গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা নওপাড়া সোলার মিনিগ্রিড

শরীয়তপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১৬:৩৮ | প্রকাশিত : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১৬:০৩

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার দুর্গম চর এলাকা নওপাড়ায় গড়ে উঠেছে সোলার ইলেক্ট্রো বাংলাদেশ লিমিটেডের অন্তর্গত নওপাড়া সোলার মিনিগ্রিড বিদ্যুৎ।

সোলারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতেন তারা। প্রায় হাজার খানেক ঘরে বিদ্যুৎ দেন তারা। মিটার প্রতি নিয়েছেন ৬ হাজার করে টাকা। যেখানে তারও কিনতে হয়েছে গ্রাহকদের। সবমিলিয়ে প্রায় ৮ থেকে ১০হাজার করে টাকা প্রতিটি প্রিপেইড মিটার সংযোগ দিতে নিয়েছেন গ্রাহকদের কাছ থেকে এমনটি অভিযোগ করেছে সেবা গ্রহনকারীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ চড়া দামে মিটার বিক্রি করেই থেমে থাকেন নি নওপাড়া সোলার মিনিগ্রীড। ইউনিট প্রতি নিয়েছেন ৩০ টাকা করে। মাসিক সার্ভিস চার্জ ও নেওয়া হত ৭০ টাকা। অথচ, বিদ্যুৎ সেবা গ্রহণকারীরা সোলার মিনিগ্রিড থেকে দেওয়া বিদ্যুৎ সেবা পাননি। ভুগতে হয়েছে মাসের পর মাস। কিন্তু মাস গেলেই গুনতে হত টাকা।

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেই শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম তার নির্বাচনী এলাকা নওপাড়া, চরআত্রা,কাচিকাটা, কুন্ডেরচরের মানুষের কথা চিন্তা করেই এই অঞ্চলে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে বিদ্যুৎ পৌছে দেন মানুষের ঘরে ঘরে। যেখানে নওপাড়া সোলার মিনিগ্রিড দিয়ে চড়া দামে বিদ্যুৎ সেবা নিতে হতো এই চরের মানুষদের। মাত্র ৬০০ ঘরে নওপাড়া সোলার মিনিগ্রিড বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়। যেখানে হাজার হাজার মানুষের ঘর থেকে যেত অন্ধকারে। কিন্তু হঠাৎ করেই গা ঢাকা দিচ্ছে নওপাড়া সোলার মিনিগ্রিড বিদ্যুৎ। মানুষের কাছে চড়া দামে বিক্রি করা বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেন তারা। জনমনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করা হয়েছে বিনা নোটিশে। তাদের পাওয়ার স্টেশনে থাকা ব্যাটারি, যন্ত্রপাতি, জেনারেটর সরিয়ে নিয়ে গেছেন রাতের অন্ধকারে। গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি।

নওপাড়া সোলার মিনিগ্রিডের ম্যানেজার বলেন, আমাদের বিদ্যুতের সকল লাইন বন্ধ আছে। আমরা পল্লী বিদ্যুতের কাছে আমাদের মিনিগ্রিড বিক্রি করে দেওয়ার কথা চলছে বলে আমি জানি। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা শেষ হলেই আমরা পল্লী বিদ্যুতের আওতায় থেকে আবারও বিদ্যুৎ সেবা চালু করবো।

নওপাড়া ফটোকপির দোকান ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ওরা কোনো কিছু না বলেই কারেন্টের লাইন বন্ধ করে দিছে। আমি ১০ হাজার টাকা দিয়া কারেন্টের লাইন লইছি। আমার মিটারে কয়েকমাস আগেও রিচার্জ করেছি ২৫০০ টাকা। এখন ওরা কারেন্ট বন্ধ করে দিছে। আমি ১০ হাজার টাকা দিয়া মিটার লইছি। এই মিটার দিয়া আমি কী করমু? যদি কারেন্টই না পাই। আবার সেদিন মিটারে রিচার্জ করছি ২৫০০ টাকার ইউনিট। তাহলে কি সব টাকাই জলে গেছে। আমরা এর বিচার চাই।

জয় বাংলা বাজারের ওয়াইফাই ব্যবসায়ী লতিফ বেপারী বলেন, মিনিগ্রিড থেকে কারেন্ট লইছি। হঠাৎ কইরা কোনো কথা নাই বার্তা নাই কারেন্ট বন্ধ কইরা দিছে। আমি বাণিজ্যিক মিটার লইছি মিনিগ্রিডের থেকে ২০ হাজার টাকা রাখছে। আমাগো কারেন্ট না দিলে আমাগো মিটারের টাকা ফেরত চাই।আমরা বাজারের ব্যবসায়ীরা আমাগো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির মুন্সীকে জানিয়েছি। কারেন্ট বন্ধ কইরা দিলে দেউক কিন্তু আমাগো টাকা আমাগো ফেরত দেউক।ওরা না জানাইয়া পলাইতে লইছে। নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন মুন্সী সোলার মিনিগ্রিডের মালিককে প্রতারক বলে মন্তব্য করেন। সোলার ইলেক্ট্রো বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার ডিএম মজিবর রহমান বলেন, এক বাড়িতে বিদ্যুতের দুই মিটার। একটি সোলার মিনি গ্রিডের, অপরটি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) বা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি)। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এ খাতের শিল্প উদ্যোক্তারা। চুক্তি অনুযায়ী সোলার মিনি গ্রিড এলাকায় আরইবি বা পিডিবির কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে না শর্তে উদ্যোক্তাদের লাইসেন্স দেয়া হলেও এখন তারাই সেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে। ফলে এক বাড়িতে এখন দুটি মিটার। আমরা আলোচনা করে এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। কিন্তু, সাধারণ মানুষের মিটার এবং অব্যবহৃত ইউনিটের লাখ লাখ টাকা ফেরত দিতে রাজি নন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১০এপ্রিল/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :