ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে কাঁচা পেঁয়াজ

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ মে ২০২৩, ১৩:০৩ | প্রকাশিত : ১৬ মে ২০২৩, ০৯:৫০

বর্তমানে ডায়াবেটিস মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। ডায়াবেটিসের শিকারের সমস্যা ক্রমশই বাড়ছে। দেখা যাবে যে আমাদের আশপাশেরই কারো না কারো ডায়াবেটিস আছে। কায়িক পরিশ্রম কম করা, নিয়মহীন জীবনযাপনের কারণে নীরবে শরীরে বাসা বাঁধে ডায়াবেটিস। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেছে মানেই খাওয়া-দাওয়ায় লাগাম টানতে হয়।

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ হলে অগ্ন্যাশয় যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, শরীরে উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়। রক্তে চিনি বা শর্করার উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। ইনসুলিনের ঘাটতিই হলো ডায়াবেটিস রোগের মূল কথা। টাইপ-২ বহুমূত্র রোগের পেছনে থাকে মূলত ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। টাইপ-২ রোগীর শরীরে যে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়, একে ব্যবহার করতে পারে না। চিকিৎসকদের পরামর্শ হচ্ছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে জীবনধারায় আগে থেকেই পরিবর্তন আনতে হবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ বা ইঞ্জেশন তো আছেই। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী একটি হাতিয়ার হতে পারে কাঁচা পেঁয়াজ।

‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’-এ প্রকাশিত একটি তথ্যে বলা হয়েছে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা যদি টানা চার সপ্তাহ খাবারের সঙ্গে নানা ভাবে কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পারেন, তা হলে রক্তে ফাস্টিং সুগারের মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। অন্য একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, নিয়মিত কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে কারও কারও ক্ষেত্রে টাইপ ১ ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কীভাবে সাহায্য করে পেঁয়াজ?

পেঁয়াজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেঁয়াজ বেশ কার্যকরী। পেঁয়াজে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ডায়াবিটিস কমানোর পাশাপাশি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

পেঁয়াজে শর্করার পরিমাণ কম। ফলে ডায়াবেটিস হলে অনায়াসে পেঁয়াজ খেতে পারেন। ডায়াবেটিস থাকলে চিকিৎসকরা কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খেতে বারণ করেন। পেঁয়াজেও কার্বোহাইড্রেট একেবারে নেই বললেই চলে।

যেসব খাবারে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) বেশি, ডায়াবেটিস থাকলে তা খাওয়া যায় না। পেঁয়াজে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স একেবারে কম। ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকলেও, পেঁয়াজ তা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।

এছা়ড়া, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর পেঁয়াজ হার্ট ভালো রাখতেও সক্ষম। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। শুধু তা-ই নয়, সেখানে বলা হয়েছে, আট সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম পেঁয়াজ খেলে ওষুধ ছাড়াই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার যেসব স্বাস্থ্যকর দিক রয়েছে

সংক্রমণের ঝুঁকি কমে

গরমকাল মানেই সংক্রমণের ভয়। নানা ধরনের ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যায়। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, গরমে বিভিন্ন সংক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকতে পেঁয়াজ খাওয়া জরুরি। প্রতি দিন অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম পেঁয়াজ খাওয়ার পরামর্শ দেন তাঁরা।

শরীর ঠান্ডা রাখতে

এই মরসুমে শরীর অত্যধিক গরম হয়ে যায়। পেটগরমের হাত ধরে গ্যাস, অম্বল, বদহজম লেগেই থাকে। অনেকেই জানেন না, কাঁচা পেঁয়াজ পেট ঠান্ডা রাখে। গ্রীষ্মকালীন অস্বস্তি দূর করতেও পেঁয়াজের জুড়ি মেলা ভার।

গরমে ত্বকের যত্নে

গরমকালে ত্বকে র‌্যাশ, রোদে পুড়ে কালচে দাগছোপ পড়া, ট্যানের মতো বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। পেঁয়াজের রসে রয়েছে এই সমস্যার চটজলদি সমাধান। রোদ থেকে ফিরে পেঁয়াজের রসে তুলো ভিজিয়ে সারা মুখে বুলিয়ে নিতে পারেন। দারুণ উপকার পাবেন।

প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে

পেঁয়াজের অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। যে কোনও ধরনের সংক্রমণের মোকাবিলা করে। পেঁয়াজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সালফার, ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি-নাইন ও ভিটামিন সি। ফ্যাট, কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকায় প্রতি দিনের খাদ্যতালিকায় পেঁয়াজ থাকলে জ্বর, ঠান্ডা লাগা, গলা ব্যথার সমস্যাও কম হয়।

জৈব সালফার থাকে বলে পেঁয়াজের গন্ধ খানিকটা উগ্র ধরনের হয়। তবে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে পেঁয়াজ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এর ফলে হৃদরোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও অনেকটা কমে যায়।

পেঁয়াজের মধ্যে ভিটামিন সি, ভিটামিন সিক্স, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এই উপাদানগুলো শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ভীষণভাবে জরুরি। নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে স্নায়ুর রোগের ঝুঁকিও কমে।

(ঢাকাটাইমস/১৬ মে /আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :