কেন্দুয়ায় বেড়েছে লাম্পি রোগের প্রকোপ

কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২৩, ১৬:৫৪

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর লাম্পি রোগ (লাম্পি স্কিন ডিজিজ)। গরু ও বাছুরে এ রোগের লক্ষণ ও সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় খামারি ও কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা ও আতঙ্ক।

মূলত এক প্রকার পক্স ভাইরাস বা এলএসডি ভাইরাসের সংক্রমণে গবাদিপশুতে এই রোগ দেখা দেয় এবং এক গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। রোগের সময় প্রধানত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে অথবা বসন্তের শুরুতে যে সময়ে মশা মাছি অধিক বংশবিস্তার সেই সময়ে প্রাণঘাতী এই রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।

মঙ্গলবার রাতে উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের আশুজিয়া গ্রামের অত্যন্ত দরিদ্র জেলে সম্প্রদায়ের মনোরঞ্জন দাসের এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি গর্ভবতী গাভী, রহিছ উদ্দিনের ৬০ হাজার টাকা মূল্যের একটি ষাঁড় বাছুর, নগুয়া গ্রামের গোলাপ মিয়ার ৭০ হাজার টাকা মূল্যের একটি ষাঁড় বাছুর, বলাইশিমুল গ্রামের পিনু মিয়ার একটি বকনা বাছুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।

এ ছাড়া নিতাই দাস, আবু চানসহ বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক গরু এই রোগে আক্রান্ত হওয়ায় গরুর মালিকগণ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বলাইশিমুল গ্রামের আতিকুর রহমান চান্নু জানান, মঙ্গলবার এক রাতে এলাকার ৫টি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় দরিদ্র মানুষগুলো ভেঙ্গে পড়েছেন। এর আগেও এলাকায় এই রোগে আরো কয়েকটি গরু মারা গেছে। কয়েকটি ইউনিয়নে শতাধিক গরু আক্রান্ত বলে তিনি জানান। প্রাণী সম্পদ দপ্তরের উচিত হবে জনসচেতনতার জন্য এলাকায় মিটিং ও মাইকিং করে রোগ প্রতিরোধ কল্পে কাজ করা।

বৃহস্পতিবার কেন্দুয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে খোঁজ নিতে গেলে পাইকুড়া ইউপির বৈরাটী গ্রামের আক্রান্ত গরুর মালিক বায়েজিদ মিয়া জানান, তার ৩ লাখ টাকা মূল্যের ষাঁড় গরুটি ৫দিন ধরে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

গরুটির শরীরে জ্বর, কাঁপনি এবং চামড়ায় গুটি গুটি কি যেন দেখা দিয়েছে। তাদের এলাকায় আরও বেশ কিছু গরুর এ রোগ দেখা দিয়েছে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে কেন্দুয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ভাস্কর চন্দ্র তালুকদার বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ নামের এই রোগটি আফ্রিকার জাম্বিয়ায় দেখা দেয় ১৯২৯ সালে। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে সর্বত্র গবাদি পশুর শরীরে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে কেন্দুয়া উপজেলায় সর্বত্র এ রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে আমার এখানে প্রতিদিন গড়ে ৮/১০ টি লাম্পি স্কিন ডিজেজ নিয়ে আসা গরুর চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি ও পরামর্শ দিচ্ছি।

তিনি আর বলেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এলএসডি আক্রান্ত গরুর প্রথমে জ্বর হয় এবং খাওয়ার রুচি কমে যায়। পশুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়ায় গুটি গুটি আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এ রোগটি মূলত মশা-মাছির মাধ্যমে রোগাক্রান্ত গরু থেকে সুস্থ গরুতে ছড়ায়। এতে আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই। একটু সচেতন হলেই এই রোগ নিরাময় সম্ভব। লাম্পি স্কিন ডিজিজের (এলএসডি) মূলত সঙ্কর জাতের গরু বেশি আক্রান্ত হয়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে খামারি ও কৃষক পর্যায়ে সচেতন করতে মাঠ পর্যায়ে লিপলেট বিতরণ, সভা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের করণীয় বিষয়ে কাজ করছে। খামার ও গোয়াল ঘরের আশপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও মশা-মাছি মুক্ত রাখা এবং মশারি টানানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসা করলে ৭ থেকে ২০ দিনের মধ্যে আক্রান্ত গরু সুস্থ হয়ে যায়।

(ঢাকাটাইমস/০২জুন/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :