বরখাস্ত হয়ে, চাকরি ছেড়ে ওয়াসা কর্মীদের আন্দোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৭ মে ২০২২, ২২:৪৩| আপডেট : ১৭ মে ২০২২, ২২:৪৬
অ- অ+

চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি ঢাকা ওয়াসার চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন ঢাকা ওয়াসার মিটার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে থাকা মো. মহিউদ্দিন আরিফ। নিয়ম অনুযায়ী ঢাকা ওয়াসা তার তিন মাসের বেতন অগ্রিম দিয়ে ৫ জানুয়ারি তার অব্যাহতিপত্র গ্রহণ করে। এর কিছুদিন পর আবার সপদে বহাল চেয়ে আবেদন করেন আরিফ। ২৫ মে ওয়াসা আরেক আদেশে জানায়, ‘চাকরি হতে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন প্রত্যাহারের বিষয়ে বিবেচনার কোনো সুযোগ নাই।’

মঙ্গলবার ছয় দফা দাবি নিয়ে ওয়াসার কর্মচারীদের এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওয়াসা ভবনের সামনে আয়োজিত সেই মানববন্ধনে আন্দোলনকারীর ভূমিকায় ছিলেন সংস্থাটি থেকে চাকরি ছেড়ে যাওয়া মো. মহিউদ্দিন আরিফ। একই আন্দোলনের অংশীদার ড্রেনেজ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক। গত ৪ জুলাই ওয়াসার এক অফিস আদেশে বরখাস্ত তিনি।

অফিস আদেশে দেখা যায়, সংস্থাটির চাকরি প্রবিধানমালা ২০১০ এর ৩৮ (খ) অনুয়ায়ী সংস্থাটির উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের আগে ঘটনার প্রেক্ষিতে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ওয়াসা। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।

ঢাকা ওয়াসা চাকরি প্রবিধানমালা ২০১০ এর ৩৮ এর ক ও খ প্রবিধি অপরাধের অভিযোগে গত ২২ মার্চ সংস্থাটির রাজস্ব জোন-১ এর রাজস্ব পরিদর্শক মো. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। তিনিও যোগ দিয়েছেন আন্দোলনে।

মঙ্গলবার আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের কাছে আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কথা বলতে রাজি হননি। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, 'ওয়াসায় আমাদের চাকরির নিরাপত্তা নাই। এখানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে বরখাস্ত করা হয়। এই অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না। যতক্ষণ পর্যন্ত না ওয়াসা ম্যানেজমেন্ট আমাদের দাবি মেনে না নেয়, আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।'

ওয়াসা সূত্র জানায়, সমিতির আগের কমিটি থেকে দায়িত্ব গ্রহণের সময় সমবায় অধিদপ্তর ১৩২ কোটি টাকার হিসাব মিলাতে পারেনি। তখনকার সভাপতি মারা গেছেন। এই কারণে প্রকৃতি হিসেবে সমবায় অধিদপ্তর বের করতে পারেনি। কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী ব্যক্তিস্বার্থ আদায়ের জন্য আন্দোলন করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সমিতির অর্থ লোপাট হয়েছে, এমন দাবিতে কর্মচারীদের একাংশ সমিতির কর্তৃত্ব চায়। তারাই তাদের সমর্থকদের নিয়ে এ মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন।

ওয়াসা কর্মচারীদের ছয় দফা দাবি হলো-

১. জব সিকিউরিটি, পেনশন সুবিধাসহ বিদ্যমান সব সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অর্গানোগ্রাম পরিবর্তনের নামে একজন কর্মীকেও চাকরিচ্যুত করা যাবে না।

২. ঢাকা শহরের আয়তন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঢাকা ওয়াসার সাংগঠনিক কাঠামো সম্প্রসারণ এবং যুগোপযোগী করার মাধ্যমে কর্মীদের কর্মচাঞ্চল্য বাড়াতে হবে।

৩. প্রতিষ্ঠানের প্রতি স্বত্ত্বাধিকার ও দায়বদ্ধতা না থাকায় আউটসোর্সিং ও চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। শূণ্যপদে নিয়মিত কর্মী নিয়োগ দিয়ে ওয়াসার কর্মশক্তি ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এক যুগেরও অধিক সময় ধরে কর্মরত মাস্টাররোল কর্মীদের নিয়মিত করতে হবে।

8. জ্যেষ্ঠতা এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসার বিধি-বিধান যথাযথ অনুসরণ করতে হবে। বিশেষ বিশেষ দুর্নীতিপ্রবণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের শিথিলতা প্রত্যাহার করে আইনের প্রয়োগ সবার জন্য সমানভাবে করতে হবে। আইনের আশ্রয় লাভের মৌলিক অধিকার সবার জন্য নিশ্চিত করতে হবে।

৫. কর্মচারীদের বদলী ও পদায়ন তাদের স্বার্থের অনুকূলে করতে হবে। কর্মরত অবস্থায় কোন কর্মকর্তা/কর্মচারী মারা গেলে সরকারী বিধানমতে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক জোরজবরদস্তিভাবে দখলকৃত ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির ২০০ কোটি টাকার সম্পদ ও অর্থ সমিতির নির্বাচি কমিটিকে বুঝিয়ে দিতে হবে।

৬. আইনসঙ্গত এবং যৌক্তিক কোন কারণ ছাড়াই সময়িক বরখাস্ত এবং ওএসডি হিসেবে থাকা কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আনা মিথ্যা অভিযোগ অবিলম্বে প্রত্যাহার করে তাদের পদায়ন করতে হবে।

'ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির ২০০ কোটি টাকার সম্পদ ও অর্থ সমিতির নির্বাচি কমিটিকে বুঝিয়ে দিতে হবে' - কর্মচারীদের এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে মোজাম্মেল বলেন, 'সমিতির বিষয়ে অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী ১৩২ কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। এই সংখ্যা আরও বেশি হবে। যারা লুট করেছে তাদেরকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।'

সম্প্রতি কর্মচারীদের এ অংশটি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই অর্থ লোপাট নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। যেখানে তারা একই দাবি তোলেন।

তবে কর্মচারীদের সূত্র মতে, 'নির্বাচিত কমিটি' দাবি করা কমিটি সংস্থাটির আইন ভেঙে নির্বাচনের আয়োজন করেছিল। আর সেই নির্বাচনে ৫ শতাংশ ভোটও পড়েনি। ফলে কমিটিকে ‘নির্বাচিত কমিটি’ হিসেবে মানতে আপত্তি খোদ কর্মচারীদেরই।

আন্দোলনকারীদের দাবির বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক আবুল কাশেম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সমবায় সমিতির জন্য কাউকে বরখাস্ত করা হয়েছে, বিষয়টা সে রকম নয়। যারা ওয়াসা আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন, ওয়াসার আইন অনুযায়ীই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।'

আবুল কাশেম বলেন, সমিতির অর্থ লোপাটের বিষয়টি ওয়াসায় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাকি দাবিগুলো ওয়াসা তার আইন অনুযায়ী মেনে চলছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/১৭মে/কেআর/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
তুরস্কের তৈরি ৩০০-৪০০ ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান, দাবি ভারতের
আট মাসেও অগ্রগতি নেই বাকৃবির গণতদন্ত কমিশনের, ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কা 
স্ত্রীর বাড়ি ছাড়ার গুঞ্জন নিয়ে যা বললেন শামীম
ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়: সারজিস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা