মসলার পাইকারি বাজার

বছরের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে অন্তত দ্বিগুণ, আদা তিনগুণ

মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ জুন ২০২৩, ১৮:১৫| আপডেট : ২৬ জুন ২০২৩, ১৯:০৮
অ- অ+

ঈদুল আজহার আগে মসলাজাতীয় পণ্যের চাহিদা বাড়ে। সঙ্গে এসব পণ্যের দামও বাড়ে। এবারও ব্যতিক্রম নয়। তবে এবার অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে। বিশেষ করে পাইকারি বাজারে জিরা ও আদার দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া রসুন, হলুদ, মরিচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচসহ অন্যান্য মসলার দামও চড়া। রবিবার পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার ও বেগম বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলছেন, শুধু বাজার মনিটরিং করেই দাম কমানো সম্ভব না। যেসব কারণে দাম বাড়ছে সেসব কারণ ধরে ধরে কাজ করতে হবে।

সরেজমিনে পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ইরানিয়ান জিরা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা কেজি দরে। আর ভারতীয় বা অন্যান্যগুলো বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকা কেজি। অথচ গত ঈদেও এই জিরার দাম ছিল ৪৫০ টাকা। আর আদার দাম একই সময়ের ব্যবধানে ১২০ থেকে বেড়ে ৩৬০ টাকা হয়েছে।

অথচ ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, ২০২২ সালের ২২ জুন প্রতি কেজি জিরা সর্বনিম্ন ৩৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর একই সময়ে আমদানি করা আদা ৬০ থেকে ১২০ এবং দেশি আদা ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থ্যাৎ বছরের ব্যবধানে আদার দাম তিন থেকে পাঁচগুণ বেড়েছে।

আমদানি করা রসুন কেজি-প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে। যেটি খুচরা দোকানে ১৮০ টাকা কেজিতে কিনতে হয়। আর দেশি রসুন পাইকারি দর কেজি-প্রতি ১২০ টাকা এবং খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। বছর খানেক আগে টিসিবির হিসাবে দেশি রসুন বিক্রি হয়েছিল ১১০ থেকে ১৪০ টাকায় এবং আমদানিকৃত রসুনের দাম ছিল কেজি প্রতি ৭০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে।

লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা কেজি। এক বছর আগে এর দাম ছিল ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। আর গত দুমাস আগেও (এপ্রিল) ১৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

দারচিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ থেকে ৫২০ টাকায়। যা এপ্রিল মাসেও বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা কেজিতে। ধনিয়া বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। যেটি গত এপ্রিল মাসেও বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা।

গত দুই মাসে এলাচের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০০ টাকার মত। মানভেদে মসলাটি বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ২৮০০ টাকা। এপ্রিল মাসেও এলাচ বিক্রি হতো ১৪০০ টাকা কেজিতে। কিচমিচ লম্বাটি বিক্রি হচ্ছে ৪১০ থেকে ৪২০ টাকা কেজি। গোল জাতেরটি বিক্রি হচ্ছে ৪৩০ থেকে ৪৪০ টাকা কেজি। আলু বোখারা বিক্রি হচ্ছে ৪৪০ থেকে ৪৬০ টাকা কেজি।

বর্তমানে দেশি হলুদের কেজি-প্রতি পাইকারি দর ২৫০ টাকা এবং খুচরা দাম ৩০০ টাকা। অন্যদিকে আমদানি করা হলুদের পাইকারি দাম ২০০ টাকা এবং খুচরা দাম ২৩০ টাকা কেজি। গত বছরের এই সময়ে দেশি হলুদের দাম ছিল ১৫০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে এবং আমদানি করা হলুদের দাম ছিল আরও কম ১৬০ থেকে ২৪০ টাকার মধ্যে। এদিকে পাইকারি বাজারে আমদানি করা লাল মরিচ ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা কেজি দরে এবং খুচরা বাজারে লাল মরিচ ৪৫০ থেকে ৪৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে দেশি মরিচের পাইকারি দর ৩৮০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৪৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক বছর আগেও দেশি শুকনা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৭০ টাকায়। অন্যদিকে আমদানি করা শুকনা মরিচের দাম পড়তো ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা।

মৌলভীবাজারের মসলা ব্যবসায়ী মেসার্স ফাহিম স্টোরের মালিক মো. ফাহিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমি বড় পাইকারদের কাছ থেকে কিনে বিক্রি করি। তারা আমার কাছ থেকে যে দাম নেয় আমিও সেই হিসেব করেই বিক্রি করি। তারা সম্প্রতি আমার কাছ থেকে বেশি দাম নিয়েছে তাই আমিও বেশি দাম বিক্রি করতে বাধ্য।

ফাহিম বলেন, তবে এবার মসলার বাজার অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আমরাও বুঝতে পারছি মানুষের কষ্ট হচ্ছে। আগে লোকজন যেখানে বেশি কিনতো এখন কমিয়ে কিনছে। আমি খুচরাও বিক্রি করি। লোকজন ১০০-২০০ গ্রাম কিনতে চাইলেও দেয়।

মৌলভীবাজারের আবাবিল মসলা ঘরের ম্যানেজার মিজানুর রহমান মিজান বলেন, আমরা ইরানি জিরা বিক্রি করছি এক হাজার টাকায়। আর অন্যান্যগুলো ৯৫০ টাকায়।

দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মিজান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারেই দাম বেড়েছে। সঙ্গে পরিবহনেও খরচ বেড়েছে। তাই দাম এতো চওড়া। এছাড়া বড় ব্যবসায়ীদেরও কিছু কারসাজি থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা শহিদুল ইসলাম ঈদের আগে কিছু মসলা কিনতে এসেছেন মৌলভীবাজারে। ঢাকা টাইমসের এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় তার। তিনি বলেন, ঢাকার যেকোনো বাজারের চেয়ে এখানে একটু কম মূল্যে মসলা পাওয়া যায়। তাই এখানে কিনতে আসলাম। কিন্তু দামের যে অবস্থা তাতে অল্প অল্প করে প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো নিচ্ছি।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের বেশিরভাগ মসলাই আমদানি করা লাগে। টাকার মান কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, আমাদের দেশে দাম বাড়ার অন্যতম একটি কারণ। এর মধ্যে কিছু ব্যবসায়ীদেরও কারসাজি আছে। তবে যে পরিমাণ বেড়েছে সে পরিমাণ বাড়া ঠিক হয়নি।

ক্যাব সভাপতি বলেন, শুধু বাজার মনিটরিং করেই দাম কমানো সম্ভব না। যেসব কারণে দাম বাড়ছে সেসব কারণ ধরে ধরে কাজ করতে হবে। আমরা ভোক্তাদের জন্য বললেও যারা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে তারাতো আমাদের কথা শুনে কাজ করছে না।

গোলাম রহমান সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাজার নিয়ন্ত্রণে সঠিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

(ঢাকাটাইমস/২৬জুন/এমএইচ/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ইসলামি এনজিওগুলোকে সামাজিক ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
‘মন হালকা হতে কুয়াকাটা গিয়েছিলেন’সেই ব্যাংক কর্মকর্তা
নাজিমগঞ্জ হাটে বিএনপির প্রচার অভিযান, নেতৃত্বে কাজী আলাউদ্দিন
হকিতে চীনকে উড়িয়ে টানা তৃতীয় জয়ে শীর্ষে বাংলাদেশ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা