চিনির দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন ‘অসম্ভব’

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আজ শনিবার থেকে খুচরা বাজারে পরিশোধিত খোলা চিনি ১০৪ টাকা এবং পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি ১০৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা।
তবে, পাইকারি বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে যে চিত্র পাওয়া গেছে, তাতে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন ‘অসম্ভব’। তারা বলছেন, সরকার চিনির দাম কমিয়ে নির্ধারণ করে দিলেও আগের কেনা চিনি বিক্রি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কম দামে বিক্রি করা যাবে না।
গত বৃহস্পতিবার (০৬ এপ্রিল) চিনির বাজারে অস্থিরতা আরও কমাতে দাম কমিয়ে পরিশোধিত চিনির মূল্য নির্ধারণ করে দেয় সরকার। ঢাকার মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চিনির সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। রোজার প্রথমে যে দাম ছিল সে দামেই বিক্রি হচ্ছে চিনি। তবে নতুন দামে ফিরতে বাজার কয়েকদিন সময় নেবে।
মৌলভীবাজারের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সোহাগ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হাসান ঢাকা টাইমসকে বলেন, এখন তীর চিনির ৫০ কেজির বস্তা পাঁচ হাজার ৪৫০ টাকায় বিক্রি করছি। রোজার প্রথম দিকে এই দামই ছিল।
পাঁচ হাজার ৪৪০ টাকা হিসাবে চিনি ১০৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা পর্যায়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে চিনি। রাজধানীর বেশ কিছু মুদির দোকানে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী খুচরা পর্যায়ে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি কেজিতে ৩ টাকা কমেছে। বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রাণালয়ের যুগ্ম নিয়ন্ত্রক মোছা. শামীমা আকতার স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি বিক্রি হবে ১০৪ টাকায়। আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হবে প্রতি কেজি ১০৯ টাকায়। এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসআরএ) প্রতিকেজি চিনির দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনির দাম প্রতি কেজি ১০৭ টাকা। আর প্যাকেট জাত চিনির দাম প্রতি কেজি ১১২ টাকা নির্ধারণ করে। নতুন এ দাম শনিবার (৮ এপ্রিল) থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার চিনির দাম আরও কমিয়েছে। তবে বর্তমানে আমাদের যা কেনা আছে তা আট তারিখের আগে শেষ না হলে কিছুটা লোকসান হবে।
রোজার সপ্তাহ তিনেক আগে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুল্ক প্রত্যাহার করে সরকার। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এক পরিপত্রে চিনির আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৫ শতাংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। কিন্তু এর প্রভাব বাজারে পড়েনি।
রোজার মাস ঘিরে প্রয়োজনীয় অন্য নিত্যপণ্যেও কোনো সংকট হয়নি। স্থানীয় পর্যায়ে যা হয়েছে তা কৃত্রিম। বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিত্যপণ্য যেমন: তেল, ডাল, চিনি, মসলা সবকিছুর দামই গত দুই সপ্তাহ আগে যা ছিল তাই আছে। পাইকারিতে তেল কেজিপ্রতি এক-দুই টাকা কমলেও খুচরা পর্যায়ে কোনো কিছুর দাম কমেনি।
বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারি বিক্রেতারা পাম তেল প্রতি লিটার বিক্রি করছেন ১৩২ টাকা, যা দুই সপ্তাহ আগে ১৩৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে ১৭৪ টাকা লিটার। গত সপ্তাহে এটি বিক্রি হয়েছে ১৭৫ টাকায়।
মৌলভীবাজারের পাইকারি তেল ব্যবসায়ী মেসার্স সাত্তার স্টোরের মালিক মো. সাত্তার ঢাকা টাইমসকে বলেন, বাজারে তেলের কোনো সংকট নেই। সরবরাহ ঠিক আছে। বরং দুই সপ্তাহ আগে যে দামে বিক্রি করেছি আজকে এর চেয়ে কেজিতে দুয়েক টাকা কমে বিক্রি করছি।
সাত্তার বলেন, আমরা খবর পেয়েছি খুচরা ব্যবসায়ীরা কোনো কম দামে বিক্রি করছে না। তারা আগের দামে বিক্রি করছে। এটা ঠিক নয়। আমরা বাজারের সরবরাহ এবং চাহিদার ভিত্তিতে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করার চেষ্টা করি। রমজানে আরেক প্রয়োজনীয় পণ্য ডালের বাজারও ঠিক আছে। সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই।
পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি ডাল ব্যবসায়ীরা জানান, এখন মোটা ডাল বিক্রি হচ্ছে ৮৮ টাকা কেজি। আর চিকন ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১৮-১২০ টাকায়।
রোজার বাজারে মসলার দাম আগে থেকেই কিছুটা গরম হয়ে আছে। সে হিসেবে নতুন করে দাম বাড়েনি। পাইকারিতে মসলার দাম দেখা গেছে দারচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকা কেজি, এলাচি ভালো মানেরটা ২০০০-২৫০০, একটু কম গ্রেডেরটা ১৫০০-১৭০০ টাকা, কিশমিশ ৪২০ টাকা, কালো জিরা ২৪০ টাকা, খোরমা-২৮০-৩০০ টাকা, লবঙ্গ ১৩৫০ টাকা।
(ঢাকাটাইমস/০৮এপ্রিল/কেএম)

মন্তব্য করুন