ধরিয়ে দিলে পুরস্কার, জারি আছে রেড অ্যালার্ট, কে এই সাতক্ষীরার শফিউল্লাহ মনি

শেখ শফিউল্লাহ ওরফে গোল্ড মনি। সাতক্ষীরার বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে রাজনৈতিক এই পরিচয় ছাপিয়ে তার কুখ্যাতি রয়েছে শীর্ষ চোরাকারবারি হিসেবে। পুলিশের তালিকায় সন্ত্রাসী শফিউল্লাহ মনিকে ধরিয়ে দিতে সম্প্রতি পুরস্কার ঘোষণা করেছে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ।
শফিউল্লাহ মনি সাতক্ষীরা সদরের দক্ষিণ কাটিয়া গ্রামের শেখ মোশারফ হোসেনের পুত্র। মনির বিরুদ্ধে অস্ত্র, চোরাচালান, ডাকাতি, দস্যুতা, চাঁদাবাজি, নাশকতাসহ ১০টি মামলা রয়েছে। এসব মামলা হয়েছে সাতক্ষীরার বিভিন্ন থানায়।
জেলা পুলিশ সূত্র বলছে, গত ৬ মার্চ রাত সাড়ে দশটার দিকে কলারোয়ার সাতক্ষীরা-যশোর হাইওয়ে রাস্তার ওপর পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে ডিউটি করছিল। এসময় মনি ও তার সহযোগীরা ইলিশপুর গ্রামের কোটার মোড়ে সাতক্ষীরা-যশোর হাইওয়ে পাকা রাস্তার ওপর ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর পায় পুলিশ।
তৎক্ষণাৎ সেখানে ঘটনাস্থল ঘেরাও করলে ডাকাত দলের সদস্যদের মধ্যে শফিউল্লাহ মনি পুলিশের দিকে গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গোল্ড মনির বিরুদ্ধে কলারোয়া থানায় ওই দিনই ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়।
সেসময় ঘটনাস্থল থেকে আটক মনিরের সহযোগী আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তাদের সর্দার হিসাবে গোল্ড মনির নাম প্রকাশ করেন। এরপর শফিউল্লাহ মনিকে গ্রেপ্তারে দেশব্যাপী রেড অ্যালার্ট জারি করে পুলিশ।
ধরিয়ে বা তথ্য দিলে পুরস্কার
এছাড়া সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ গত ২০ মার্চ শফিউল্লাহ মনিকে ধরিয়ে দিতে বা তথ্য দিতে পারলে পুরস্কারের ঘোষণা দেয়। তাকে ধরিয়ে দিতে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান জেলা পুলিশের ফেসবুকে পেজে পোস্ট দেন। সেখানে শফিউল্লাহ মনির সন্ধান পেলে কলারোয়া থানার ফোন নম্বর ০১৩২০-১৪ ২১ ৪৪, ০১৩২০-১৪ ২২ ০৫, ০১৩২০-১৪ ৩০ ৯৮ কল করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়ানোর অভিযোগ
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, রেড অ্যালার্ট জারির পর গোল্ড মনি ঢাকায় চলে যান। সেখান থেকে সাতক্ষীরার এসপি কাজী মনিরুজ্জামানকে সাতক্ষীরা থেকে সরানোর জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনায় লিপ্ত।
এই ষড়যন্ত্রের কারণ সম্পর্কে অনুসন্ধান করে জানা যায়, ১৪-১৫ সালে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন বর্তমান এসপি কাজী মনিরুজ্জামান। সেসময় বিএনপি জামায়াতের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তিনি দৃঢ় ভূমিকা রাখেন। এবার পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানকে সাতক্ষীরা থেকে সরানোর পরিকল্পনায় লিপ্ত রয়েছে চক্রটি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই চক্রটি ইতোমধ্যে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টার কৌশলের অংশ হিসাবে পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে ও সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।
যা বললেন এসপি কাজী মনিরুজ্জামান
এসব বিষয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘শফিউল্লাহ মনি একাধিক মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।’
‘বর্তমানে পলাতক শফিউল্লাহ মনিকে গ্রেপ্তারের জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পালিয়ে থেকেও সে সরকারবিরোধী বিভিন্ন কাজে লিপ্ত রয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধেও নানান প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তাকে গ্রেপ্তার করার পর তাদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’
কে এই শফিউল্লাহ মনি?
শফিউল্লাহ মনি সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা। তার বড় ভাই মাছুম বিল্লাহ শাহীন পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি। বিএনপি সরকারের আমলে মনি তার ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে রমরমা বদলি বানিজ্য, মাছ, চিনি, স্বর্ণ চোরাচালান করত। এমনকি তার বিরুদ্ধে শিশু পাচারের অভিযোগও রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শফিউল্লাহ মনি সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ডন খ্যাত আল ফেরদৌস আলফার সঙ্গে আঁতাত করে জেলায় অস্ত্র, স্বর্ণ ও চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করে আসছে।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী মনিরুজ্জামান যোগদানের পর মাদকবিরোধী এক অভিযানে ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর আল ফেরদৌস আলফা ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হয়। এরপর থেকে দায়িত্ব বেড়ে যায় সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য শফিউল্লাহ মনির। তিন মাস সিন্ডিকেটের দায়িত্ব পালনের পর নতুন করে পুলিশের সামনে আসে গোল্ড মনি।
অপকর্ম করে নানা সম্পদের মালিক
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরা শহরে কাটিয়া, নারকেলতলা, দাসপাড়া, ঋ-শিল্পিসহ শহরের বিভিন্ন এলাকা এবং ঢাকা শহরে বিপুল পরিমান সম্পত্তির মালিক বনেছেন চোরাকারবারি মনি। চোরাচালান, মাদক ব্যবসাসহ অবৈধভাবে এসব সম্পত্তি অর্জন করেছেন তিনি।
সাতক্ষীরাতে তার মালিকানায় আছে পৌরসভার নারকেলতলার মোড়ে সাজিদ মটরস, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে সংগ্রাম মটরস, কালিগঞ্জের নলতায় বাজাজ মটরসের শোরুম, বিনেরপোতা এলাকায় নির্মিত ১টি বিলাসবহুল বাড়ীসহ নামে বেনামে লেটেস্ট মডেলের প্রাইভেট কার ও মালবাহী ট্রাক।
(ঢাকাটাইমস/১১এপ্রিল/ডিএম)

মন্তব্য করুন