল ডায়েরি, যাকে বাংলায় সাধারণ ডায়েরি বলা হয়। এ ডায়েরি হলো কোনো অপরাধ বা ক্ষতি সংঘটনের আশঙ্কাজনিত বিবরণ। জেনারেল ডায়েরি একটি মূল্যবান রেজিস্ট্রার। প্রত্যেক থানা বা ফাঁড়িতে জেনারেল ডায়েরি (জিডি) রয়েছে।
জিডি করার জন্য থানায় কোনো টাকা দিতে হয় না। এর জন্য কোনো ফি-ও ধার্য নেই। ঘটনা যেখানে সংঘটিত হয়েছে তার নিকটবর্তী থানায় গেলেই দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা জিডি নথিভুক্ত করবেন।
কখন জিডি করবেন
সব ঘটনায়ই জিডি করা যায় না। যেসব বিষয়ে জিডি করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে ইভটিজিং, হারানো দলিল, নতুন বা পুরান ভাড়াটিয়া সম্পর্কিত তথ্য, নতুন বা পুরান নৈশপ্রহরী, দারোয়ান, গৃহপরিচারিকা, কেয়ারটেকার এবং পলায়ন সংক্রান্ত বিষয় (যেমন ছেলে মেয়েকে বা মেয়ে ছেলেকে নিয়ে পালালে বা কাজের মানুষ পালালে)।
চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, মারামারি, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ইত্যাদি ঘটনায় জিডি হয় না। মামলা করতে হয়। ব্যক্তিগতভাবে থানায় উপস্থিত হয়ে অভিযোগ দায়ের করলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
কোথায় জিডি করবেন?
জিডি করার ক্ষেত্রে সাধারণত ঘটনাস্থলকেই প্রাধান্য দেয়া উচিত। অর্থাৎ যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে বা ঘটার আশঙ্কা আছে সে এলাকার থানাতেই জিডি করতে হবে।
কীভাবে করবেন জিডি
জিডি করতে হলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি বরাবর আবেদন করতে হবে। নিচে থাকবে থানার নাম। বিষয় হিসেবে উল্লেখ করতে হবে যে ব্যাপারে জিডি করতে চান তার নাম (যেমন হারানোর ব্যাপারে লিখতে পারেন : হারানো সংবাদ সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন)।
পুলিশের সাহায্য নিয়েও জিডির জন্য দরখাস্ত লিখতে পারেন।
বিবরণ অংশে বিস্তারিত লিখতে হবে। অবশ্যই আশঙ্কার কারণ, যার জন্য আশঙ্কা করা হচ্ছে বা যে হুমকি দিচ্ছে তার নাম, ঠিকানা, হুমকির স্থান, তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
কিছু হারিয়ে গেলে তার বিস্তারিত বিবরণ এবং পারলে তার কোনো নমুনা, যেমন ছবি দরখাস্তের সঙ্গে সংযুক্ত করবেন। সব শেষে নিচে নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর লিখে দেবেন।
আবেদনটি লেখা হলে এর দুটি ফটোকপি করবেন। যদি কোনো বিষয়ে এখনই কোনো মামলা না করতে চান, তাহলে জিডিতে স্পষ্ট করে উল্লেখ করে দিতে হবে যে এ বিষয়ে আপাতত কোনো মামলা করবেন না।
তবে মনে রাখবেন, পুলিশ যদি মনে করে যে কোনো মারাত্মক অপরাধ ঘটেছে, তাহলে জিডি থেকেও মামলা হতে পারে।
জিডি করতে যে কোনো পরামর্শের জন্য সার্ভিস ডেলিভারি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আপনি যদি লিখতে না পারেন, তবে তাকে লিখে দিতে অনুরোধ করুন।
জিডির কার্যকারিতা
জিডি যদি আমলযোগ্য হয়, তাহলে থানা কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি আমলে নিয়ে অপরাধটি প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেবেন। আর যদি কোনো অপরাধ অধর্তব্য প্রকৃতির হয়, তাহলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৫(২) ধারা অনুসারে এখতিয়ারবান ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
জিডির গুরুত্ব
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্য পাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ জিডি। কোনো অপরাধ সংঘটনের বিরুদ্ধে আইন সহায়তাকারী সংস্থার সাহায্য পাওয়ার জন্য এটি প্রথম পদক্ষেপ এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। জিডি করতে দেরি হলে অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ জোরালো হবে। অন্যদিকে জিডি সময়মতো করা হলে অভিযোগ শক্তিশালী হবে।
জিডি তদন্তের সময়সীমা
বাংলাদেশ পুলিশ প্রধানের ভাষ্য (পিআরবি) এবং ফৌজদারি কার্যবিধিতে জিডি তদন্তের নিদিষ্ট সময়সীমা নেই। তবে জিডি লিপিবদ্ধ হওয়ার পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই জিডির তদন্তের অনুমতি চেয়ে আদালতে একটি আবেদন করবেন। আদালত অনুমতি দিলে ওই কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেবেন।
এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কোনো সর্বোচ্চ সময়সীমা নেই। পুলিশ প্রবিধানেও মেনডেটরি না। কোনো জিডি আদালতের অনুমতি নিয়ে তদন্ত করতে হয়। তখন আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে বলে দেন যে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করবেন। ওই সময় সীমার মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা শেষ করতে না পারলে আবারও সময় চেয়ে আদালতে আবেদন করতে পারেন।’
এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগের উপ মহাপরিদর্শক মো. হায়দার আলী খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, `জিডি তদন্তের কোনো সময়সীমা নেই। তবে প্রেক্ষাপট নির্ভর করে। ধরেন একজন ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছে এমন একটা জিডি হয়েছে থানায়। পরে দেখা গেল, দুই বছর পর জানা গেছে যে ওই ব্যক্তি খুন হয়েছেন তাহলে পুলিশ কীভাবে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তদন্ত শেষ করবে?
হাই কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল গোলাম সারোয়ার পায়েল ঢাকাটাইমসকে বলেন,‘ জিডি তদন্তের কোনো সময়সীমা নেই।
(ঢাকাটাইমস/১০মার্চ/এএ/এফএ)

মন্তব্য করুন