ক্যারিয়ারের দুই যুগ: পেছনের দিনগুলো মনে রেখে এগিয়ে যেতে চান শাকিব খান

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ মে ২০২৩, ১৫:১৫

আজ থেকে ঠিক ২৪ বছর আগের কথা। এদিন নিজের নাম বদলে স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রেখেছিলেন গোপালগঞ্জের মাসুদ রানা । সেই সিঁড়ি বেয়ে আজ তিনি দেশের অন্যতম শীর্ষ সিনে তারকা শাকিব খান। ভক্তরা যাকে ডাকেন ‘কিং খান’ নামে।

আজ যখন নায়কের ক্যারিয়ারের বয়স ২৪ বছর পূর্ণ হলো, এদিনও এ নায়ক সিনেমার শুটিং সেটেই রয়েছেন। বলেন, ‘এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী থাকতে পারে একজন অভিনেতার জীবনে। চলচ্চিত্রের মানুষ হিসেবে অবশ্যই আনন্দিত। চলচ্চিত্রের প্রতিটি মানুষ, আমার দর্শক, ভক্ত, সাংবাদিক সবার কাছে অনেক কৃতজ্ঞতা। তাদের সবার জন্য আজকের আমি। আসলে মানুষের ভালোবাসার ওপর আর কিছু নাই। পেছন দিকে তাকিয়ে অনেক কিছু দেখতে পাই। কিন্তু পেছনের দিনগুলো মনে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। এই যে আজও শুটিং করছি, ব্যস্ত রয়েছি সিনেমার জন্য।’

১৯৯৯ সালে শাকিব খান প্রথম চুক্তিবদ্ধ হন ‘সবাই তো সুখী হতে চায়’ চলচ্চিত্রে। আফতাব খান টুলু পরিচালিত এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। এতে তার বিপরীতে ছিলেন কারিশমা শেখ। তবে ‘অনন্ত ভালোবাসা’ তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র। ১৯৯৯ সালের ২৮ মে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।

‘অনন্ত ভালোবাসা’ পরিচালনা করেন সোহানুর রহমান সোহান। সেই ছবিতে শাকিবের বিপরীতে ছিলেন চিত্রনায়িকা মৌসুমীর ছোটবোন ইরিন জামান। দুজনেরই অভিষেক চলচ্চিত্র হিসাবে স্মরণীয় হয়ে আছে ‘অনন্ত ভালোবাসা’। ছবিটি ব্যাবসায়িকভাবে সফল হয় এবং নায়ক হিসেবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শাকিব খান।

অভিনয় জীবনের দ্বিতীয় বছরেই সে সময়ের শীর্ষ অভিনেত্রী শাবনূরের বিপরীতে ইস্পাহানী-আরিফ জাহান পরিচালিত গোলাম (২০০০) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আলোচিত হন শাকিব খান। সে বছর তিনি এজে রানা পরিচালিত ‘আজকের দাপট’ চলচ্চিত্রে পূর্ণিমার বিপরীতে, আবু সাঈদ খান পরিচালিত ‘দুজন দুজনার’ চলচ্চিত্রে পপির বিপরীতে এবং দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘বিষে ভরা নাগিন’ চলচ্চিত্রে মুনমুনের বিপরীতে প্রথম অভিনয় করেন।

২০০১ সালে মুক্তি পায় শাকিব খান অভিনীত ‘শিকারি’, ‘স্বপ্নের বাসর’, ‘মায়ের জেহাদ’, ‘রাঙ্গা মাস্তান’, ‘হিংসার পতন’, ‘বন্ধু যখন শত্রু’ চলচ্চিত্রগুলো। এফ আই মানিক পরিচালিত ‘স্বপ্নের বাসর’ চলচ্চিত্রে রিয়াজ ও শাবনূরের পাশাপাশি তার অভিনয়ও প্রশংসিত হয়।

২০০২ সালে মুক্তি পায় এফ আই মানিক পরিচালিত ‘ফুল নেব না অশ্রু নেব’ ও ‘স্ত্রীর মর্যাদা’, শাহাদাত হোসেন লিটন পরিচালিত ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, ‘জিল্লুর রহমানের ‘নাচনেওয়ালী’ এবং বাদল খন্দকারের ‘বিশ্ব বাটপার’। স্ত্রীর মর্যাদা চলচ্চিত্রটিতে শাকিব খান প্রথম মৌসুমীর সহশিল্পী হিসেবে একই ছবিতে অভিনয় করেন।

২০০৩ সালে অভিনয় করেন ‘সাহসী মানুষ চাই’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘ক্ষমতার দাপট’ ও ‘সবার উপরে প্রেম’ চলচ্চিত্রে। ওই বছর তার অভিনীত মহম্মদ হান্নান পরিচালিত ‘সাহসী মানুষ চাই’ চলচ্চিত্রটি বেশ প্রশংসিত হয় এবং দুটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। ২০০৪ সালে শাকিব অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ‘নয়ন ভরা জল’, ‘আজকের সমাজ’, ‘বস্তির রানী সুরিয়া’, ‘রুখে দাঁড়াও’ উল্লেখযোগ্য।

২০০৫ সালে মুক্তি পায় শাকিব খান অভিনীত এমএ রহিম পরিচালিত ‘সিটি টেরর’। এ চলচ্চিত্রে তিনি অভিনেতা মান্নার সঙ্গে অভিনয় করেন। এছাড়া শাহীন-সুমন পরিচালিত ‘বাধা’ চলচ্চিত্রে রিয়াজ ও পূর্ণিমার সঙ্গে অভিনয় করেন।

২০০৬ সালে শাকিব খান অভিনীত ১৩টি চলচ্চিত্র মুক্তি পায় এবং সেগুলো সে বছরের সেরা ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ছিল। এই সাফল্যের ফলে তার পারিশ্রমিক তিন লাখ থেকে ছয়-সাত লাখে উত্তীর্ণ হয়। তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প ‘সুভা’ অবলম্বনে নির্মিত চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘সুভা’ চলচ্চিত্রে পূর্ণিমার বিপরীতে অভিনয় করেন। এ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ২০০৭ সালে প্রদত্ত লাক্স-চ্যানেল আই পারফরম্যান্স পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে দর্শক জরিপ ও সমালোচক উভয় শাখায় মনোনীত হন।

একই বছর মুক্তি পায় এফ আই মানিক পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’, ‘পিতার আসন’, ‘দাদীমা’ ও ‘চাচ্চু’, ‘ঢাকার পোলা বরিশাইল্যা মাইয়া’ এবং দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত ‘মায়ের মর্যাদা’। ‘কোটি টাকার কাবিন’ চলচ্চিত্রটিতে তিনি প্রথম অপু বিশ্বাসের বিপরীতে অভিনয় করেন। ‘চাচ্চু’ চলচ্চিত্র দিয়ে শাকিব খান প্রথম জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

পরবর্তী বছরগুলোয় তিনি ‘আমার প্রাণের স্বামী’, ‘কাবিননামা’, ‘যমজ’, ‘স্বামীর সংসার’, ‘ডাক্তার বাড়ি’, ‘তুই যদি আমার হইতি রে’, ‘কথা দাও সাথী হবে’, ‘দানব সন্তান’, ‘কপাল’, ‘মা আমার স্বর্গ’, ‘কঠিন প্রেম’ ও ‘এক বুক জ্বালা’, ‘তোমাকে বউ বানাব’, ‘আমার জান আমার প্রাণ’, ‘সমাধি’, ‘১ টাকার বউ’, ‘ভালোবাসার দুশমন’, ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’, ‘টিপ টিপ বৃষ্টি’, ‘তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা’, ‘আমাদের ছোট সাহেব’, ‘সন্তান আমার অহংকার’, ‘যদি বউ সাজো গো’, ‘মনে প্রাণে আছ তুমি’, ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’, ‘স্বামী স্ত্রীর ওয়াদা’, ‘ভালোবাসা দিবি কিনা বল’, ‘মন যেখানে হৃদয় সেখানে’, ‘বলো না কবুল’, ‘বিয়ের প্রস্তাব’, জন্ম তোমার জন্য, প্রেম কয়েদি, সাহেব নামের গোলাম, ও সাথী রে ও সবার উপরে তুমি, বলো না তুমি আমার, প্রেম মানে না বাধা, টপ হিরো, পরাণ যায় জ্বলিয়া রে, ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না, টাকার চেয়ে প্রেম বড়, জীবন মরণের সাথী, প্রেমে পড়েছি, চেহারা, ভন্ড-২, প্রেমিক পুরুষ, হায় প্রেম হায় ভালোবাসা, নাম্বার ওয়ান শাকিব খান, চাচ্চু আমার চাচ্চু, ও নিঃশ্বাস আমার তুমিসহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

২০২০ সালের শুরুতে শাকিব অভিনীত বীর ও শাহেনশাহ শিরোনামের দুটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। বীর পরিচালনা করেছেন জনপ্রিয় পরিচালক কাজী হায়াৎ, এতে প্রথমবারের মতো কাজী হায়াতের পরিচালনায় অভিনয় করেন তিনি। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছেন খান নিজে। এটি তার তৃতীয় প্রযোজিত চলচ্চিত্র এর আগে ২০১৪ সালে হিরো: দ্যা সুপারস্টার ও ২০১৯ সালে পাসওয়ার্ড শিরোনামের দুটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রটির কাহিনী, সংলাপ ও শাকিব খানের অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করে।

শাহেনশাহ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন তরুণ পরিচালক শামীম আহমেদ রনি। এতে তার বিপরীতে প্রথমবারের মতো অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া ও রোদেলা জান্নাত। বেশ কয়েকবার মুক্তি তারিখ ঠিক করেও পরবর্তীতে মুক্তি না দেয়ায় চলচ্চিত্রটিকে সমালোচনার মুখোমুখি পড়তে হয়।

২০২১ সালে তার কয়েকটি চলচ্চিত্র মুক্তির কথা থাকলেও বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারীর কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়।

২০২২ সালের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় তার বিদ্রোহী ও গলুই সিনেমা। শাহীন সুমন পরিচালিত বিদ্রোহীতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন শবনম বুবলি ও অভিষিক্ত সুচিস্মিতা মৃদুলা। চলচ্চিত্রটিতে খান পারিশ্রমিক ৬০ লাখ টাকা নেন, যা তাকে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। অন্যদিকে সেবছর এসএ হক অলিক পরিচালিত গলুইয়ে লালু চরিত্রে একজন ঢোলি (ঢোল বাদক) হিসাবে অভিনয় করেন শাকিব। যেখানে প্রথমবারের তার বিপরীতে অভিনয় করেন পূজা চেরি।

২০২৩ সালে মুক্তি পায় তপু খানের পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র রাজনৈতিক–মসলাদার লিডার: আমিই বাংলাদেশ, যেখানে তিনি একজন স্বাধীনচেতা যুবক হিসাবে অভিনয় করেন। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন শবনম বুবলি। চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর দর্শক-সমালোচকদের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায় এবং বক্স অফিসে সুপারহিটের তকমা পায়।

ঢাকাই সিনেমার শীর্ষে থাকা এ অভিনেতা তার দক্ষ অভিনয়গুণে পেয়েছেন চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তার জনপ্রিয়তা এখন শুধু দেশেই আটকে নেই, দক্ষ অভিনয়শৈলী দিয়ে টালিউডেও দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন গুড লুকিংয়ের এ অভিনেতা।

অভিনয়জীবনে সফল হলেও ব্যক্তিজীবনে শাকিব কিছুটা সমালোচিত। অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস ও শবনম বুবলির সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্কে জড়ালেও শেষ পর্যন্ত কোনো সম্পর্কই তার টেকেনি। সম্পর্ক না টিকলেও বাবা হিসেবে দুই সন্তানকেই ভালোবাসেন কিং খান।

(ঢাকাটাইমস/২৮মে/এলএম/এজে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :