চার দিন ধরে সাড়া নেই আরাভ খানের, কূটনৈতিক চ্যানেলে চেষ্টা পুলিশের

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৩, ১৫:১৫ | প্রকাশিত : ২৬ মার্চ ২০২৩, ২১:২৪

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান হত্যার পলাতক আসামি বহুল আলোচিত রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান গ্রেপ্তার শঙ্কার মধ্যেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব ছিলেন। দুবাইয়ে পলাতক অবস্থায় অর্থের দম্ভভরা পোস্ট দিচ্ছিলেন ফেসবুকে একের পর এক। তবে গত চার দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার কোনো সাড়া মিলছে না।

রবিবার ঢাকা টাইমস একাধিকবার আরাভের ফেসবুকে কল ও বার্তা পাঠালেও উত্তর মেলেনি। দেখা যায়নি নতুন কোনো পোস্টও।

এর আগে গত শুক্রবার ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে রেড নোটিস তালিকায় আরাভের নাম প্রকাশ হওয়ার পর থেকে দুবাই পুলিশ আরাভকে কঠোর নজরদারিতে রেখেছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। তবে তাকে গ্রেপ্তারের নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলে বাংলাদেশ পুলিশ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চেষ্টা চালাচ্ছে বলে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

রবিবার বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের ইন্টারপোল ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ডেস্ক আরাভের গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি। ডেস্কের কর্মকর্তারা ঢাকা টাইমসকে জানান, ‘আরাভ গ্রেপ্তারের কোনও তথ্য নেই।’

ঢাকা টাইমসকে একই কথা জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মনজুর রহমানও।

এর আগে গত শনিবার পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আরাভ খানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি হয়েছে। তার গ্রেপ্তারের কোনো তথ্য বাংলাদেশ পুলিশের কাছে নেই। তবে তাকে গ্রেপ্তারে বাংলাদেশ পুলিশ দুবাই ও ইন্টারপোলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।’

এদিকে আরাভ খানের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডিগুলো ঘেঁটে দেখা গেছে, সবশেষ চার দিন আগে দেশবাসীর কাছে ‘দোয়া চেয়ে’ একটি স্ট্যাটাস দিয়ে নিরব হয়ে যান আরাভ খান। এরপর আর কোনো পোস্ট বা ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়নি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দুবাইয়ের একাধিক সূত্র বলছে, গ্রেপ্তার আতঙ্কে ‘গা ঢাকা’ দিয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক খুনের এই আসামি। এ অবস্থার মধ্যেই ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় নাম উঠেছে আরাভের। তার ভারতের পাসপোর্ট বাতিল করে দেশে ফেরাতে কাজ করছে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।

গত শুক্রবার ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে রেড নোটিশের তালিকায় রবিউল ইসলামের নাম দেখা গেছে। বাংলাদেশের অনুরোধে এই নোটিশ জারি করা হয়েছে। এতে তার ছবি, লিঙ্গ, জন্মস্থান, জন্মতারিখ, বয়স, জাতীয়তা ও অভিযোগের তথ্য রয়েছে। জাতীয়তা হিসাবে লেখা হয়েছে ‘বাংলাদেশি’। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হিসাবে লেখা আছে মার্ডার (হত্যা)। ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় এখন রবিউলসহ মোট ৬৩ বাংলাদেশির নাম রয়েছে। রবিউল ওরফে আরাভ খানই এই তালিকার সর্বশেষ ব্যক্তি।

দুবাইয়ের সূত্রগুলো বলছে, আরাভ খান ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারির খবরে গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন। দুবাইয়ে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কোথায় আছেন তা জানা যায়নি। আরাভের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, তিনি এখন বাসাতেই অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পলাতক আরাভ খান নজরদারিতে আছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য ইন্টারপোলের কাছে বাংলাদেশের পুলিশের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। আবেদনে পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলার চার্জশিটে দেওয়া নামেই রেড নোটিশ জারির অনুরোধ করা হয়। পরে ইন্টারপোল তা গ্রহণ করে। তবে এই নোটিশের মানে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নয়। এছাড়া ইন্টারপোল আসামিকে গ্রেপ্তারে কোনও দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বাধ্য করতে পারে না। এ অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তাকে দেশে ফেরাতে কাজ চলছে।

দুবাইয়ে পলাতক আরও বেশ কয়েক আসামিকে দেশে ফেরাতে সাফল্য দেখাতে না পারায় রেড নোটিশ জারির পরও আরাভকে ফেরানো নিয়ে নানা শঙ্কা রয়েছে। আরাভ যেহেতু ভারতীয় পাসপোর্টধারী, তাই তাকে কীভাবে ফেরানো হবে তা নিয়েও রয়েছে নানা আলোচনা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে রবিউলের আরাভ খান নামের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলের। এটি করা গেলে তাকে দেশে ফেরানো সহজ হবে বলে মনে করেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলেও চলছে যোগাযোগ।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ সালের ৮ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি ফ্ল্যাটে খুন হন পুলিশ পরিদর্শক মামুন। এই হত্যাকাণ্ডের পর রবিউল ভারতে পালিয়ে যান। ২০২০ সালে রবিউল ভারতের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নং ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। ওই বছরের ২৮ জুলাই কলকাতা থেকে ইস্যু করা পাসপোর্টে রবিউলের নাম আরাভ খান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই পাসপোর্ট দিয়েই তিনি দুবাইয়ে পাড়ি জমান। আয়ের কোনো দৃশ্যমান উৎস না থাকা সত্ত্বেও বড় পরিসরে শুরু করেন স্বর্ণ ব্যবসা।

১৫ মার্চ দুবাইয়ে তার মালিকানাধীন ‘আরাভ জুয়েলার্স’ উদ্বোধন অনুষ্ঠান নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। এই অনুষ্ঠানে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ দেশের অনেক তারকা অংশ নিয়েছিলেন। পরে জানা যায় আরাভ খুনের মামলার আসামি।

পুলিশ পরিদর্শক খুনের পর রবিউল ওরফে আরাভ তার নামে একজনকে আত্মসমর্পণের জন্য ভাড়া করেছিলেন। ভাড়া করা ওই ব্যক্তি আত্মসমর্পণের পর ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। এই মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ রবিউলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রবিউল এই মামলার চার্জশিটভুক্ত ৮নং আসামি। মামলাটি এখন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।

(ঢাকাটাইমস/২৬মার্চ/আরআর/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :