অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান যে কারণে নির্ভরযোগ্য

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১১:০৭ | প্রকাশিত : ১৭ অক্টোবর ২০২২, ১৭:৩৭

পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে শুধু অপরাধ দমন-নির্মূলই নয়, সমাজ পরিবর্তনেও নানামুখী অবদান তার। কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি নানা ধরনের কর্মকাণ্ডে এরইমধ্যে তিনি রেখেছেন নানান নজির। তিনি বর্তমানে ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান।

নিজেকে কেবল একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি হাবিবুর রহমান। শিল্প-সংস্কৃতি, সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লালন এবং জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বেদে, হিজড়াসহ সমাজের অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। লড়াই করে যাচ্ছেন তাদের ভাগ্য বদলের। এই পুলিশ কর্মকর্তা ভিন্ন এক আলো হয়ে দুঃখ ঘুচিয়েছেন এসব অসহায় মানুষদের। প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাদের সামাজিক মর্যাদা।

হাবিবুর রহমান এ পর্যন্ত পুলিশের যে দপ্তরেই দায়িত্ব পালন করেছেন, গোছানো পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে সেই দপ্তরকেই জনসেবামুখী করে গড়ে তুলেছেন। দেখিয়েছেন সাংগঠনিক দক্ষতা। ধীরে ধীরে এই পুলিশ কর্মকর্তা নাগরিকদের কাছে হয়ে উঠেছেন নির্ভরযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য।

নিজ বাহিনী তথা সরকারের কাছেও তার ইতিবাচক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে হাবিবুর রহমানের। তিনি সদ্য অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি পেয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান হিসেবে যোগদান করার পর পুলিশের এ বিভাগটি আরও সমৃদ্ধ, গতিশীল ও জনসেবামুখী আধুনিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে বলে প্রতাশা নাগরিকদের।

হাবিবুর রহমানের মতো পুলিশ কর্মকর্তা পরবর্তীতে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হোক, এমন প্রত্যাশা বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের। এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা টাইমস।

তারা বলছেন, হাবিবুর রহমানের মতো একজন পুলিশ কর্মকর্তা ডিএমপির পরবর্তী কমিশনার হলে আরও নিরাপদ হবে এই শহর। এমন পুলিশ কর্মকর্তাই চাচ্ছেন তারা এই পদে। যিনি নগরবাসীকে আগলে রাখবেন, যার দরজা সবসময় খোলা থাকবে সাধারণ মানুষের জন্য।

হাবিবুর রহমানের সাথে বেদে ও হিজড়াদের উন্নয়নে কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হাবিবুর রহমান যদি ডিএমপি কমিশনার হন, তাহলে আমাদের সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটতো বটেই অর্থনৈতিক উন্নয়নেও তা ভূমিকা রাখবে। পুলিশের প্রতি মানুষের যে মনোভঙ্গি, সেটা বদলে যাবে। এই পরিবর্তনটা দরকার।’

পেশাগত গণ্ডির বাইরে গিয়ে হাবিবুর রহমান সমাজে যে অবদান রেখে চলেছেন তা অপরাধ নির্মূলে ও পুলিশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরিতে কতটা সহায়ক, এমন প্রশ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস বিভাগের শিক্ষক, আন্তর্জাতিক অপরাধ বিজ্ঞান সোসাইটির পরিচালক অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের কাছে।

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘অ্যাডিশনাল আইজিপি হাবিবুর রহমান নিভৃতে যে সামাজিক কাজগুলো করছেন, তা পুলিশের ভেতরে দৃষ্টান্তস্বরূপ। শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য। অন্যরাও এরকম কাজ শুরু করলে প্রাতিষ্ঠানিক যে ল্যাকিংসগুলো আমাদের আছে, তা কিছুটা হলেও দূর হবে।’

অন্যদিকে কিশোরগঞ্জের সংসদ সদস্য, সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদও প্রশংসা করেছেন হাবিবুর রহমানের এমন সামাজিক কর্মকাণ্ডের। সাবেক এই আইজিপি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘চাকরির পরিমণ্ডলের বাইরে গিয়ে হাবিবুর রহমানসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের জনকল্যাণমুখী কাজগুলো সমাজে পুলিশ সম্পর্কে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করছে, যা প্রশংসার যোগ্য।’

অন্যদিকে হাবিবুর রহমান সম্পর্কে সহকর্মীদের মূল্যায়ন হচ্ছে, তিনি (হাবিবুর) অসাধারণ একজন মানুষ। একজন চৌকস, দক্ষ নেতৃত্বগুণাবলী সম্পন্ন ব্যতিক্রমি পুলিশ কর্মকর্তা। তার কাছ থেকে শেখার আছে অনেক কিছুই। তিনি নিজের জন্য কিছুই করেন না। তার দরজা সাধারণ মানুষের জন্য সবসময় খোলা থাকে। যেকোনো মানুষ সমস্যা নিয়ে এলেই তাৎক্ষণিক তিনি সমাধানের প্রচেষ্টা শুরু করেন।

তবে চারদিকে এতো প্রশংসা হলেও পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের ভাষ্য, তিনি সরকারি দায়িত্ব কর্তব্য পালনের পাশাপাশি অসহায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। সাধ্য আর সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সমস্যার মূলে গিয়ে পুলিশের সেবা মানুষের জন্য সহজভাবে সমাধানের চেষ্টা করেন।

হাবিবুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পুলিশের জন্য ইতিবাচক ফল আসবে এমন কাজ করি ভালোবাসার জায়গা থেকে। পুলিশের চাকরির বাইরে যেসব কাজ করি সেগুলি হচ্ছে ভালোলাগা আর দায়বোধ থেকে।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত এই পুলিশ কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী তথা সরকার প্রধানের নির্দেশনা পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকেন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কর্মগুণেরও অনুসারী বলে তার (হাবিবুর) লেখা ‘নন্দিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান’ বইয়ে স্পষ্ট ছাপ পাওয়া যায়।

কর্মক্ষেত্রে সততা, সাহসিকতা, দক্ষতা, চৌকস আর দৃঢ় ব্যক্তিত্ব হাবিবুর রহমানকে করেছে অনন্য। পুলিশ কর্মকর্তা হলেও নানামুখি মানবিক কাজ করে কুড়িয়েছেন সুখ্যাতি। সময়োপযোগী ও দূরদর্শী নেতৃত্বগুণের কারণে বাহিনীতেও তার সুনাম রয়েছে।

হাবিবুর রহমান সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘পুলিশের ওপর মানুষের যে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি সেটা কিন্তু খুব একটা পজেটিভ না। অনেকক্ষেত্রেই নেগেটিভ। কিন্তু এর বাইরে ব্যতিক্রম আছে। ইদানিং অনেক পুলিশই ভালো করছে।’

‘হাবিবুর রহমান ডিআইজি থাকা অবস্থায় আমার সঙ্গে তার পরিচয়। তার যে কর্মকাণ্ড দেখেছি, আমার দৃষ্টিতে একজন পুলিশ কর্মকর্তা হয়েও সামাজিক সাংস্কৃতিক কাজের সঙ্গে তিনি যুক্ত। বিভিন্ন কাজ তিনি করেছেন। বিশেষ করে হিজড়া আর বেদে সম্প্রদায় নিয়ে গবেষণা করেছেন। শুধু গবেষণাই না, তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে। প্রথমে হাবিবুর রহমান এটা শুরু করেন, পরে সরকার সেটাকে প্রকল্প হিসেবে হাতে নেয়। এটা একটা বড় কাজ। কারণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে সমাজের উচ্চ শ্রেণির লোক খুব একটা ভাবে না। কিন্তু তাকে দেখেছি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ যেকোনো মানুষ যখন তার কাছে আসে, সরাসরি তার সঙ্গে দেখা করতে পারে। তাদের মনের কথা বলতে পারে।

হাবিবুর রহমানের কর্মকাণ্ডের উদাহরণ টেনে ঢাবির এই শিক্ষক বলেন, ‘আমি নিজে দেখেছি, এমনও হয়েছে যে, কেউ একজন এসে বললেন, আমার মেয়েটাতো বিয়ে দিতে হবে, তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলেছেন, আপনি ছেলে ঠিক করেন, আমি পুলিশে চাকরি দিয়ে দেব।’

‘একজন হয়তো খেতে পারছে না, হাবিবুর রহমানের কাছে এসে জানিয়েছেন অভাবের কথা, মুহূর্তেই ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে টাকা দিয়ে দিয়েছেন হাবিবুর। এরকম বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি দীর্ঘবছর ধরে অবদান রেখে চলেছেন। সাফল্যতো এসেছে পরে। কিন্তু তার যে অবদান, এই কন্ট্রিবিউশন সার্বিক দিক থেকে মনে রাখার মতো।’

হাবিবুর রহমানের মতো এমন সফল পুলিশ কর্মকর্তার ডিএমপি কমিশনার হওয়া সময়ের ব্যাপার উল্লেখ করে ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশে যারা ভালো করছেন, তার মধ্যে হাবিবুর রহমান অন্যতম। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন অঞ্চলে তার যোগাযোগ এবং ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। সবাই পজেটিভ তার প্রতি। নেগেটিভ কোনো কথা আমি শুনিনি। সেই দৃষ্টিকোন থেকে তিনি যদি ডিএমপি কমিশনার হন, তাহলে আমাদের সামাজিক সাংস্কৃতিক পেক্ষাপট তো বটেই, অর্থনৈতিক উন্নয়নে তা ভূমিকা রাখবে এবং পুলিশের প্রতি মানুষের যে মনোভঙ্গি সেটা বদলে যাবে।’

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি থাকা অবস্থায় হাবিবুর থানায়-থানায় সিসিটিভি লাগিয়ে তা নিজ দপ্তরে বসে মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য পুলিশের সেবাকে সহজ করেছিলেন। ফলে মানুষ থানায় সেবা পেয়েছে। যেমন, বাসে নারীদের হয়রানিরোধে ১০০ সিসি ক্যামেরা লাগানো হলো।

হাবিবুর রহমান যদি ডিএমপি কমিশনার হন, তাহলে এসব বিষয়ে বিস্তর কাজ করতে পারবেন। নারীদের নিরাপত্তা তথা গোটা শহর আরও নিরাপদ হয়ে উঠবে তার সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও যোগ্য নেতৃত্বগুণে। তিনি এসব বিষয় প্রকল্প আকারে উপস্থাপন করলে, সরকার তা গুরুত্ব সহকারে নেবে।

পুলিশ চাইলে যে মানুষের উপকার করতে পারে, তা দেখেছেন মন্তব্য করে ঢাবি শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘হাবিবুর রহমান যদি ডিএমপি কমিশনার হন তাহলে সমাজের মানুষ, ঢাকা শহরের মানুষ বা এর বাইরের মানুষও উপকৃত হবে। কারণ তিনি সমাজে যে দৃষ্টান্ত রেখেছেন তার প্র্রভাব তো সারা দেশেই পড়েছে।

বেদেদের ভাষা ‘ঠার’ নিয়ে হাবিবুর রহমানের লেখা গবেষণাধর্মী বই সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘ভাষা তো হলো মানুষের সংস্কৃতির প্রধান উপাদান। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাষা কিন্তু ওইভাবে মূল্যায়ন পায় না। ভাষাবিজ্ঞানে একটা কথা আছে, যে গরিব, তার ভাষাও গরিব। এই গরিবদের নিয়ে হাবিবুর রহমান যেটা কাজ করেছেন তা অকল্পনীয়। এই লড়াইয়ে অনেকটা সময় আমি তার সঙ্গে ছিলাম।’

ব্যক্তি হাবিবুর রহমান আসলে একজন ভালো মানুষ উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘তিনি (হাবিবুর) সহজ-সরল মানুষ। ক্রিটিক্যাল মনের না। ৫ বছর ধরে আমিও তার সাথে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করেছি। বেদেদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট ছিলাম। বেদেদের লিডারদের নিয়ে দিনব্যাপী ওয়ার্কশপ করেছি। হাবিবুর রহমানই এর নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের সাথে পুলিশ তো ওইভাবে মেশে না, আর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে তো না-ই। কিন্তু উনি যেভাবে তাদের সঙ্গে মিশেছেন, তাতে পুলিশ সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত ধারণাও অনেকটা বদলে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ সম্পর্কে মানুষের মনোভঙ্গি পরিবর্তন করতে হলে হাবিবুর রহমানের মতো ইতিবাচক কাজ করতে হবে। সার্বিক দিক থেকে হাবিবুর রহমানের কাজের মাধ্যমে অন্য পুলিশ সদস্যরা এই বার্তাটা পেতে পারে যে, সমাজে ভালো মানুষ এখনও আছে এবং ভালো কাজ করলে সেটা সমাজ ভালোভাবেই স্বীকৃতি দেয়। হাবিবুর রহমানের কাজগুলোর দৃষ্টান্ত একটা মডেল হতে পারে সারা দেশের পুলিশ সদস্যদের কাছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, উন্নত বিশ্বে যেমন আইনের শাসন, প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ—এসব শব্দগুলো খুবই প্রযোজ্য। কারণ, ওইসব দেশে আইন তার নিজের গতিতে চলে, যে কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়মনীতির মধ্যে আছে। সেখানে ব্যক্তির কোনো ইন্টারফেয়ার লাগে না। কিন্তু আমাদের মতো অনুন্নত দেশে কাঠামোগত খুব বড় একটা সমস্যা আছে। স্ট্রাকচারাল বা ইনস্টিটিউশাল ডেভেলপমেন্ট সেভাবে হয়নি নানা কারণে।’

‘ফলে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন বা প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে যে স্বাভাবিক গতি সেটা কিন্তু আমাদের মতো অনুন্নত দেশে একেবারেই অ্যাবসেন্ট। এর মধ্যেও আমরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে আইকনিক লিডারশিপটা খুব অল্প হলেও দেখি, যারা কিনা প্রতিষ্ঠানকে ছাড়িয়ে গিয়ে ব্যক্তি একটা বড় ভূমিকা পালন করে। এমনই একজন ব্যক্তি এডিশনাল আইজিপি হাবিবুর রহমান, যিনি প্রতিষ্ঠঅনকে ছাড়িয়ে গিয়ে ইতিবাচক অবদান রাখছেন সমাজে।’

এসব খুবই ভালো কাজ মনে করেন উল্লেখ জিয়া রহমান বলেন, ‘যেহেতু আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠানগুলো অতটা ডেভেলপ হয়নি, সেক্ষেত্রে ব্যক্তি উদ্যোগে এ রকম কাজ সমাজে একটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। এটা খুবই কার্যকরী। এদেরকে উৎসাহিত করা উচিত। তাদের এসব কর্ম যত বেশি প্রচার পাবে ততই অন্যরাও উৎসাহিত হবে।’

জিয়া রহমান আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, হাবিবুর রহমানের মতো এরকম জনকল্যাণমুখী কাজ পুলিশের ভেতরে দৃষ্টান্তস্বরূপ। এ ধরনের কাজ যারা করছেন, তারা শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য। পুলিশের কর্মকর্তারা এবং অন্যান্য সেক্টরেও এরকম কাজ যদি শুরু হয়, তাহলে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক যে ল্যাকিংস (ঘাটতি) আছে, তা কিছুটা হলেও দূর হবে।’

অন্যদিকে হাবিবুর রহমানকে নিয়ে বলতে গিয়ে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ ঢাকা টাইমসকে আরও বলেন, ‘সৃষ্টিশীলতা বা ক্রিয়েটিভিটি সব পেশার মানুষের মধ্যেই থাকতে পারে। তবে পুলিশের বিষয়টা একটু অন্যরকম। পুলিশকে আমরা ছোটবেলা থেকেই নেগেটিভ ভাবেই দেখি। পুলিশের বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমরা বড় হই না। এতো নেগেটিভিটির মধ্যে যদি দেখি পুলিশের একজন কর্মকর্তা পুলিশি কর্মকাণ্ডের বাইরে গিয়ে নানা ধরনের জনকল্যাণমূলক কাজকর্ম করছেন, তাহলে আমরা খুব পুলকিত হই। ভালো লাগে। বলি যে, পুলিশ এত সুন্দর একটা কাজ করলো। কারণ, আমরা ধরেই নেই যে, পুলিশ ভালো কাজ করবে না। পুলিশ হাসবে না, পুলিশ মানুষকে সালাম দিবে না, ভালো ব্যবহার করবে না। এই কাজগুলোর নেতিবাচক ইমপ্যাক্ট সমাজ বা রাষ্ট্রে আছে।’

সাবেক এই আইজিপি বলেন, ‘করোনাকালে পুলিশ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে, যা মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। যদিও পুলিশের কাজটা একটু জটিল আর কঠিন। এরমধ্যে যদি কেউ চাকরির পরিমণ্ডলের বাইরে হাবিবুর রহমানের মতো কোনো ভালো কাজ করেন তাহলে অবশ্যই আমরা বাহবা দেই। প্রশংসা করি। হাবিবুরের এই কাজগুলো সমাজে পুলিশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করছে।’

যত কাজ যত অর্জন

হাবিবুর রহমান ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের আগে ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ছিলেন। এর আগে পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুইবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পাওয়া হাবিবুর রহমান সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছেন মানবিক কাজে।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মানবিক কাজই নয় শুধু হাবিবুর রহমান সম্পদনা করেছেন আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যৌনপল্লীর শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়ানো, একাত্তরে পাক-হানাদারদের বিরুদ্ধে পুলিশের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের খুঁজে বের করা, তাদের নিয়ে বই সম্পাদনা এসব কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

১৯৬৭ সালে গোপালগঞ্জের চন্দ্র দিঘলিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া হাবিবুর রহমান ১৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে। বরাবরই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত এই পুলিশ কর্মকর্তার পেশাগত সাফল্য তাকে নিয়ে গেছে ঈর্ষণীয় অবস্থানে।

এত সব কিছুর পরও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও নিজের স্বাক্ষর রেখেছেন ডিআইজি হাবিবুর রহমান। ক্রীড়াঙ্গনে থিতিয়ে যাওয়া কাবাডিকে মূলধারায় তুলে এনেছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সুনাম কুড়িয়েছেন।

হাবিবুর রহমান অবহেলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের অংশ হিসেবে ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন ‘উত্তরণ ফাউন্ডেশন’। বর্তমানে ঢাকার সাভার ছাড়াও মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নাটোরের সিংড়া এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষদের নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বেদে সম্প্রদায়ের বিলুপ্ত প্রায় ভাষা নিয়ে ‘ঠার’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি। ‘ঠার’ বেদেদের মাতৃভাষা, যা সাধারণ মানুষের বোধগম্যের বাইরে।

এছাড়া ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি থাকা অবস্থায় আওতাধীন এলাকায় সন্ত্রাস, মাদক, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ বন্ধে জুম্মার নামাজের আগে মসজিদে ওসিদের বক্তব্য দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন হাবিবুর। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ বেশ সাড়া ফেলেছে। কমেছে বেশ কিছু অপরাধ। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের পুলিশভীতিও কেটেছে।

হাবিবুর রহমানের হাত ধরে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে রাজধানীর অদূরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে গড়ে ওঠা অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘ওয়েসিস’ এ ‘টেলিমেডিসিন সেবা’ চালু হয়। যেখানে বিনামূল্যে ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবা দেয়া হয়।

এদিকে একবছরে শততম বার মঞ্চায়ন করে দেশব্যাপী সাড়া জাগিয়েছে পুলিশ থিয়েটারের কালজয়ী নাটক ‘অভিশপ্ত আগস্ট’। মঞ্চ নাটকটির পরিকল্পনা, গবেষণা ও তথ্য সংকলন করেছেন ডিআইজি হাবিবুর রহমান। তিনি ২০১১ সালে যখন ডিএমপির সদরদপ্তরের ডিসি ছিলেন তখন পুলিশ থিয়েটারটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে ‘অভিশপ্ত আগস্ট’ নাটকটি মঞ্চায়িত করে বিশ্বরেকর্ড (আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি মেলেনি) করেছে পুলিশ থিয়েটার। কারণ, এখন পর্যন্ত একবছরে কোনো থিয়েটার গ্রুপ শতবার কোনো নাটক মঞ্চায়িত করতে পারেননি।

এছাড়া নৌকায় করে ভাসমান সাভারের বেদে পরিবারগুলোর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন হাবিবুর রহমান। তার উদ্যোগের বদৌলতে বেদে শিশু-কিশোররা এখন স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। সাভারের পোড়াবাড়ি বেদে পল্লীতে নির্মিত হচ্ছে, হাবিবুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়, দারুল আফতান হাফিজিয়া মাদ্রাসা, উত্তরণ পল্লী প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান।

বেদে জনগৌষ্ঠীর বেকার নারী-পুরুষদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন উত্তরণ ফ্যাশন নামে একটি গার্মেন্টস কারখানা। যেখানে প্রতিনিয়ত কর্মমুখর দৃশ্য দেখা যায়। সাভারের তুরাগ নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে উত্তরণ পল্লী। বেদে পল্লীর নারী-পুরুষেরা এখন শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠছে। অনেকে পুলিশ বিভাগে চাকরি করছেন। সরকারি অফিসেও দেখা যায় বেদে শিক্ষিত যুবকদের চাকরি করতে। এ সবই ডিআইজি হাবিবুর রহমানের অবদান।

ডিআইজি হাবিবুর রহমানের প্রচেষ্টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে টেলিকম ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয় পুলিশ মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর, যা এক ঐতিহাসিক স্থাপনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দায়বদ্ধতা থেকেই তার এই উদ্যোগ। ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ এটি সর্বসাধারণের প্রবেশের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়।পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি জাতীয় পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভের ঠিক পাশেই নব-নির্মিত জাদুঘর ভবনের উদ্বোধন করেন।

কর্মক্ষেত্রের বাইরে অবসর সময়ে প্রতিনিয়ত বই পড়েন পুলিশের এই কর্মকর্তা। তাছাড়া তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিয়ে বই সম্পাদনা করেছেন, যাতে দেখিয়েছেন দূরদর্শিতা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয় ‘নন্দিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান’ গ্রন্থটি।

এছাড়া ২০১৮ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা তুলে ধরে একটি বই সম্পাদনা করেন ডিআইজি হাবিব। যার নাম দেন ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’। বেদে সম্প্রদায়ের বিলুপ্ত প্রায় ভাষা নিয়ে ‘ঠার’ নামে একটি গবেষণাধর্মী বইও রয়েছে তার।

(ঢাকাটাইমস/১৭অক্টোবর/আরআর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রশাসন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

প্রশাসন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :