রাজবাড়ীতে ১৩ দিনে ৩০ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি, নেই আলাদা ওয়ার্ড

রাজবাড়ী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৩ জুলাই ২০২৩, ১৫:৩১

চলতি জুলাই মাসের ১৩দিনে রাজবাড়ীর সদর আধুনিক হাসপাতালে ৩০ জন রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২৫ জন ভাল হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিরা হাসপাতালেই আছেন।

সারাদেশের মতো রাজবাড়ীতেও বৃদ্ধি পেয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীরা। তবে হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের সঙ্গেই রাখা হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য নেই কোনো আলাদা ওয়ার্ড।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য নেই কোনো আলাদা ওয়ার্ড। হাসপাতালে নেই কোনো ডেঙ্গু পরীক্ষা করার ব্যবস্থা। তাই বাধ্য হয়ে হাসপাতালের বাইরে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক ও বেসরকারি ক্লিনিক থেকে করাতে হয় ডেঙ্গু পরীক্ষা। এতে খরচ হয় বাড়তি টাকা।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালর তত্বাবধায়ক ডা. আব্দুল হান্নান জানান, চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত মোট ৩০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে চারজন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। বাকিদের মধ্যে কেউ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন, আবার কাউকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।

অপর দিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৫ উপজেলায় ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। এরমধ্যে রাজবাড়ী সদরে একজন, পাংশায় দুজন, বালিয়াকান্দিতে একজন, কালুখালীতে তিনজন ও গোয়ালন্দে দুজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এছাড়া অনেকে বাড়িতেও চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রথম অবস্থায় ঢাকা থেকে আসা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলেও এখন রাজবাড়ী থেকেই আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে।

সরেজমিনে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আলাদা বেডের ব্যবস্থা নেই। সাধারণ রোগীদের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মশারির ভেতরে থাকার কথা থাকলেও অনেকে মশারি ভেতর থাকছে না। ফলে সাধারণ রোগীদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়ছে। হাসপাতালে যত্রতত্র রয়েছে ময়লার স্তুপ। এছাড়া হাসপাতালের টয়লেটের অবস্থাও নাজুক।

রাজবাড়ী মেছোঘাটা এলাকার বাসিন্দা ওজিফা বেগম। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার থেকে তিনি রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে তিনতলার মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন।

তিনি বলেন, হঠাৎ শরীরে জ্বর অনুভব করি। পরে হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখালে তারা ডেঙ্গু টেস্ট করাতে বলে। ডেঙ্গু টেস্ট করলে আমার ডেঙ্গু ধরা পরে। এরপর বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ শরীরের অবস্থা বেশি খারাপ হলে ও কাশির সাথে রক্ত আসা শুরু করলে হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়। হাসপাতালের অন্যান্য রোগীদের সঙ্গেই আমাকে রাখা হয়েছে।

ওজিফা বেগমের মেয়ে উন্মেহানী বলেন, গত বুধবার থেকে মা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার কোন ব্যবস্থা নেই। প্রতিদিন বাইরে থেকে ৫০০ টাকা খরচ করে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হয়। এর সঙ্গে আরও অন্যান্য টেস্ট রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা খরচ হয়। এছাড়া হাসপাতাল থেকে প্যারাসিটামল বাদে অন্য কোনো ওষুধ দেওয়া হয় না। ফলে আমাদের মতন নিম্মবিত্তদের ডেঙ্গু পরীক্ষা ও ওষুধ কিনতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. শেখ মোহাম্মদ হান্নান বলেন, আমাদের জায়গা সংকটের কারণে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড নেই। তাই বাধ্য হয়ে অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রাখতে হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালে ডেঙ্গুর জন্য সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে এবং আজ থেকে সেটা ফ্রী করানো হচ্ছে। ডেঙ্গু টেস্ট করানোর জন্য অতিরিক্ত কিট ও আমরা অর্ডার দিয়েছি।

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটোন বলেন, জেলায় প্রথম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী আসে ঢাকা থেকে। এখন স্থানীয় ভাবেই কিছু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে, যাদের ঢাকায় যাবার কোন রেকর্ড নাই। এরমাধ্যমে বোঝা যায় রাজবাড়ী থেকেও মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গুর জন্য হাসপাতাল ও চিকিৎসকরা প্রস্তুত রয়েছেন। পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আইসিইউ সাপোর্ট রাজবাড়ীতে নেই। জেলা শহরের পাশাপাশি এখন উপজেলাও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে রোগীর সংখ্যা বেশি। এডিস মশা নিধনে সবাই সচেতন না হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।

(ঢাকাটাইমস/১৩জুলাই/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :