এলাকায় শান্ত শরিফুল আড়ালে ‘হিংস্র’

নিজস্ব প্রতিবেদক, দিনাজপুর
| আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ২০:৫৩ | প্রকাশিত : ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ২০:৩২

দিনাজপুরের শিশু আরিফুরজ্জামানকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার যুবক শরিফুল ইসলামের নৃশংসতার বিবরণ দিয়েছে পুলিশ।

সোমবার জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসলাম উদ্দিন জানান, এলাকার শান্ত ও ভদ্র আচরণের শরিফুল (২২) আড়ালে ভয়ঙ্কর বিকৃত ও সিংস্র মানসিকতার। মুক্তিপণ দাবির আগেই শিশুটিকে হত্যা করেছে সে।

পুলিশ সুপার জানান, মুক্তিপণ চাওয়া মুঠোফোন নম্বর ও বিকাশের সূত্র ধরে খুনি শরিফুলকে ধরা সম্ভব হয়। তাকে আটকের পরও সে সন্দেহের বাইরে ছিল। কারণ ওই মুঠোফোন নম্বর ও বিকাশ অ্যাকাউন্টটি এক দিনমজুর ও গৃহিণীর নামে নিবন্ধন করা ছিল।

পরে মুক্তিপণের দাবি করা ১ লাখ টাকার মধ্যে আগাম নেওয়া ৫৪০০ টাকা উত্তোলনের দোকানের সূত্র ধরে খুনি শরিফুলকে চিহ্নিত করা হয়। পরে বিভিন্ন কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর শিশু আরিফুরজ্জামানকে অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে শরিফুল।

খুনি শরিফুলের তথ্যের ভিত্তিতে অপহরণের ৫৬ ঘন্টা পর মাটিতে পুঁতে রাখা বস্তাবন্দি শিশু আরিফুরজ্জামানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রবিবার (৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সোয়া ১টায় খানসামা উপজেলার পাকেরহাটস্থ মহাসড়ক সংলগ্ন জিকরুলের মিলের পার্শ্বে গাড়ি চালক আব্দুস সালামের বাড়ির আঙিনা খুঁড়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শিশু আরিফুরজ্জামানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, গত শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় খানসামা উপজেলার ইউপি ৪ নং খামার পাড়া ইউপির কায়েমপুর ডাক্তার পাড়া গ্রাম থেকে আরিফুরজ্জামানকে ফুসলিয়ে বাইসাইকেলে উঠিয়ে নিয়ে যায় শরিফুল। ভাড়া মেসে নিয়ে শিশুটিকে বলাৎকার করে বিকেল ৫টায় হত্যা করে। হত্যার পর রাত সাড়ে ৮টায় শিশুটির বাবা আতিউর রহমানের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে শরিফুল।

বর্গাচাষি আতিউর সন্তানকে বাঁচাতে প্রথম দফায় ৫৪০০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠায়। বিকাশ থেকে ওই টাকা উত্তোলন করে খুন্তি কিনে ভাড়া মেসের আঙিনায় মাটি খুঁড়ে হাত-পা বাঁধা আরিফুরজ্জামানের মরদেহ বস্তায় ভরে মাটিতে পুঁতে রাখে।

পুলিশ সুপার আসলাম উদ্দিন আরো জানান, ৮ বছরের শিশু আরিফুরজ্জামানের বাবা মো. আতিউর রহমান ২ ডিসেম্বর রাতে শিশু নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে আমরা মামলা নথিভুক্ত করে এ ঘটনায় সন্দেহভাজন তিন যুবককে পুলিশ আটক করে।

তিনি আরো জানা, শিশু আরিফুজ্জামান বাড়ির কাছে চেহেলগাজী মাদ্রাসার ২য় শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার মরদেহ মিলেছে কায়েমপুরস্থ তাদের বাড়ি থেকে অন্তত সাত কিলোমিটার দূরে। ওই বাড়িতে একটি রুম বাড়া নিয়ে গত তিনমাস ধরে থাকছিলেন শরিফুল। ঘটনার সময় ওই বাড়ির মালিক গাড়ি চালক আব্দুস সালাম বাড়িতে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন বাড়িটিতে দুজন ভাড়াটিয়া রেখেছেন। তারমধ্যে এক ভাড়াটিয়া শরিফুল ইসলাম ৪০০ টাকা ভাড়ায় মেস হিসেবে একটি রুম নিয়ে ৩ মাস ধরে ছিলেন। অন্য রুমে ছিলেন এক বয়স্ক দম্পতি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আকতার হোসেন ঢাকা টাইমসকে জানান, এলাকার শান্ত ছেলে হিসেবে পরিচিত শরিফুল। সে কারো সঙ্গে মিশতো না। জেনেছি শরিফুল পাকের হাট ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে কম্পিউটার শেখার পাশাপাশি নিজে কম্পিউটার প্রশিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন বেসরকারি জায়গায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিতেন। তার বাবা কৃষক। নিহত শিশু আরিফুরজ্জামান ও খুনি শরিফুলের বাড়ি পাশাপাশি খানসামা উপজেলার কায়েমপুর মাস্টারপাড়া এলাকায়।

(ঢাকাটাইমস/৫ডিসেম্বর/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :