নিয়োগ পরীক্ষায় অভিনব জালিয়াতি, আঙুল ফুলে কলাগাছ স্কুলশিক্ষক
![](/assets/news_photos/2022/05/19/image-262438.jpg)
নিয়োগ পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দিতে চুক্তি হতো ১০-১৫ লাখ টাকা। এজন্য অগ্রিম দিতে হতো দুই লাখ টাকা। হলে প্রবেশের সময় সুকৌশলে পরীক্ষার্থীকে দেওয়া হতো ‘হিডেন স্পাই ওয়্যারলেস কিট’। এই ডিভাইসের মাধ্যমে বাইরে থেকে সরবরাহ করা হতো প্রশ্নপত্রের সমাধান। সম্প্রতি তিন পর্বে চলমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ঘিরে তৎপর হয়ে উঠেছিল একটি সিন্ডিকেট।
এই চক্রের মূলহোতা ইকবাল হোসেন। ইকবাল পেশায় স্কুল শিক্ষক। প্রশ্ন জালিয়াতি, প্রশ্নপত্রের সমাধানসহ বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জন করেছেন বিপুল অর্থ। এসব অর্থের মাধ্যমে গড়েছেন বিলাসবহুল বাড়ি। কিনেছেন জমিজমাও। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ব্যক্তিরা ইকবালের অবৈধ কর্মকাণ্ডের সহযোগী।
বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের চারজনকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু ডিভাইস ও বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়। ইকবাল ছাড়াও আটক অন্যরা হলেন- আগারগাঁও সমাজসেবা অধিদপ্তরের কম্পিউটার অপারেটর নজরুল ইসলাম, মুজিবনগর সমাজসেবা কার্যালয়ের সাবেক সমাজকর্মী মোদাচ্ছের হোসেন ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করার পর এই চক্রে জড়িয়ে পড়া রমিজ উদ্দিন। ডিভাইসগুলো (হিডেন স্পাই ওয়্যারলেস কিট) পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন রমিজ।
র্যাব জানায়, গত ২২ এপ্রিল প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষায় ১৬ জন পরীক্ষার্থীকে এই ডিভাইস সরবরাহের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহ করে এই চক্র। আগামীকাল শুক্রবার হতে যাওয়া প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষায় এক ডজন ডিভাইস সরবরাহের চুক্তি হয়েছিল পরীক্ষার্থীর সঙ্গে। এর আগেই তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে দেয় র্যাব।
যেভাবে প্রশ্নের উত্তর সরবরাহ করে বিপুল অর্থ আয়:
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চক্রের সদস্যরা প্রথমে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি নিয়োগ পরীক্ষা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করত। পরবর্তীতে ওই নিয়োগ পরীক্ষার হল ও পরীক্ষার গার্ড সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাকরি প্রত্যাশিদের খুঁজে বের করে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে ১০-১৫ লাখ টাকার চুক্তি করত। যারা রাজি হতেন, অগ্রিম দুই লাখ টাকা দেওয়ার পর পরীক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইসগুলো সরবরাহ করা হতো।
ডিভাইসের একটি অংশ পরীক্ষার্থীদের কানে থাকত। অটোমেটিক কল রিসিভ হওয়া সিম লাগানো আরেকটি অংশ শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রেখে হলে প্রবেশ করানো হয়। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর কোনোভাবে প্রশ্নের ছবি চলে আসত চক্রের হাতে। তাৎক্ষণিকভাবে বাইরে মেধাবীদের একটি টিমের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র সমাধান করে ওই ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর জানিয়ে দেওয়া হতো।
কে এই ইকবাল:
চক্রটির মূলহোতা ইকবাল হোসেন ২০০৮ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৫ সালে একই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী আলতাফ হোসেন নামে একজনের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে এই চক্রে জড়িয়ে যান ইকবাল। ২০২০ সালে করোনায় আলতাফ মারা যাওয়ার পর চক্রটি নিজেই পরিচালনা শুরু করেন ইকবাল। তিনি অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সিরাজগঞ্জে বিলাসবহুল পাঁচতলা বাড়ি গড়েছেন। তার বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানায় একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা ও বেশ কয়েকটি সাধারণ ডায়েরি রয়েছে।
র্যাব বলছে, আটক রমিজ এই চক্রের অন্যতম সহযোগী। ২০২০ সালে ইকবালের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে এই চক্রে জড়ান। ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস সম্পর্কে তার ভালো অভিজ্ঞতা থাকায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। পরীক্ষার সময় পরিক্ষার্থীদেরকে ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে সংযুক্ত করে বাইরে থেকে উত্তর সরবরাহ করত রমিজ।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মোদাচ্ছের আর নজরুল মূলত পরীক্ষা কোন হলে অনুষ্ঠিত হবে, গার্ড কে থাকবে খোঁজখবর নিতো। এরপর পরীক্ষা শুরুর পরপর কারো মাধ্যমে প্রশ্নের ছবি হোয়াটসঅ্যাপে তাদের কাছে চলে আসতো। আমরা সেসব লোকজনদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, ২০১৫ সাল থেকে চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিষয়ে ১০-১৫ লাখ টাকায় চুক্তি করত। আনুমানিক ৩০ জনের সঙ্গে চুক্তি করলে দুই-তিনজনকে কোনোভাবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করত। অনেকসময় স্বাভাবিকভাবেই তিন-চারজন চাকরি পেয়ে যেত। এভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। ২০২০ সাল থেকে ডিভাইসের মাধ্যমে নতুনপন্থায় চাকরি নিয়োগ পরীক্ষার এই প্রতারণা শুরু করে চক্রটি। তারা অনেক পরীক্ষার্থীর খোঁজে নেয়। আবার অনেক সময় যারা পরীক্ষায় অংশ নেয় তারাই তাদের কাছে যায়। গত ২২ এপ্রিল ১৬ জনকে এ প্রক্রিয়ায় উত্তর সরবরাহ করেছে। আমরা তাদের বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছি।
এই ডিভাইসগুলো পাশের দেশ ভারত থেকে তারা এই অসৎ উদ্দেশ্যে এনেছে বলে জানিয়েছেন কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ‘সাধারণত এ ধরনের ডিভাইস আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যবহার করেন। আমরাও এগুলো কিনতে চাইলে যথাযথ নিয়ম মেনে কিনে থাকি। এর বাইরে কেউ এসব ডিভাইস বিক্রি করছে কি-না আমাদের নজরদারী অব্যাহত থাকবে।’
(ঢাকাটাইমস/১৯মে/এসএস/কেএম)
সংবাদটি শেয়ার করুন
রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
রাজধানী এর সর্বশেষ
![](/cache-images/news_photos/2024/07/26/resize-90x60x0image-360295.jpg)
যাত্রাবাড়িতে দুই পুলিশ হত্যা, ছাত্রদল নেতাসহ গ্রেপ্তার ৬
![](/cache-images/news_photos/2024/07/25/resize-90x60x0image-360191.jpg)
সহিংসতাকারীদের ঢাকা ত্যাগ ঠেকানোর চেষ্টা ডিএমপির
![](/cache-images/news_photos/2024/07/24/resize-90x60x0image-360102.jpg)
রাজধানীতে নাশকতা: শতাধিক মামলায় গ্রেপ্তার ১৭৫৮
![](/cache-images/news_photos/2024/07/24/resize-90x60x0image-360099.jpg)
আগাম তথ্য সংগ্রহে ব্যর্থ: ডিএমপির ৮ থানার ওসিকে বদলি
![](/cache-images/news_photos/2024/07/24/resize-90x60x0image-360088.jpg)
রাজধানীর কিছু এলাকায় ইন্টারনেট সেবা চালু
![](/cache-images/news_photos/2024/07/24/resize-90x60x0image-360085.jpg)
সাংবাদিক হাসান মেহেদী হত্যার বিচার দাবি সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের
![](/cache-images/news_photos/2024/07/24/resize-90x60x0image-360084.jpg)
‘গুলিবিদ্ধ হয়ে ১০ মিনিট পড়ে ছিল সাংবাদিক হাসান মেহেদীর দেহ’
![](/cache-images/news_photos/2024/07/18/resize-90x60x0image-360074.jpg)
কোটা সংস্কার আন্দোলন: আফতাবনগরে শিক্ষার্থী, যাত্রাবাড়ীতে রিকশাচালক নিহত
![](/cache-images/news_photos/2024/07/18/resize-90x60x0image-360064.jpg)
মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা
![](/cache-images/news_photos/2024/07/18/resize-90x60x0image-360045.jpg)