৪২ বছর ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফ্রি আছর আলীর দোকানের চা-পান!

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল
  প্রকাশিত : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৪৭| আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:৩৮
অ- অ+

দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা তার কাছে অতিথি। তাই বীর মুক্তিযোদ্ধারা তার দোকানে গেলে তাঁদের কাছ থেকে একটা পয়সাও নেন না আছর আলী। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার বীরতারা ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামে একটি ছোট্ট চায়ের দোকান আছে তার। উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ওই দোকানের আয় দিয়েই চলে আছর আলীর সংসার।

কিন্তু শুরু থেকেই বীর মুক্তিযোদ্ধা কেউ দোকানে চা খেতে গেলে তাঁর কাছ থেকে একটা পয়সাও নেন না আছর আলী। শুধু চা নয়, মুক্তিযোদ্ধারা পান, কেক যা-ই খান না কেন, তাদের জন্য সবই ফ্রি আছর আলীর দোকান থেকে।

নিজের বাড়ির সামনেই ১৯৮২ সালে চা দোকানটি দেন আছর আলী। সে সময়ই ঘোষণা দেন, তার দোকানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা চা খেতে গেলে কোনো টাকা দিতে হবে না। গত ৪২ বছর ধরে এই নিয়ম চলে আসছে। তিনি তার দোকানের নামও রেখেছেন ‘মুক্তিসেবা টি স্টল’। দেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতেই এই নাম দেন তিনি।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আছর আলীর বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। তিনি দেখেছেন তাদের এলাকার অনেকেই পরিবার ছেড়ে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। কেউ ফিরে এসেছিলেন, কেউ আসেননি। তাই স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেখলে সম্মান জানাতেন আছর আলী। হাতে টাকা-পয়সা থাকলে তাদের চা-পানও খাওয়াতেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে। এখনো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একই রকম শ্রদ্ধা এবং সম্মান করেন আছর আলী।

এলাকার মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ চা পান করে জোর করে টাকা দিতে চাইলেও আছর আলী নেন না। প্রতিদিনই কোনো না কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা আসেন তার চায়ের দোকানে। তাদের সম্মানের সঙ্গে সেবা দেন আছর আলী।’

বছর তিনেক আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় আছর আলীর। এতে তার এক পাশ অবশ হয়ে যায়। এখন অন্যের সাহায্য নিয়ে চায়ের দোকানটি চালান তিনি। তার দুই ছেলে কাজ করেন ঢাকায় পোশাক তৈরির কারখানায়।

টাঙ্গাইলের সরকারি এম এম আলী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ শামসুল হুদা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আছর আলীর চা দোকানটি খুব ছোট। তার খুব কম টাকাই লাভ হয়। অথচ চার দশক ধরে বিনা পয়সায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চা–পান খাওয়াচ্ছেন তিনি। অনেক বড় মনের মানুষ আছর আলী। তাই গ্রামের সবাই তাকে অন্য চোখে দেখেন।’

কথা হয় আছর আলীর সঙ্গেও। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ কোনো দিনই শোধ করা যাবে না। কারণ তারা না থাকলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। তাই যত দিন বেঁচে থাকব, তাদের একই ভাবে সাধ্যমতো আপ্যায়ন করব, সম্মান আর শ্রদ্ধা করব।’

(ঢাকাটাইমস/২৯জানুয়ারি/এজে)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ফরিদপুরে দেড় লাখ টাকায় ‘বিক্রি হওয়া’ সেই শিশু উদ্ধার
আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করল ইসি
ঝিকরগাছায় পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্য
পরমাণু যুদ্ধের হুমকি সহ্য করবে না ভারত: মোদি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা