মা-ছেলেমেয়েকে হত্যা: আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর আর ‘স্বীকারোক্তি দেননি’ বাচ্চু মেম্বার

কুমিল্লার মুরাদনগরে মাসহ দুই সন্তানকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ‘অন্যতম পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া দুপুরে আদালতে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে রাজি হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এমন প্রেক্ষাপটে রবিবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে কুমিল্লা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. সাদেকুর রহমান বলেন, আজ বিকেলে ছয় আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আর মামলার ৩ নম্বর আসামি বাচ্চু মিয়া স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চান। কিন্তু প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি আর স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হননি। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাকেও কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এ নিয়ে এই মামলায় মোট আটজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এই ছয়জনকে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ঢাকা ও মুরাদনগরে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শনিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে গ্রেপ্তারের বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাব-১১-এর অধিনায়ক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মেম্বার বাচ্চু মিয়ার পরিকল্পনায় নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পরে ওই দিন রাতে তাদের বাঙ্গরা বাজার থানায় হস্তান্তর করা হলে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাদের।
আসামিদের আদালতে হাজির করার আগেই রবিবার বিকেল চারটার দিকে আদালত প্রাঙ্গণে আসেন মামলার বাদী রিক্তা আক্তার। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বারবার বলতে থাকেন, ‘আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। খুনিরা যেকোনো সময় আমাকে মেরে ফেলবে।’
রিক্তা আক্তার বলেন, ‘শিমুল চেয়ারম্যান এখনো গ্রেপ্তার না হওয়াতে আমরা বেশি আতঙ্কে আছি। শিমুল চেয়ারম্যানই মূল হোতা।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঘটনার শুরু থেকেই নিহতদের পরিবারকে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি। আজও তাদের বাড়ির সামনে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।’
গত ৪ জুলাই সকালে মুরাদনগরের বাঙ্গরাবাজার থানাধীন কড়ইবাড়িতে মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে হামলা চালিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে রোকসানা বেগম ওরফে রুবি, তার মেয়ে জোনাকি আক্তার ও ছেলে রাসেল মিয়াকে হত্যা করা হয়।
আহত হন রুবির মেয়ে রুমা আক্তার (২৮)। তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, নিহত পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল এবং স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের কারণে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
তবে পরিবারের সদস্যরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
এ ঘটনায় রুবির মেয়ে রিক্তা আক্তার দুদিন পর বাদী হয়ে ৩৮ জনের নাম দিয়ে এবং অজ্ঞাত আরও ২৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ পর্যন্ত এই মামলায় সেনাবাহিনী ও র্যাব আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
(ঢাকাটাইমস/৭জুলাই/এলকে)

মন্তব্য করুন