ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণ, দিশেহারা জামালপুরের কৃষক

দিগন্তজোড়া মাঠে দোল খাচ্ছে ধানের সোনালি শিষের সঙ্গে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। ধান পাকার আর মাত্র বাকি কয়েকদিন। এরমধ্যেই জামালপুরের মেলান্দহের কৃষকের স্বপ্ন ভাঙতে শুরু হয়েছে। খেতে গাছফড়িংয়ের (কারেন্ট পোকা) আক্রমণে মরছে বোরো ধান গাছ। এতে দুশ্চিন্তায় পড়ে দিশেহারা কৃষক। অনেকেই পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আধাকাঁচা ধান কেটে নিচ্ছে । আর কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকদের পোকার আক্রমণ ঠেকাতে কাজ করছেন তারা।
জামালপুরে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও জেলার মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জসহ সদর উপজেলায় খেতে পোকার আক্রমণে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে।
কৃষকেরা জানান, দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে খেতের ধান পেকে গেছে। ধানের শিষ ও গাছ সম্পূর্ণ সোনালি বর্ণ হয়ে গেছে। আক্রান্ত গাছে ধানের ভেতরে কোনো দানা নেই। আক্রমণের ২-৩ দিনের মধ্যেই ধান গাছ লালচে রং হয়ে মরে যাচ্ছে। পোকায় আক্রমণ করা বেশিরভাগ ধান চিটা হয়েছে। কৃষক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনে পোকা দমনে বারবার কীটনাশক দিয়েছে তাও কাজ হয়নি।
মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোনালী ধানখেতে কৃষকদের আহাজারি। ছবিলাপুর এলাকার কৃষক আছাদ মণ্ডল কেটে নিচ্ছে ধানের বদলে খড়। তিনি বলেন, ‘ধান না থাকায় খড় নিয়ে যেতে হচ্ছে। কারেন্ট পোকায় সব শেষ করে দিয়েছে। ধান কাটার বাকি ছিল ১২ থেকে ১৫ দিন। এর মধ্যেই পোকার আক্রমণ হয়েছে। এখন সংসার কিভাবে চলবে চিন্তা আছি।’
বেলতৈল এলাকায় কৃষক তাঁরা মিয়া ক্ষেতে কিটনাশক দিচ্ছেন। বলেন, ‘ছয় বিঘা জমিতে আমন আবাদ করে ছিলাম। পুরো জমিতেই কারেন্ট পোকা ধরেছে। কীটনাশক দিছি, কাজ হয় নাই। কীটনাশক দেয়ায় আরো পুড়ে মরে গেছে ধান।’
কৃষক মোস্তফা বলেন, ‘এবার আবহাওয়া ভালো ছিল। ঋণ দেনা করে আবাদ করেছি। শুরু থেকে আবাদ ভালো ছিল হঠাৎ কোপার আক্রমণে সব শেষ করে দিলো। এখন ঋণের টাকা নিয়ে চিন্তায় আছি। কৃষি চাষাবাদ করেই সংসার চলে এমন পোকার আক্রমণে সর্বহারা হয়ে গেছি।’জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ- পরিচালক জেসমিন জাহান (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) বলেন, কৃষকেরা কারেন্ট পোকা বলছেন আসলে এটা বাদামি গাছফড়িং। এই পোকা গাছের নিচে অংশের রস খেয়ে ফেলে। একটি গাছে এরা আক্রমণ করলে পুরো এলাকার ধানখেতে ছড়িয়ে পড়ে। কৃষকদের পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা কৃষকের মাঠে গিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। এ বছর জেলায় এক লাখ ২৯ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ৫৬০ হেক্টর।
(ঢাকা টাইমস/১২মে/এসএ)

মন্তব্য করুন