গোয়ালন্দে ধান চাষে ট্রান্সজেন্ডারদের সাফল্য

এম মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী
 | প্রকাশিত : ০৮ জুন ২০২২, ১১:০৭

অন্যের কাছে হাত পেতে নয়! নয় ভিক্ষাবৃত্তি! ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় পুরুষের সঙ্গে সমান তালে কাজ করে সোনালী ধান রোপন, যত্ন ও কেটে ঘরে তুলছেন রাজবাড়ীর ২৬ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বা ট্রান্সজেন্ডার। এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ২৬ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের বাস করেন। পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এসকল মানুষ রেলস্টেশন, ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাটে অন্যের কাছে হাত পেতে জীবন পার করলেও এবার তারা স্বপ্ন দেখেছে কিছু একটা করার। ২৬ জনের জমানো টাকায় গুরু মা মাহিয়া মাহির পরামর্শে গোয়ালন্দ উপজেলার জুরান মোল্লার পাড়া এলাকায় সাড়ে তিন বিঘা জমি ভারা (কট) নিয়ে রোপন করেছেন ধান। আবার সেই ধানের সকল প্রকার যত্ন এমনকি কেটে ঘরে তোলার কাজও করছেন তারা নিজেরাই। সাড়ে তিন বিঘা জমিতে যে ধান তারা পাবেন এতে বছরের বেশির ভাগ সময় চালের জোগান দিবে বলছেন এই কাজের উদ্যোক্তা।

দৌলতদিয়ার তৃতীয় লিঙ্গের বাসিন্দাদের গুরু মাহিয়া মাহি বলেন, আমরা সব সময়ই ঘৃণার পাত্র। আমাদের পরিবার সমাজ বেশির ভাগ মানুষ ভালো ভাবে দেখে না। আর ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি হাবিবুর রহমানের মতো দুই একজন ভালো মানুষও আছে যারা আমাদের কথা ভাবে। সমাজের আর দশজন মানুষের মতো আমরাও মানুষ। ভাতের কষ্ট দূর করতে আমরা

নিজেরা টাকা জমিয়ে ৩২ হাজার টাকা দিয়ে সাড়ে ৩ বিঘা জমি এক বছরের জন্য কট (ভাড়া) নিয়ে নিজেরাই ধান উৎপাদন করেছি। এখান থেকে অন্তত ৮৫ মণ ধান আমরা পাবো। যা দিয়ে ২৬ টি মানুষের অন্তত ৮ মাসের ভাতের কষ্ট দূর হবে।

সমাজসেবা কর্মকর্তারা বলছে, ধান রোপন করে তাদের খাদ্য তারা জোগার করছে এতেই বোঝা যায় ওরাও পরিশ্রম করে সফলতা আনতে পারে। পাশাপাশি সমাজের মূল স্রোত ধারায় ফিরিয়ে আনতে রাজবাড়ীতে ট্রান্সজেন্ডারদের দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ।

সমাজ সেবা অধিদপ্তর রাজবাড়ীর উপপরিচালক রুবাইয়াত মো. ফেরদৌস বলেন, নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়নে চেষ্টা করা, নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ফসল উৎপাদন করছে তাদের অবশ্যই ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি রাজবাড়ী জেলার তৃতীয় লিঙ্গের বাসিন্দাদের সমাজের মুলস্রোত ধারায় ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যেমন সেলাই প্রশিক্ষণ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, বয়স্ক ও বৃদ্ধদের ভাতার আওতায় আনা। এমনকি দৌলতদিয়ার ট্রান্সজেন্ডাররা যদি চারজন করে গ্রুপ তৈরি করে আমাদের কাছে আবেদন করে তাদের স্বাবলম্বী করার জন্য অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।

মাহি আরও বলেন, গোয়ালন্দ উপজেলায় অনেক খাস জমি আছে আমরা এক টুকরো জমির জন্য সরকারী সকল কার্যালয়ে ছোটাছুটি করেছি। কেউ কোন সারা দেয়নি। এমনকি আশ্রয়ন প্রকল্পেও আমাদের ঠাই মিলেনি। থাকি ভাড়া বাসায় খুপরি ঘরে একত্রে সুখেই আছি আমরা।

তৃতীয় লিঙ্গের অন্য বাসিন্দা স্বপ্না বলেন, মানুষের কাছে হাত পেতে টাকা চাইলে তারা খারাপভাবে দেখে। বলে কটু কথা। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমরাও সকল কাজ করতে পারি। কষ্ট করে আমরা যে ধান ফলিয়েছি এই ধান ঘরে তোলার মধ্য দিয়ে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হবে, তাই চাষ করার মতো একটু জমি বা মানুষ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি একটু বাসস্থান পেলে উন্নয়নের মাইলফলকে ভূমিকা রাখতে পারবো আমরাও।

ধান রোনকারী তৃতীয় লিঙ্গের বাসিন্দা একাময়ী বলেন, সব ধরনের কাজ করতে পারি আমরা।

আমরা হাস মুরগি পালন করি তাও ভারা বাসায়। আমরা ধান চাষকরে ধান ফলাতে পারি। মানুষের একটু সহমর্মিতা, একটু ভালোবাসা পেলে আমরাও অসাধ্যকে সাধ্য করতে পারি।

তৃতীয় লিঙ্গের বাসিন্দাদের মাঠে কাজ করা ও ধান রোপনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এলাকাবাসী। তাদের পাশে থাকার অঙ্গিকারও করেছেন অনেকে। গোয়ালন্দ উপজেলার জুরান মোল্লার গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, তারা যে কাজটি করছে এটি কোনভাবেই ছোট নয়।

তারা তাদের চালের জোগান নিজেরা দিতে পারলে এটি অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ।

তাদের মাঠে ধান কাটা দেখতে মনে হয়েছে তারা কোন অংশেই কম নয়।

অপর বাসিন্দা মাওলানা ইসলাম মিয়া বলেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো প্রয়োজন। ওদের সঙ্গে মানুষ শুধু খারাপ ব্যবহার করে মানুষ হিসেবে ওদের সহযোগিতা করা উচিৎ, আমরা তাই করবো। এলাকাবাসী হিসেবে ওদের বিপদে আপদে সব সময় পাশে দাঁড়াবো আমরা।

(ঢাকাটাইমস/৮জুন/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :