খালিশপুরে শহীদ মিনারের জমি দখলের ভিডিও করায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা

খুলনা নগরীর খালিশপুর থানার নেভি চেকপোস্ট মোড়ে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিসের পাশে শহীদ মিনারসংলগ্ন সরকারি জায়গা বেদখলের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তিন সাংবাদিক মারপিট ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে । এ সময় ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ও সাংবাদিক পরিচয়দানকারী মো. ওয়াহিদ হাসান নামে এক ব্যক্তি তাদের ওপর হামলা চালান।
হামলার শিকার সাংবাদিকরা হলেন দৈনিক প্রবাহ ও বিজনেস বাংলাদেশ পত্রিকার মামুন রেজা হাওলাদার, বিজয় টেলিভিশনের আব্দুর রাজ্জাক ও জাতীয় দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার সাংবাদিক শেখ শান্ত ইসলাম।
সাংবাদিকদের ওপর এ হামলার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ায় সৃষ্টি হয়েছে নানা আলোচনা।
স্থানীয়রা জানান, ওয়াহিদ হাসান নামের এই ব্যক্তি নিজেকে যশোর বার্তা নামে একটি পত্রিকার সাংবাদিক ও বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে একাধিক জায়গা দখল করে নিয়েছেন। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর তার বিরুদ্ধে লুটপাট, চাঁদাবাজি ও দখলদারির অনেক অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি নেভি চেকপোস্ট মোড় সংলগ্ন ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিসের পাশে রেলওয়ের সরকারি সম্পত্তি দখল করে নেয় ওয়াহিদ । প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ শনিবার (১০ মে) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ অফিসের পাশে সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে যান ওই তিন সংবাদকর্মী। রেলের সম্পত্তি দখল করে অবৈধভাবে হোটেল স্থাপনের ভিডিও ধারণ করতে গেলে তাদের বাধা দেন ও একপর্যায়ে মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন ওয়াহিদ। এরপর দৈনিক প্রবর্তন ও বিজয় টেলিভিশনের সাংবাদিক মো. আব্দুর রাজ্জাকের ওপর অতর্কিত হামলা চালান ওয়াহিদ হাসান ও আরও কয়েকজন।
এ সময় দৈনিক প্রবাহ ও বিজনেস বাংলাদেশের জেষ্ঠ সাংবাদিক মামুন রেজা ঠেকাতে গেলে তার মাথা, গলা-পিঠে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুসি মারে। সময়ের আলো পত্রিকার সাংবাদিক শেখ শান্ত মারপিটের ভিডিও করায় তার ওপরও হামলা চালায়।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল বলেন, তিন বছর ধরে শহীদ মিনারের জায়গা দখল করে হোটেল চালিয়ে আসছে ওয়াহিদ হাসান ও ১৫ নন্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আলী আজিম রানা।
১ নম্বর নেভি চেকপোস্ট মসজিদের খাদেম বলেন, তিন বছর আগে মসজিদ কমিটির সভাপতি টিটু এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক করেন ১৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মো. আলী আজিম রানাকে । এরপর থেকেই তিনি এই মাদ্রাসার বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসছেন।
এ ঘটনায় খুলনার সব সংবাদকর্মী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘সংবাদকর্মীর গায়ে হাত দেওয়া অনেক বড় অন্যায় হয়েছে । লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
এ বিষয়ে খালিশপুর থানা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী বাবু বলেন, সংবাদ সংগ্রহের কাজে বাধা প্রদান ও মারপিট করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য আচরণ নয়।
মারপিটের শিকার সাংবাদিক মামুন রেজা বলেন, ‘আমরা গোপন তথ্যে জানতে পারি একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে কিছু লোক শহীদ মিনারের কিছু অংশ ও রেলওয়ের সম্পত্তি দখল করে রেখেছে। রানা নামে আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে দিয়ে দখলীয় এই জায়গার দেখাশোনা করে ওয়াহিদ। আমরা অবৈধ দখলের এই ভিডিও করতে গেলে হামলার শিকার হই।’
এ ঘটনার পর মামুন রেজাসহ সাংবাদিকরা খালিশপুর থানায় যান। তারা হামলার ঘটনার কথা জানালে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামের তাদের একটি অভিযোগ দায়ের করতে বলেন।
তবে ঘটনার মোড় ঘুরাতে অভিযুক্ত ওয়াহিদসহ কয়েকজন থানায় গিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করার চেষ্টা করে।
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে কেএমপির পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কয়েকজন সংবাদকর্মী। কমিশনার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ও নিরপেক্ষ সাক্ষীর সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।
(ঢাকাটাইমস/১১মে/মোআ)

মন্তব্য করুন