কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের চরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ‘চর ভগবতীপুর উচ্চ বিদ্যালয়’

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:৩৮
অ- অ+

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে উচ্চ বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার দ্যুতি ছড়াতে শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্রের দুর্গম চরে প্রতিষ্ঠিত ‘চর ভগবতীপুর উচ্চ বিদ্যালয়’। এ বছরেই প্রথম শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে বিদ্যালয়টি। মাত্র একমাসেই এ বিদ্যালয়ে পাঠদানের কথা ছড়িয়েছে আশেপাশের বিভিন্ন চরে। প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে নতুন নতুন শিক্ষাথীরা।

সরেজমিনে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের দুর্গম চরে নির্মিত চর ভগবতীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় শিক্ষাথীদের কলকাকলী। স্কুলের মাঠ থেকেই দেখা যায় দূরের ব্রহ্মপুত্রের ওপারে ভারতীয় সীমান্ত। ব্রহ্মপুত্র পাড়ের লাল রঙের চমৎকার দৃষ্টিনন্দন স্কুলের ৪টি রুমে পাঠদান চলছে।

স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষাথী মোছা. কহিনুর, আতিক, আয়েশা আক্তার বলেন, স্কুলটি প্রতিষ্ঠা না হলে আমাদের হয়তো লেখা পড়ায় বন্ধ হয়ে যেত। কেননা প্রাইমারি পাশ করে দূরে পড়তে যেতে হয় আমাদের। আমাদের অভিভাবকরা গরিব মানুষ আর এখান থেকে শহর যাওয়াটাও খুবই সমস্যা হয়।

৭ম শ্রেণির শিক্ষাথী রবিউল, খুশি, জিমা রুমি, রোজিনা, বিপাশা আক্তার বলেন, আমরা ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে যাত্রাপুর ও নুনখাওয়া এলাকার স্কুলে ভর্তি হয়ে ছিলাম। কিন্তু নদীপথ ও দূরের কারণে ঠিক মতো ক্লাশ করতে যেতে পারতাম না। এখন বাড়ির কাছে এবং বাড়ির কাছাকাছি চরে স্কুল হওয়ায় নিয়মিত ক্লাশ করতে পারছি।

স্কুলের শিক্ষক সেলিনা পারভীন মুক্তি, ফারুক আহমেদ জানান,এ বছরে শুধু মাত্র ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান শুরু করেছি আমরা। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন শিক্ষাথী ভর্তি হওয়ার জন্য আসছে। মাত্র ৪টি রুমে পাঠদান চলছে।রুম সংকট থাকায় হিমসিম খেতে হচ্ছে।

চর ভগবতীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ইউসুফ আলমগীর জানান, ১৬ নদ-নদী বেষ্টিত

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও উচ্চ বিদ্যালয় নেই বললেও চলে। ফলে এসব চরের শিশুরা প্রাথমিক পাশ করলেও নদী পাড়ি দিয়ে মুল ভূখন্ডে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়াটা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। আর এ কারণে শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ার পাশাপাশি মেয়ে শিশুরা বাল্য বিয়ের শিকারও হয়। এমন বাস্তবতায় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় আমরা গড়ে তুলেছি এই বিদ্যালয়টি। প্রথম বর্ষেই জায়গা সংকুলান করতে পারছি না। প্রত্যাশা করছি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি কিংবা ব্যক্তিগত সহায়তা পেলে আমরা বিদ্যালয়ের পরিসর বৃদ্ধি করতে পারবো।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: জহুরুল ইসলাম জানান, প্রথম বছরে নিম্ন মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠদান শুরু হয়েছে। যেখানে প্রায় দেড় শত শিক্ষাথীরা পাঠদান করছে। আশা করছি আগামী বছর থেকে নবম শ্রেণি পর্যায়ের শিক্ষাথীরা এই বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করবে।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও চর ভগবতীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাসেদুল হাসান জানান, সরকারি আর্থিক সহায়তায় বিদ্যালয়টির মাত্র ৪টি রুমের একটি চরউপযোগি টিনসেড ভবন আমরা নির্মাণ করেছি। সেই সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্মানী এবং বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য একটি আর্থিক তহবিল গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সেখানে স্থানীয় এমপি, জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান, কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়রসহ স্থানীয়রা সহযোগিতা করছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সকলের পৃষ্টপোষকতা পেলে স্কুলটি আরও বিকশিত হবে। সেই সঙ্গে চরের মেয়ে শিশুরা বাল্য বিয়ের হাত থেকে মুক্ত হবে।

(ঢাকাটাইমস/৮ফেব্রুয়ারি/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মোহাম্মদপুরে ৩৮০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
সাংবাদিক সাইদুরের প্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ 
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল সোমবার
এবার বাংলাদেশের চার টিভি চ্যানেল ইউটিউবে বন্ধ করল ভারত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা