ভৈরবে ব্লাস্ট রোগে নষ্ট আগাম জাতের ব্রি-ধান ২৮, দিশেহারা কৃষক

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৪:২১ | প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৪:১৮

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ব্লাস্ট রোগে নষ্ট হয়েছে আগাম জাতের ব্রি-ধান ২৮ ধান, সারা বছরের খাদ্যের জোগান নিয়ে দিশেহারা কৃষকরা। ব্লাস্ট রোগ ব্রি-ধান ২৮ জাতের ধানে এর প্রকোপ বেশি। রোগের প্রভাবে ধান চিটা হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, এ বছর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের জোয়ানশাহীসহ বেশ কয়েকটি হাওরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে সাত হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এরমধ্য এক হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ব্রি-ধান ২৮ আবাদ হয়েছে। ধান নষ্ট হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

রবিবার দুপুরে উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মোটুপী, সাদেকপুর, রসুলপুর, মেন্দিপুর গ্রামগুলিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বোরো মৌসুমে হাওরের বিলের জমিতে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। তবে কম সময়ে জমিতে ফলন দেয় এবং চাল সরু ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় হাইব্রিড জাতের পাশাপাশি উফসি-২৮ জাতের বোরো ধানের আবাদ করেন কৃষকেরা। কিন্তু উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের গ্রামের জমিতে ব্রি-ধান ২৮ ধানের ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেসব জমিতে শুধু ধানের গাছ ছাড়া আর কিছুই নেই।

সেখানে ধানের শিষ আসার সঙ্গে সঙ্গে তা পুড়ে গিয়ে চিটা হয়ে যায়। সেই সাথে ইঁদুর গাছের গোড়া কেটে দেয়ায় নষ্ট হচ্ছে ধান গাছ। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার কৃষকেরা। ধার দেনা করে বোরো ধানের আবাদ করেছেন তারা। ধান নষ্ট হওয়ায় ধার দেনা শোধ করবেন কীভাবে সেই চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। ধান নষ্ট হওয়ায় সারা বছর খাদ্যের জোগান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।

উপজেলার মৌটুপী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মো. মিজানুর রহমান জানান, এ বছর তিনি আট বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে হাইব্রিডের পাশাপাশি উফসি-২৮ জাতের ধান রোপণ করেন। কিন্তু এসব ধান গাছে ব্লাস্ট রোগ হওয়ায় ধান চিটা হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ভালো জমিতে ইঁদুর গোড়া কেটে দেয়ায় ধান গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে তিনি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কামাল মিয়া বলেন, অন্যের জমি বর্গা নিয়ে এ বছর ৩০ বিঘা জমিতে বোরো-২৮ জাতের ধান রোপণ করেছি। ধানের শিষ আসার সঙ্গে সঙ্গে তা পুড়ে গিয়ে চিটা হয়ে গেছে। এ বছর একটা ধানও ঘরে তুলতে পারবো না। ছেলেমেয়ে নিয়ে সারা বছর কী খেয়ে বাঁচবো সেই চিন্তায় আছি।

রসুলপুর গ্রামের কৃষক সাইজুদ্দিন বলেন, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে ব্রি-ধান ২৮ আবাদ করেছি। এসব জমিতে ধান আবাদ করতে খরচ হয়েছে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। এখন জমিতে যে পরিমাণ ধান পাওয়া যাবে তা খরচের টাকাও উঠবে না বলে তিনি জানান।

কৃষক এমদাদুল হক এমাদ বলেন, ২০ বিঘা জমিতে এ বছর বোরো ধান আবাদ করেছি। তার মধ্য ১০ বিঘা জমিতে ব্রিধান ২৮ আবাদ করেছি। নিচু জমিতে তাড়াতাড়ি পানি চলে আসায় সেসব জমিতে ব্রিধান ২৮ আবাদ করে থাকি। কয়েক দিন আগে হঠাৎ রাতে ঝড় বৃষ্টি হয়েছিলো সেই ঝড়ের সাথে শিলা হালকা বৃষ্টি

হয়েছিলো তারপর থেকেই জমিতে চিটা পড়তে শুরু হয়েছে। তারপর আস্তে আস্তে পুরো জমিতে সাদা হয়ে গেছে। এখন এসব জমি যে টাকা খরচ করে কাটবো সেই টাকার ধান পাবো না। এখন কি করবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছি। কিভাবে সারা বছরের খাদ্যের জোগান দেব সেই ভাবনায় দিশেহারা হয়ে আছি।

সাদেকপুর গ্রামের কৃষক রাফি উদ্দিন বলেন, হাওরের নিচু জমিতে প্রতিবছরই ব্রি-ধান ২৮ আবাদ করে থাকি। এই ধান ফলন কম হলেও খুব কম সময়ের মধ্য ফসল ঘরে তোলা যায়। সেজন্যই আমরা ব্রি-ধান ২৮ আবাদ করে থাকি। কিন্তু এ বছর ব্রি-ধান ২৮ এ যে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে জমির সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তো জমিতে শুধু ধানের গাছ পড়ে রয়েছে। এমন জমির ধান কেটেই কি করবো ভাবছি।

ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান, ধানের জমিতে যেন ব্লাস্ট রোগ না হয় সেজন্য উপজেলা কৃষি অফিস আগাম সতর্ক করে কৃষকদের ব্রি ধান ২৮ এর বদলে ব্রি-ধান ৮৮ নতুন ধানের জাত আবাদ করার জন্য পরার্মশ দিয়েছে। ব্রি-ধান ২৮ এ ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। যার ফলে ব্রি-ধান ২৮ ধান চাষ করে কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জমি পরিদর্শন করে সহযোগিতা ও বিভিন্ন ধরণের পরার্মশ দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ নিরূপণ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে সরকারের উচ্চমহলে পাঠানো হবে। তবে ব্রি-ধান ২৮ ব্লাস্ট রোগে আক্রমণে নষ্ট হয়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে এখনো কোন সহযোগিতার নির্দেশনা আসেনি যদি পরর্বতীতে নির্দেশনা আসে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সহায়তা প্রদান করার আশ্বাস দেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৭এপ্রিল/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :