ওজন ঝরাতে সুপারফুড চিয়া বীজের ম্যাজিক

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ মে ২০২৩, ০৯:৩২

শরীরে ওজন বেশি থাকলে একাধিক জটিল অসুখ পিছু নিতে পারে। ওজন কমিয়ে নেওয়ার পক্ষেই বারবার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই কাজে আপনার হাতিয়ার হতে পারে চিয়া সিড। চিয়া বীজের জাদুতেই মেদের ‘কাম তামাম’ হয় বলে প্রমাণিত হয়েছে বিভিন্ন গবেষণায়।

প্রাচীনকাল থেকে চিয়া সিড মানুষের রসনা তৃপ্ত করে আসছে। অ্যাজটেক এবং মায়ান সভ্যতার সময়ে চিয়া সিড খাবার প্রচলন ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। ক্ষুধা মেটানোর পাশাপাশি চিয়া সিড রূপচর্চা করতে ব্যবহার করা হতো। এর অনেক ঔষধিগুণ আছে বলে বিশ্বাস করত অ্যাজটেক ও মায়ান আদিবাসীরা। সে কারণে সাধারণ অসুখে চিয়া সিড খাবার প্রচলন ছিল তাদের মধ্যে।

শরীরের ওজন বেশি থাকলে দেহের বিপাক ক্রিয়ার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে একাধিক জটিল থেকে জটিলতর অসুখ পিছু নেয়। তালিকায় রয়েছে সুগার, কোলেস্টেরল, হাই প্রেশার, হার্টের অসুখ, স্ট্রোক ও ক্যানসারের মতো মারণ রোগ। তাই ওজন কমিয়ে ফেলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

প্রসঙ্গত, ওবেসিটি থেকে মুক্তি পেতে চাইলে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার উপর সতর্ক চোখ রাখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে যেমন কী খাচ্ছেন, কতটা খাচ্ছেন- এই সবের হিসেব রাখতে হবে, ঠিক তেমনই দিনে অন্তত পক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম হল মাস্ট।

তবে এসবের পাশাপাশি চিয়ার বীজকে ওয়েট লস জার্নির সঙ্গী করে নিন। এর মাধ্যমে শরীরে পৌঁছে যাবে জরুরি কিছু ভিটামিন ও খনিজ। এমনকী ওজন কমবে দ্রুত গতিতে।

চিয়া সিড পুষ্টিকর খাবার। এতে আছে দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি, পালংশাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি আয়রন, কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম, মুরগির ডিম থেকে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন, স্যামন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩।

চিয়া হচ্ছে সালভিয়া হিসপানিকা নামক মিন্ট প্রজাতির উদ্ভিদের বীজ। এটি মূলত মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোর মরুভূমি অঞ্চলে বেশি জন্মায়। প্রাচীন অ্যাজটেক জাতির খাদ্য তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করে থাকেন। এগুলো দেখতে অনেকটা তোকমা দানার মতো। চিয়া বীজ সাদা ও কালো রঙের এবং তিলের মতো ছোট আকারের।

বীজ জাতীয় যেকোনো খাবারই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। চিয়া সিডকে বলা হয় সুপারফুড। এতে আছে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক এসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ।

চিয়া সিডে রয়েছে পুষ্টির ভাণ্ডার। ১০০ গ্রাম চিয়ার বীজে আছে প্রায় ১৬.৫ গ্রাম প্রোটিন, ৩৪.৪ গ্রাম ডায়েটরি ফাইবার, ৭.৭ মিলিগ্রাম আয়রন এবং ৩৩৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম। এছাড়া এতে উপস্থিত থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস। এই ফ্যাটি অ্যাসিডস কিন্তু শরীরের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া এতে উপস্থিত অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির প্রকোপ থেকে বাঁচাতে পারে। তাই নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতেই শরীর সুস্থ-সবল থাকবে।

শরীরের ওজন কমাতে সিদ্ধহস্ত চিয়ার বীজ। ওজন কমাতে চাইলে আপনার হাতের হাতিয়ার হতে পারে চিয়া বীজ। চিয়া বীজে রয়েছে ফাইবারের ভাণ্ডার। এই ফাইবার কিন্তু দেহে বিপাকের হার বাড়িয়ে দেয়। আর বিপাকের হারের গতিবিধি বৃদ্ধি পেলেই ফ্যাট দ্রুত গলে যায়।

​চিয়া বীজে থাকা প্রোটিন ও ফাইবারের মেলবন্ধনে খিদে কমে। এমনকী পেট ভরা থাকার অনুভূতি মেলে। তাই চটজলদি গোটা শরীরের ওজন কমে যায়।

পুষ্টিবিদরা জানান, চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করতে কাজ করে। দিনে দুই চা চামচ চিয়া সিড শরীরের শক্তি দেয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায়।

প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় চিয়া সিড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে। মেটাবলিক সিস্টেমকে উন্নত করার মাধ্যমে এটি ওজন কমাতে সহায়তা করে। এটি রক্তে চিনির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে বলে ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমে।

হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় চিয়া সিড দারুণ কাজ করে। কারণ এতে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। চিয়া সিড কোলন পরিষ্কার রাখতে কাজ করে বলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।

চিয়া সিড ভালো ঘুম হতেও সাহায্য করে বলে বিশ্বাস করেন চিকিৎসকরা। শুধু কি তাই! হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা কমায়। সুন্দর রাখে ত্বক, চুল ও নখ।

চিয়ে সিডে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার। এই সকল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিন্তু দেহের একাধিক উপকার করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, চিয়া সিড নিয়মিত খেলে পেটের সমস্যার সমাধান করা যায়। এমনকী দেহ থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বা টক্সিন বের করে দেওয়ার কাজেও এর জুড়ি মেলা ভার। আর এতে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস হার্টকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। তাই নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে জানালেন বিশেষজ্ঞরা।

চিয়া বীজ যেভাবে খাবেন

সারারাত একগ্লাস পানিতে বা দুধে চিয়া সিড ভিজিয়ে রাখুন। সকালবেলায় উঠে খালি পেটে চিয়ার বীজ শুদ্ধ পানি বা দুধ খেয়ে নিন। এর মাধ্যমে খনিজ, ভিটামিন, ওমেগা থ্রি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি মেটে। তাই শরীর সুস্থ সবল থাকার সুযোগ পায়। এছাড়া পানিতে বা দুধে চিয়ার বীজ মিশিয়ে খাওয়ার কারণে দেহে ডিহাইড্রেশন বা জলের ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কাও কয়েকগুণ কমে। তাই রোজ সকালে উঠে চিয়া সিড ভেজানো দুধ বা জল খেতে ভুলবেন না যেন! তবে কারও ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকলে দুধ খাবেন না। এতে সমস্যা বাড়বে।

চিয়ার বীজকে সঙ্গী করেই সুন্দর একটা ব্রেকফাস্ট মিল তৈরি করে ফেলতে পারেন। এক্ষেত্রে সারারাত দুধে ভেজানো চিয়ার সঙ্গে আমন্ড বা ওয়ালনাট মিশিয়ে নিন। পকেটে সইলে এরসঙ্গে কয়েকটি ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি বা নিদেনপক্ষে কলা মিশিয়ে নিতে পারেন। এর মাধ্যমেই তৈরি হয়ে গেল একটা সুপার মিল। এই মিল খেলে একাধিক রোগ-ব্যাধি কাছে আসতে ভয় পাবে।

(ঢাকাটাইমস/২৫ মে /আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

কিডনি রোগ বাড়ছে শিশুদেরও! যেসব লক্ষণ দেখলেই সতর্কতা জরুরি

সস্তার পেয়ারার গুণে বশে থাকে ডায়াবেটিস-উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :