সরেজমিন
‘লাল শাড়ি’র শুটিং ঘিরে কৌড়ি গ্রামে উৎসবের আমেজ

মানিকগঞ্জ শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে হরিরামপুর উপজেলার অত্যন্ত সুন্দর ও পরিপাটি একটি গ্রামের নাম কৌড়ি। গত কয়েকদিন ধরে এ গ্রামে অবস্থান করছেন ‘ঢালিউড কুইন’ খ্যাত চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস ও চিত্রনায়ক সাইমন সাদিকসহ একঝাঁক শিল্পী। এ গ্রামের বিভিন্ন লোকশনে চলছে বন্ধন বিশ্বাস পরিচালিত ‘লাল শাড়ি’ সিনেমার শুটিং। সোমবার সারাদিন সেই শুটিং স্পট ঘুরে এই প্রতিবেদন।
হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা বাজারের একটু সামনেই অবস্থিত কৌড়ি গ্রাম। পুরো গ্রামজুড়ে রাস্তার দুই পাশে দৃষ্টিনন্দন আকাশি গাছের সারি। সোমবার দুপুরে গাছগুলোর ছায়ায় বসানো হয়েছে ‘লাল শাড়ি’ সিনেমার সেট। সেখানে কুয়াশা জড়ানো এক সকালের দৃশ্যধারণ চলছিল। সেটে মনিটরের সামনে বসা বন্ধন বিশ্বাস। ইউনিটের সবাইকে বারবার শর্ট রেডি করার তাগিদ দিচ্ছেন। তার ডান পাশে বসে চিত্রনায়ক সাইমন পরবর্তী শটের স্ক্রিপ্টে চোখ রাখছেন।
একটু দূরে তাকাতেই দেখা গেল অপু বিশ্বাসকে। শুটিং দেখতে আসা ভক্তদের সঙ্গে সেলফিতে ব্যস্ত তিনি। গ্রাম্য লুকে কৌড়ি এলাকার সঙ্গে মিশে গেছেন তিনি। অপু বিশ্বাস জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আশেপাশের এলাকাগুলো থেকে শতশত মানুষ ভিড় করে। আমি যেখানে থাকছি সেই বাসার সামনে অপেক্ষা করে মানুষ, কখন আমি বের হবো।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের উপস্থিতি আরও বাড়ে। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্তরা আমার জন্য নানা ধরনের খাবার নিয়ে আসেন। তাদের আবদার থাকে একটু হলেও খেতে হবে। সবার আবদার রাখতে আমিও খাই।
ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপ করছিলেন অপু বিশ্বাস, এমন সময় পাশ থেকে শোনা গেল, ক্যামেরা রেডি। ডাক পড়ল নায়িকার। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন অপু-সাইমন। ডিওপি বিশ্বজিৎ দত্ত রানা প্রোডাকশন ইউনিটের উদ্দেশ্যে হাঁক ছেড়ে বললেন, ‘কুয়াশা বাড়বে, আরও দুইটা ধোঁয়া দাও।’ প্রোডাকশন ইউনিট ধোঁয়া জ্বালিয়ে মধ্য সকালকে ভোরে রূপ দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
শট শুরু হলো, আকাশি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কারও জন্য অপেক্ষা করছেন অপু বিশ্বাস। গাছ থেকে হলুদ ফুল উড়ে এসে পড়ছে তার চুলে। পাশের পুকুরের চালা দিয়ে অপুর দিকে দৌড়ে এলেন নায়ক সায়মন সাদিক। শঙ্কা আর ভয়মাখা চোখে তার দিকে তাকালেন অপু।
সায়মন বললেন, ‘কী রে, এই সাত সকালে খবর দিলি?’ ভয় জড়ানো গলায় অপু বললেন, ‘আমার কেমন যেন লাগছে। খুব ভয় হয়।’ সায়মন কাঁধে হাত রেখে ভরসা দিয়ে বললেন, ‘আঁধার কেটে এই গ্রামে যেমন আলো ফুটছে, দেখিস একদিন আমাদেরও সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। আর আমি তোকেই বিয়ে করব।’
সায়মনের আশ্বাসে মনের মেঘ কাটতে শুরু করল অপুর। তখনই ‘কাট’ বলে পরিচালকের হাঁক। হইচই পড়ে গেল গোটা ইউনিটে। পতিত মাঠভরা গ্রামবাসীও হাততালি দিয়ে উঠলেন।
ক্যামেরা, ককশিট, সাইনবোর্ড পজিশন চেঞ্জে ব্যস্ত হয়ে পড়ল কলাকুশলীরা। অপু এগিয়ে এলেন মনিটরের দিকে। শটটা দেখে নিলেন এক পলকে। এরইমধ্যে আবারও ঢাকা টাইমসের সঙ্গে কথা শুরু করলেন। জানালেন, নভেম্বরের ২ তারিখে এই অঞ্চলে ‘লাল শাড়ি’ সিনেমার শুটিং শুরু হয়েছে। আরও সপ্তাহখানেক শুটিংয়ের পর শেষ হবে কাজ।’
বলে রাখা ভালো, এই সিনেমা নির্মিত হচ্ছে অপু বিশ্বাসের নিজস্ব চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা ‘অপু-জয় চলচ্চিত্র’র ব্যানারে। এটিই এই প্রযোজনা সংস্থার প্রথম চলচ্চিত্র। এ সিনেমার জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৫ লাখ টাকা সরকারি অনুদান পেয়েছেন তিনি।
প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজকের দায়িত্ব সামলাতে একটুও কষ্ট হচ্ছে না জানিয়ে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘ইউনিটের সবাই অনেক সাহায্য করছে। আমার আর্টিস্টরাও হেল্পফুল। ফলে একদমই চাপ অনুভব করছি না।’
‘লাল শাড়ি’ প্রসঙ্গে অপু বলেন, ‘এ ছবিতে আমার চরিত্রের নাম শ্রাবণী। তাঁতি জনগোষ্ঠীর গল্পে এই সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে। বাংলাদেশের শাড়ি এক সময় দেশের বাইরেও সমাদৃত ছিল। আমরা জামদানীর হারানো ঐতিহ্য তুলে ধরব এই সিনেমায়।’
ছবিতে অপু বিশ্বাসের বিপরীতে আছেন সাইমন সাদিক। প্রথমবার জুটি বেঁধে কাজ করছেন তারা। দুপুরের খাবারের বিরতিতে কথা হয় সাইমনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লাল শাড়ি’তে আমার চরিত্রের নাম রাজু। অপু বিশ্বাসের চরিত্রের নাম শ্রাবণী। আমরা একই গ্রামে বসবাস করি। আমি তাঁতশিল্পী।’
সিনেমাটি নিয়ে ভীষণ আশাবাদী সাইমন বলেন, ‘যেহেতু গ্রামীণ ঐতিহ্য নিয়ে সিনেমাটা তৈরি। আমার বিশ্বাস দেশের সর্বস্তরের মানুষ সিনেমাটি দেখবে।’
সহশিল্পী হিসেবে অপু বিশ্বাস কেমন? সাইমন বলেন, ‘অপু বিশ্বাসের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা দারুণ। তিনি খুবই সহযোগী মনোভাব দেখিয়েছেন। আমরা ৮০ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। বাকি কাজও সপ্তাহ খানেকের মধ্যে শেষ হবে। আগামী পহেলা বৈশাখে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।’
দুপুরের খাবার বিরতি শেষে খোঁজ করা হলো সিনেমার পরিচালক বন্ধন বিশ্বাসকে। ইউনিটের সঙ্গে থাকা একজন জানালেন পরবর্তী শটের জন্য পাশের বাড়িতে নির্মিত সেটে রয়েছেন তিনি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, রোদে শুকাতে দেওয়া নানা রঙের সুতার সমাহার। বারান্দায় চোখ রাখতেই দেখা গেল তাঁতের মেশিন। বুঝতে বাকি রইল না এটি একটি তাঁতিবাড়ি।
বাড়ির উঠানে চেয়ারে বসে আসেন নির্মাতা বন্ধন বিশ্বাস। ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বললেন, ‘২ তারিখে এখানে এসেছি। এরইমধ্যে সিনেমার একটি গানসহ ৮০ শতাংশ শুটিং সম্পূর্ণ করতে পেরেছি। আরও একটি গানের শুটিং করব এই এলাকায়। পাশাপাশি বেশ কিছু সিকোয়েন্সের শুটিং বাকি আছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই শুটিং শেষ করে ঢাকায় ফিরব বলে আশা করছি।’
এরই মধ্যে নায়ক সাইমন সেটে হাজির হলেন। পরবর্তী শটের জন্য ইউনিটের সবাইকে নির্দেশনা দিতে ব্যস্ত হলেন বন্ধন বিশ্বাস। এরপর শুটিং বাড়িটি থেকে বের হয়ে রাস্তার সামনে দেখা গেল অনেকগুলো রিকশা অপেক্ষা করছে বাড়ির সামনে।
রিকসা চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুটিংকে কেন্দ্র করে তাদের ইনকামও বেড়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক লোক এই স্থানে আসেন। ফলে ইনকাম হচ্ছে আগের তুলনায় বেশি। একই স্থানে বসেছে বেশকিছু ভ্রাম্যমাণ দোকানও। সেগুলোতে ডাব, ছোলা-মুড়ি, ফুচকা, পান-সিগারেট বিক্রি হচ্ছে।
শুটিং দেখতে আসা লোকজনের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি। রেবেকা ইসলাম নামে মধ্যবয়সী এক স্থানীয় নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ‘প্রতিদিন এই গ্রামে হাজার মানুষের আনাগোনা হচ্ছে। এছাড়া অপু এসেছেন এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর প্রায় সব বাড়িতেই আত্মীয়স্বজন আসছে। বিকাল হলেই দলবেঁধে সবাই শুটিং দেখতে আসেন।
(ঢাকাটাইমস/১৫নভেম্বর/এজে)

মন্তব্য করুন