১৫ আগস্টের মতো হত্যাকাণ্ড যেন আর না ঘটে, এজন্য সজাগ থাকতে হবে: শিক্ষামন্ত্রী
দেশে ১৫ আগস্টের মতো হত্যাকাণ্ড যেন আর না ঘটে, এজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারী এখনও ষড়যন্ত্র করছে। কাজেই আমাদের সজাগ থাকতে হবে যেন বাংলাদেশে এমন হত্যাকাণ্ড আর হতে না পারে।
সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে নীলক্ষেতের সন্ধানী চক্ষু হাসপাতালে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, আজকে বাংলাদেশ যেখানে দাঁড়িয়ে যোগাযোগ কত সহজ। বাংলাদেশের ১৫ বছর আগে কত মানুষ না খেয়ে থাকতো। আজকে একজন মানুষও না খেয়ে থাকে না। আজকে আমাদের থাকার অবস্থা ভালো, খাওয়ার অবস্থা ভালো, চিকিৎসার অবস্থা ভালো। আমাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার অবস্থা ভালো। সমস্ত দিক থেকে দেশের অবস্থা ভালো।
দীপু মনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা সরকার পরিবর্তনের কোনো পদ্ধতি হতে পারে না। হত্যাকারীরা বঙ্গবন্ধুর তিন পুত্র, স্ত্রী, পুত্রবধূ এবং তার ভাই ও আশপাশের আত্মীয়-স্বজনদের হত্যা করেছে। এমনকি ১০ বছরের শিশু সন্তানকে হত্যা করা হলো। অর্থাৎ তারা তাকে নির্বংশ করতে চেয়েছে। শুধু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাদের ভয় ছিল না, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকেও নিয়ে তাদের ভয়।
ডা. দিপু মনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা ফিরে এসেছিলেন বলে আন্দোলন করে সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। তিনি ফিরে এসেছিলেন বলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। আজকে আমরা এত উন্নত বাংলাদেশ পেয়েছি।
এ সময় সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু, সহ-সভাপতি ডা. নীহার রঞ্জন রায়, যুগ্ম মহাসচিব ডা. মো. আলমগীর হোসেন, কোষাধ্যক্ষ ডা. মঈনউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, সদস্য অধ্যাপক ডা. দীপন কৃষ্ণ অধিকারী, কেন্দ্রীয় কাউন্সিলর ডা. কাজী আয়শা সিদ্দীকা এবং সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদের সহ-সভাপতি সিফাত খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আওয়াফ তাজওয়ার উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর নীলক্ষেতের বাবুপুরার ‘সন্ধানী চক্ষু হাসপাতাল’ সোমবার সকাল নয়টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কোন বিরতি ছাড়াই “বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা” দেয়। বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা কার্যক্রমে ১৭২ জন রোগীকে উন্নত চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন অপারেশনের উপদেশ দেয়া হয়।
ওই “বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা” কার্যক্রম উদ্বোধন করেন শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনসহ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক দেশে কর্ণিয়াজনিত অন্ধত্ব দূরীকরণে “অন্ধত্বমোচন চক্ষুদান আইন” প্রণয়ন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ধানীর জমিদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ।
এছাড়াও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি'র বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তার মধ্যে সোমবার ব্লাড ডোনেশন ও ব্লাড গ্রুপিংকরণ, মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, বিভিন্ন জোন ও ইউনিটে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল ও শাহবাগের বিসিএিস প্রশাসনিক একাডেমীতে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান অনুষ্ঠান, বুধবার বাগেরহাট জেলায় জেলা পরিষদ মিলনায়তন' এবং বৃহস্পতিবার বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার ‘শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে’ আরও দুইটি “বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা” প্রদান, ২৫ আগস্ট উত্তরা অফিসার্স ক্লাব ও রোটারী ক্লাবের যৌথ আয়োজনে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদান, ২৬ আগস্ট সাভার বেদে পল্লীতে “বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা” প্রদান এবং সিলেট জেলার সদরসহ সাতটি উপজেলায় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু সমিতি কর্তৃক নেওয়া কর্মসূচীসমূহ অবহিত করেন।
ডা. মনিলাল আইচ লিটু জানান, সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি ও সন্ধানী আন্তর্জাতিক চক্ষুব্যাংক এ পর্যন্ত ৪২ হাজার ৯৬৮ জন মরণোত্তর চক্ষুদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ দাতা, চার হাজার ১৪৫ টি কর্ণিয়া সংগ্রহের মাধ্যমে তিন হাজার ৪৮৮ জন অন্ধের চোখে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেয়াসহ এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়াও হত দরিদ্র রোগীদের দোরগোড়ায় উন্নত চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে ২০৭টি “বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা” ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে অসংখ্য রোগীদের চিকিসা সেবা দিয়েছি।
সর্বশেষ দেশে অসংখ্য কর্ণিয়া অস্বচ্ছতাজনিত দৃষ্টিশক্তি বঞ্চিত হতভাগ্যদের চোখে কর্ণিয়া প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে তাদের চোখের আলো ফিরিয়ে দিতে সর্বস্তরের জনগণকে মরণোত্তর চক্ষুদানে অঙ্গীকার করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান ডা. মনিলাল আইচ লিটু।
(ঢাকাটাইমস/১৪আগস্ট/এএ/এআর)