অগণতান্ত্রিক আ.লীগ সরকার বিচারালয়কে ব্যবহার করছে: খন্দকার মোশাররফ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ২২:১৯

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার গায়ের জোরে দেশ চালাচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘এই অগণতান্ত্রিক সরকার বিচারালয়কে ব্যবহার করছে। গায়ের জোরের শাসন চালাচ্ছে। এ কারণে এই সরকার সাবেক প্রধান বিচারপতিকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। আজকে আমাদের দফা একটাই- সেটা হলো এই সরকারের পদত্যাগ।‘

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি অডিটোরিয়ামে দেশবরেণ্য আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেনের জীবদ্দশায়, ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মোশাররফ বলেন, আজকে এই সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশে আমাদের ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে খুন ও সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে। সে কারণে আজকে এই অবৈধ সরকারের নির্দেশ মানার কারণে র‌্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আমেরিকা। অর্থাৎ স্যাংশন দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য সুখকর খবর নয়। এটা আর্ন্তজাতিকভাবে লজ্জার।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব সারাজীবন আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। তার দীর্ঘ জীবনে তিনি যা করেছেন তা স্বল্প সময়ে বলে শেষ হবে না। তার কাছে কেউ আসলে তিনি সদয় মনোভাবাপন্ন হয়ে কথা বলতেন। সুপরামর্শ দিতেন। বিচার প্রত্যাশীকে তিনি ভালো পরামর্শ দিতেন।’

‘আজকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে বন্দি করা হয়েছে। একইভাবে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ফরমায়েশি রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দেশে ফিরতে পারছেন না। দেশে আইনের শাসন থাকতো তাহলে বাংলাদেশের মতো একটি দেশে শুধু বিরোধী মতকে স্তদ্ধ করার জন্য লক্ষাধিক মামলায় ৩৬ লক্ষ আসামি করা হতো না। দেশে যে আইনের নেই তার প্রমান খন্দকার মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা। এ দেশে যে আইনের শাসন নেই এটা নতুনভাবে বলার কিছু নেই।’ বলেন মোশাররফ।

ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই অবস্থায় দেশের মানুষ উপলব্ধি করেছে যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, যারা আইনের শাসন দলীয়করণ করে ধ্বংস করেছে, তারা এইগুলো মেরামত করতে পারবে না। তিনি বলেন, এক লাখ মামলায় দেশের প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ আসামী। মরহুম খন্দকার মাহবুব হোসেনও একাধিক মামলার আসামী। এ সরকারের সময় ৬০০ মানুষ গুম হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে। এজন্য র্যাব-পুলিশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জাকর।

ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আজ যে সরকার ক্ষমতায় আছে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। তিনি বলেন, আমাদের এখন দেশ আছে। জনগণ আছে। কিন্তু গণতন্ত্র নেই। আইনের শাসন নেই। দেশে সার্বভৌমত্ব নেই। তিনি বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন আইন জগতের দিকপাল ছিলেন। তিনি অত্যান্ত জনপ্রিয় ছিলেন, চার বার সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি হন। তিনি অত্যান্ত ভালো মানুষ ছিলেন। মহান আল্লাহ তাকে বেহেস্তবাসী বরবেন, এই দোয়া করি।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আইন ও রাজনৈতিক জগতে খন্দকার মাহবুব হোসেনের চলে যাওয়া আমাদের খুবই ক্ষতি করেছে। উনার সাহসিকতার যে প্রতিভা আজকের দিনে আমাদের খুবই বেশি প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক আদালতে আদেশ দেওয়ার ১৮ মাস পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলার রায় পাল্টানো আমাদের গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ভোটের অধিকার ধ্বংস করেছে। এ বিষয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী লিখেছেন, এটা একটা ক্রিমিনাল অ্যাক্ট। এরপরও সেই অর্থে আইন জগতে কোনো ঝড় দেখিনি। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাকে যেভাবে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়, এরপর কি বিচারকরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন। এরপরও বিচার অঙ্গনে কোনো ঝড় উঠতে দেখিনি। বাংলাদেশ রুল অফ ল’ নয়, রুল বাই ল’ তে চলছে।

ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, ১০ দফা বা ১২ দফা নয়, এখন দরকার এক দফা। একটি অবৈধ অনির্বাচিত সরকারকে এই মুহুর্তে পদত্যাগ করতে হবে। এজন্য জনগণের সাথে আইনজীবীদের এক্যবদ্ধভাবে অংশ নিতে হবে। সরকারকে বলতে হবে, আপনারা নির্বাচিত নন, আপনারা বিদায় নেন। তিনি বলেন, আমাদের গণতন্ত্র চর্চার দারুণ অভাব আছে। আইনজীবীদের চিন্তা করতে হবে, গণতন্ত্রের জন্য কি কি প্রয়োজন। পুলিশ দিয়ে রাজনীতি করা, এটা পাকিস্তানেও ছিল না। রাজনীতির প্রথম অর্থ হল নি:স্বার্থ হতে হবে। আপনি রাজনীতি করে বড়লোক হবেন, কোটিপতি হবেন। এটা রাজনীতি নয়। চরিত্রবান হতে হবে। জনগণের ভালোবাসা পেতে হবে এবং জনগণকে সাহায্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। রাজনৈতিক পরিবর্তন না হলে আন্দোলন করে কিছু পরিবর্তন আসবে না। তিনি বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন আমার মামা ছিলেন। তার সাফল্যে আমি আশ্চার্য হয়েছি। তবে বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে তিনি এ পর্যায়ে এসেছেন।

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে এবং আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় আলোচনায় সভায় জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ও বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বর্তমান সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপল্স পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব ও বাংলাদেশ পিপল্স লীগের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গরীব নেওয়াজ। এছাড়া অনুষ্ঠানে খন্দকার মাহবুব হোসেনের স্ত্রী ড. ফারহাত হোসেন, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আবদুল জব্বার ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজলসহ সহস্রাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/১৭জানুয়ারি/জেবি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

কারাবন্দি যুবদলের সাবেক সভাপতি নিরবের বাসায় টুকু

দেশের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত: হানিফ

বিএনপির সিনিয়র নেতারা কে কোথায় ঈদ করবেন?

ভারত-মিয়ানমার কোনো সীমান্তেই দেশের মানুষ নিরাপদ নয়: রিজভী

পশু কোরবানির সঙ্গ দুর্নীতি কোরবানি করতে হবে, ঈদ শুভেচ্ছায় জিএম কাদের

সেন্ট মার্টিন নিয়ে ফখরুলের বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন: ওবায়দুল কাদের

মিয়ানমার আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হানার চেষ্টা করছে: জিএম কাদের

ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক 

মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রশিবির

আওয়ামী সরকারের দুর্নীতির শিকড় দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে: আমিনুল

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :