বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ মে ২০২৩, ২১:৪৯

বিশ্বজুড়ে জ্বালানির সংকট চলছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে বড় ধরনের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। নানা পরিস্থিতি বিবেচনায় দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই সরকারের।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, নির্বাচনের আগে সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায় না। এসময় চলমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট নিয়ে তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

সোমবার বিদ্যুৎ ভবনে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানিতে ভিন্ন পরিমাণের ডিউটি রয়েছে। এই ডিউটি ইউনিক করার প্রস্তাবনা রয়েছে। নতুন অর্থ বছরের বাজেটে জ্বালানির উপর ডিউটি কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কোভিডের কারনে বিশ্বজুড়ে জ্বালানির সংকট চলছে, আমরাও এই সংকটের বাইরে না। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশও চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যে কয়লার দাম ৬০ ডলার ছিল সেগুলো এখন ৪০০ ডলার, তেলে দাম বেড়ে গেলে ৬০ থেকে ৭০ ডলার, স্পর্ট মার্কেটে গ্যাসের দাম বেড়ে গেলো। আমরা বড় ধরনের ভর্তুকি দিয়ে এসেছি, টার্গেড মূলক ভর্তুকি দিয়ে এসেছি, নিম্ন আয়ের লোকজন যেনো আক্রান্ত না হয়। বর্তমানে এসে নানা পরিস্থিতি বিবেচনায় দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ শুধু আমাদের একার না, অনেক ধনি দেশও রয়েছে। তারাও লোডশেডিং করেছে।

ভর্তুকির ব্যাপারে তিনি বলেন, গণহারে ভর্তুকি না দিয়ে যেসব খাতে ভর্তুকি দরকার, সরকার সেখানে ভর্তুকি দেবে। নির্বাচনের আগে নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। আগামী বাজেটে এ খাতের ওপর কর কমানো যায় কি না সেটিও বিবেচনা করা হচ্ছে।

সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর বকেয়া দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের আগে এর একটি বিহিতের জন্য প্রতিমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছেন বিতরণ কোম্পানির প্রতিনিধিরা।

তিনি বলেন, এমন না যে পাওনা টাকা পরিশোধ করা হবে না। সবার টাকা দেয়া হবে। আমাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে। করোনার পরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।

নসরুল হামিদ বলেন, ৫টি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দিয়েছিলাম, তারা আসতে পারেনি, বাধ্য হয়ে বেশি খরচের তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেশি চালাতে হয়েছে।

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ধীরগতির অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, বছরে ১০ টি কূপ খনন করতে গেলে কমপক্ষে ২০০ মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন। আমাদের বাপেক্সের মাত্র ৩টি রিগ এগুলো দিয়ে কতদূর যাওয়া সম্ভব!

সৌর বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে বলেন, ২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করতে হলে ৬ হাজার একর জমি প্রয়োজন। জমি পাওয়াটা বড় বিষয়, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন আমরা দেখেছি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতেই ১৮০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন। ভোলায় বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে, ভোলার গ্যাস খুলনা পর্যন্ত নিতে হবে। আমাদের সামনে বড় তিনটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিরবিচ্ছিন্ন, মানসম্মত ও সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি নিশ্চিত করা। নেপালের পাওয়ার আসবে, সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ চলছে। তবে এই গ্যাস পেলে আনতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। সে কারনে আমাদের আরও এফএসআরইউ লাগবে।

পাওয়ার সেল এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমরা কিন্তু সোলারের বিষয়ে এখন খুব সিরিয়াস, এখন দিনের বেলা সোলার থেকে ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। আগামী দুই বছরের মাথায় ২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করা হবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, বছরে কমপক্ষে ১০ অনুসন্ধান কূপ খনন করা দরকার। এটি করা গেলে কমপক্ষে ৫টি গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কার করা সম্ভব। যদি ২০০ বিসিএফ করে গ্যাস পাওয়া যায় তাহলে ১ টিসিএফ, যা এক বছরের চাহিদার সমান।

বিইআরসির সাবেক সদস্য মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, বিদ্যুতের যত সমস্যা এনার্জি কেন্দ্রীক। যতদিন জ্বালানিকে গুরুত্ব দেওয়া না যাবে ততদিন এই সংকট দূর করা কঠিন। আমরা আবিস্কৃত গ্যাস ফিল্ডে উচ্চ লেভেল থাকল দূরের কথা, সর্বনিম্ন লেভেলে উত্তোলন করা হচ্ছে না। আমাদের সিলেট গ্যাস ফিল্ডের তুলনায় অনেক কম রিজার্ভ বিবিয়ানাতে, তারা অনেক বেশি গ্যাস তুলতে পারলেও আমরা কেনো অনেক কম করছি। রশিদপুর-৯ নম্বর কূপ থেকে মাত্র সাড়ে ৩ কিলোমিটার লাইনের অভাবে পড়ে রয়েছে। সেখান থেকে ১৭-২০ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। বিভিন্ন জায়গায় শুধু ঘষামাজা করলে ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব।

এফইআরবির চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, এফইআরবির ইডি রিসান নসরুল্লাহ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিপপার প্রেসিডেন্ট ফয়সাল খান।

ঢাকাটাইমস/২৯মে/আরকেএইচ/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :