নতুন কাজ নেই, সংকটে পোশাকখাত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ মে ২০২৩, ০৯:৩৭ | প্রকাশিত : ১৪ মে ২০২৩, ০৮:৪৫

নানা কারণে কার্যাদেশ সংকটে রয়েছে দেশের পোশাকখাত। কাজ না থাকায় বন্ধ হচ্ছে গার্মেন্টস। বেকার হয়ে পড়ছেন শ্রমিকরা।

নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) তথ্য বলছে, চলতি বছর প্রায় ৩০০ কারখানা বন্ধ হয়েছে। ফলে চাকরি হারিয়েছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার শ্রমিক। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও শ্রমিক অসন্তোষকে পোশাক কারখানা বন্ধের মূল কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ যুদ্ধের কারণে নতুন কার্যাদেশ পায়নি বাংলাদেশের বেশিরভাগ পোশাক কারখানা।

কাজ না থাকার পাশাপাশি শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ঈদের পর বন্ধ হয়ে যায় আশুলিয়ার ডি কে নিটওয়্যার। একই কারণে বন্ধ হয় গাজীপুরে অবস্থিত ক্রসলাইন ফ্যাক্টরি। আর ঈদের আগে ডি কে নিটওয়্যার কোম্পানিতে শমিক অসন্তোষ দানা বাধে। এমডির কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি গত ২ মে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ঈদের আগে বেশকিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে কারখানাগুলোতে শ্রমিকরা আন্দোলন করেন। এমনকি ভাঙচুরও করেন তারা। একে তো অর্ডার নেই, অন্যদিকে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে সমস্যা হলে আন্দোলন। এসব কারণে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ঈদের পর দুটি কারখানা বন্ধ হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত কার্যাদেশ নেই। এটাই মূল কারণ। আরেকটি কারণ শ্রমিক অসন্তোষ।’

তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যে আরও কয়েকটি কারখানা বন্ধ হবে। তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জের একটি কারখানা রয়েছে। সেখানেও শ্রমিক অসন্তোষ ছিল।’

নতুন করে অর্ডার না পাওয়ায় কারখানা বন্ধ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম। তিনি দাবি করেন, গত তিন মাস ধরে নতুন করে অর্ডার নেই। এ কারণে কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন মালিকরা।

তিনি বলেন, ‘এখন অর্ডার অনেক কম। অর্ডার সংকটের কারণে এবারের ঈদে ১২ দিন পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়। আগে ঈদে যেখানে তিন দিন ছুটি দেওয়া যেত না, দম বের হয়ে যেত; সেখানে এবার ১২ দিন ছুটি, ভাবা যায়।’

বাংলাদেশ শিল্প পুলিশের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ অর্থাৎ প্রথম তিন মাসে দেশের মোট ৯৭টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এগুলো বন্ধ হওয়ার কারণে ২০ হাজার ২৭৬ শ্রমিক চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ১৭টি কারখানায় ছয় হাজার ৬৪৭ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বিকেএমইএর সাত কারখানায় এক হাজার ৪৮৬ জন, বিটিএমইএর তিন কারখানায় দুই হাজার ৮৭ জন, বেপজা’র দুই কারখানায় দুই হাজার ৪৫ জন এবং অন্যান্য ৬৮টি কারখানায় আরও আট হাজার ৩২ শ্রমিক বেকার হয়েছেন।

এপ্রিলে খুলনা ও সিলেট এলাকার আরও ১৮৯টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বেকার হয়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক। সবমিলিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে প্রায় ৩০০ কারখানা বন্ধ হয়েছে। এসব কারখানায় কর্মরত ২৫ থেকে ৩০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সদস্যভুক্তসহ রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোর ক্ষেত্রে খুব একটা সমস্যা হবে না। এগুলো কোনো না কোনোভাবে টিকে যাবে। হয়তো মালিকানা পরিবর্তন হবে কিংবা অন্য কোনো কোম্পানির অর্ডার নিয়ে কাজ করবে। সমস্যায় পড়বে গত চার মাসে খুলনা ও সিলেট অঞ্চলের যেসব কারখানা বন্ধ হয়েছে। এসব কারখানা এবং এখানে কর্মরত শ্রমিকদের বিষয়ে ভাবতে হবে। কারণ, সরকার রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনকারী কারখানার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। বঞ্চিত করা হয়েছে ছোট ছোট কারখানাগুলোকে। করোনার প্রকোপ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যে সংকট দেখা দিয়েছে তা মোকাবিলায় এসব কারখানার ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোতে অর্ডার কমেছে ঠিক, খুব বেশি কমেছে- এটা বলা যাবে না। কারণ, এখনও তাদের রপ্তানি গ্রোথ ভালো। তবে, গ্যাসের সংকট কিছুটা ছিল। এ সংকটও কাটিয়ে উঠছে। নতুন করে এলএনজি আমদানি হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সারাদেশে ৫১০টি শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে আশুলিয়া এলাকায় ৯৬টি, গাজীপুরে ১৫৭টি, চট্টগ্রামে ৮০টি, নারায়ণগঞ্জে ২০টি, ময়মনসিংহে ছয়টি এবং খুলনায় বন্ধ হয় ১৫১টি কারখানা।

(ঢাকাটাইমস/১৪মে/আরআর/আরকেএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :