ফরিদপুরে খেয়া ভাড়া পাঁচ গুণ বেশি নিচ্ছে ইজারাদাররা

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ মে ২০২৩, ১২:১২ | প্রকাশিত : ২৭ মে ২০২৩, ১০:১২

পদ্মা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলে অবস্থিত ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ও ডিক্রিরচর ইউনিয়ন। সেখানে খেয়া পারাপারের জন্য নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে।

এ অঞ্চলের মানুষের শহরের যাতায়াতের একমাত্র বাহন ঘোড়ার গাড়ি, মোটরসাইকেল ও নৌকা। এই তিনটি বাহনের মাধ্যমে তাদের ফরিদপুর শহরের দৈনন্দিন কাজের জন্য আসা-যাওয়া করতে হয়। ১০-১২ কিলোমিটার দূরত্বের এই পথ দিয়ে শহরে আসতে একজনকে কয়েক ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকলে জেলা শহর থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়।

জানা গেছে, গত কয়েক মাস যাবত ফরিদপুরের পদ্মার বিভিন্ন চর এলাকায় ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে নদী পারে চরবাসীদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে অনেক বেশি। জনপ্রতি সরকার নির্ধারিত ১০ টাকা হারে ভাড়া আদায়ের শর্ত থাকলেও নামছে না কেউ। গত কয়েক বছর এই দাম বাড়তে বাড়তে এখন ৫০ টাকায় ঠেকেছে। সেখানে ২২টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে আধাঘণ্টা পরপর যাতায়াত চলে।

পদ্মা নদী বেষ্টিত ফরিদপুর জেলার অনেক এলাকায় চর জেগেছে। জেগে উঠা চরে বসবাস করছেন কয়েক হাজার পরিবার। জেলার সদর উপজেলার সিএন্ডবি নদী বন্দরে পাশ থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে বিভিন্ন প্রয়োজনে শহরে আসা-যাওয়া করতে হয় তাদের। টেপুরাকান্দি ও ধলার মোড় নামের দুটি খেয়া ঘাট থেকে নর্থ চ্যানেল ও ডিক্রিরচর ইউনিয়নের যাতায়াতসহ মালামাল পরিবহন করে থাকেন চরাঞ্চলের বসবাস করা সাধারণ মানুষ।

কবিরপুর চর থেকে আসা রাকিব-লাভলী দম্পতি ঢাকাটাইমসকে জানান, সরকার নির্ধারিত ভাড়া ১০ টাকা হলেও নেওয়া হতো ২০ থেকে ৩০ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা করে।

পদ্মা বেষ্টিত এই চরগুলোতে বসবাসকারী একজন মানুষকে শহরের নিত্য প্রয়োজনে আসা-যাওয়া করতে হলে বাড়ি থেকে বের হয়ে ঘোড়ার গাড়ি, মোটারসাইকেল, নৌকা ভাড়া, অটোভাড়া দিতে আসা-যাওয়ার জন্য গুনতে হয় সাড়ে ৩শ টাকার বেশি। মাত্র ১০-১২ কিলোমিটার এই যাত্রা পথের জন্য এমন অধিক ভাড়া দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চরের মানুষ।

পদ্মার ৩৮ দাগের বাসিন্দা গফুর শেখ। তিনি গবাদিপশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিদিন তাকে দুধ বিক্রি করতে শহরের যেতে হয়। তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, দুধ বেচে যা পাই তার অধের্কের মতো চলে যায় যাতায়াতে। আগে এমন হতো না, ১০ টাকায় নাও (নৌকা) পারাপার হতাম। চরের মানুষের এই সমস্যার বিষয়টি সরকারের দেখা উচিত।

এক স্কুল শিক্ষক জানান, চরাঞ্চলে যারা বসবাস করেন তারা স্বল্প আয়ের মানুষ, নিজেদের পণ্য বা স্বাস্থ্য সেবা নিতে শহরের যাতায়াতের জন্য এত অধিক ভাড়া তাদের ওপর জুলুম। সরকারের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার।

ফরিদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন ঢালী ঢাকাটাইমসকে জানান, শহরতলীর পদ্মা নদীর সিএন্ডবি বন্দরের টেপুরাকান্দি ও ধলার মোড় ঘাটে ইঞ্জিনচালিত নৌযানে সরকার নির্ধারিত একমুখী ভাড়া প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ ১০ টাকা, গরু ৫০ টাকা, ছাগল ১০ টাকা, মালামাল পরিবহন প্রতিমণ ২ টাকা মূল্য হারে ইজারার টেন্ডারে অংশ নিয়ে ঘাট দুটি ইজারা পান মো. ফজল মোল্লা ও শেখ আমানত।

নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফাজেল হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, সদর উপজেলার এই ঘাট দুটিতে সরকার নির্ধারিত নৌকা ভাড়ার চার্ট না থাকায় ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। নৌপথের যাত্রী, মালামাল, গরু-ছাগলসহ কোন পণ্যের টোল বা ভাড়া কত টাকা তার একটি মূল্য তালিকা টাঙানোর দাবি এখানকার মানুষের ।

পদ্মার খেয়া ঘাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি রুবেল মীর ঢাকাটাইমসকে বলেন, অধিক মূল্যে ইজারা নেওয়া, তেল, মবিল, মজুরিসহ সকল জিনিসের দাম বেড়েছে। তাই ভাড়া বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।

আরও পড়ুন: বরাদ্দ পেলেই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ছুটে যান ইউএনও

জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ঘাটে যাত্রীদের যাতায়াত ভাড়া বেশি নেওয়া ও কোন ধরনের ভাড়া বা টোল নির্ধারণের চার্ট না থাকায় দ্রুত সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায়সহ ঘাট এলাকায় টোল চার্ট টাঙানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইজারায় উল্লেখিত শর্ত ভঙ্গ করলে তাদের ইজারা বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৭মে/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :