মালিবাগে হুজিবির দুই জঙ্গি গ্রেপ্তার

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি)’র খুলনা বিভাগীয় বিভিন্ন পদবীর দুইজন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। রবিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর মালিবাগ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার দুপুরে র্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) ফারজানা হক গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
র্যাবের ভাষ্য, র্যাব-৩ এর সাদা পোশাকের গোয়েন্দা দল কুষ্টিয়া, মাগুরা এবং যশোর থেকে গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি)’র সক্রিয় সদস্য আব্দুল কুদ্দুস এবং মো. সিরাজুল ইসলাম ওরফে সালাউদ্দিন রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় একটি গোপন বৈঠক করছেন। এমন তথ্য পেয়ে র্যাব-৩ এর একটি দল মালিবাগ এলাকায় একটি অভিযান চালিয়ে রবিবার দিবাগত রাতে আব্দুল কুদ্দুস এবং সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল কুদ্দুসের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, আব্দুল কুদ্দুস হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি)’র যশোর জেলার আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। পাশাপাশি তিনি যশোর জেলার শেকহাটি এলাকায় ‘‘ওবায় বিন কাব’’ মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার নামে ২০০৭ সালে ঝিনাইদহের সদর থানায় একটি হরকাতুল জিহাদ সংশ্লিষ্ট জঙ্গি মামলা হয় । ওই মামলায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। তিনি ২০০৭ সাল থেকে ১০ বছর দুই মাস সাজা ভোগ করে ২০১৮ সালে জেল হাজত থেকে মুক্তি পেয়ে আবারও হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি)’র সাংগঠনিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়ে দল পূণঃগঠনে যশোর, মাগুরা এবং নড়াইলের বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসায় নিয়মিত হালাখা (গোপন বৈঠক) করতে থাকেন। ওই হালাখা সমূহে ঢাকা থেকে উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করতেন। হালাখার জায়গাসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল যশোর সীমা টেক্সটাইলের মসজিদ, যশোর নরের মহাসড়কের বেইলি ব্রিজের ডান পাশের ছোট মসজিদ, যশোর নিউমার্কেট এলাকার মারকাজ মসজিদ। ২০২২ সাল নাগাদ সে মোটামুটি ভাবে এসা এলাকায় একটি শক্তিশালী হুজি-বি ইউনিট গঠন করতে সক্ষম হন। আব্দুল কুদ্দুস মাদ্রাসার যুবদের মনে সমাজ বিদ্বেষী মনোভাব ছড়িয়ে দিতেন। প্রচলিত কলুষিত সমাজের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতা চালানোর মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার কথা বলে তাদের মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে হুজি-বি’তে অংশগ্রহণ করাতেন।
গ্রেপ্তারকৃত সিরাজুল ইসলাম ওরফে সালাউদ্দিনের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, সিরাজুল ইসলাম ২০০১ সালে যশোর কোল্ডস্টোরেজের নাইটগার্ড হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি চাকরিতে থাকা অবস্থায় ২০০১ সালে ওই কোল্ডস্টোরেজের নাইট গার্ডের তৎকালীন প্রধান মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি) সংগঠনে যোগদান করেন। তিনি যশোরের প্রধান হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি)’র রিক্রুটার এবং অর্থনৈতিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। এছাড়াও বিদেশী বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সাথে যোগসাজসে হুজি-বি’র অভ্যন্তরীন ব্যয়ভার বহনের টাকা যোগানের ব্যবস্থাও তিনি করতেন। তিনি ছদ্মবেশে রং মিস্ত্রির কাজ করে এবং হুজি-বি’র সাংগঠনিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল গোয়েন্দা নজরদারি চালাতেন। ২০১০ সালে তার নামে একটি বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় যশোর কোতয়ালী থানা পুলিশের কাছে ২০১১ সালে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। পরে ২০১২ জামিনে মুক্ত হয়ে মামলাটি আর কোন শুনানিতে হাজির হয়নি। তখন থেকেই তিনি খুলনা বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় পলাতক অবস্থায় আত্মগোপনে থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে থাকে। তার প্রকৃত নাম মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম হলেও আত্মগোপনে থাকাকালীন সে সালাউদ্দিন ওরফে রিয়াজুল ইসলাম ওরফে বিশ্বাস ওরফে আমির ওরফে আব্দুল্লাহ প্রভৃতি ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।
২০২২ সাল থেকে জঙ্গি আব্দুল কুদ্দুস এবং সিরাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকা আরও বেশ কয়েক জন শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গি সদস্যরা মিলে একটি বড় ধরনের জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করে আসছিলেন। সেই পরিকল্পনাকে সফল করার নিমিত্তে ইতোমধ্যে তারা বেশ তৎপরতা চালাতে শুরু করেন। নিয়মিত হালাখার মাধ্যমে তাদের কর্ম পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, কার্যপদ্ধতি এবং কর্মী সংগ্রহের কাজ ব্যপকভাবে বেগবান করতেন।
গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল কুদ্দুস যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানার মির্জাপুর গ্রামের মৃত আমির আলী মোল্লার ছেলে আর মো. সিরাজুল ইসলাম ওরফে সালাউদ্দিন যশোরের কোতয়ালী থানার বারান্দীপাড়া গ্রামের মো. সেকেন্দার মোল্লার ছেলে।
ঢাকাটাইমস/১৩ ফেব্রুয়ারি/এএ

মন্তব্য করুন