আ.লীগ সরকার দৈত্য হয়ে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে: জি এম কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১১ মে ২০২৪, ১৭:২৮| আপডেট : ১১ মে ২০২৪, ১৭:৫৪
অ- অ+

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সিন্দাবাদের দৈত্য হয়ে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা জি এম কাদের তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার শক্তি-সামর্থ্য দিয়ে এই দেশটাকে দখল করে ফেলেছে এখন জনগণের কথার কোনো দাম নেই, এখন তাদের কথায় জনগণকে চলতে হচ্ছে বর্তমান সরকার সিন্দাবাদের দৈত্য হয়ে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে

শনিবার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তরের এক মতবিনিময় সভায় জি এম কাদের এসব বলেন

জি এম কাদের বলেন, জাতি আজ চরম সংকটময় সময় পার করছে দিন যতই যাচ্ছে সংকটের গভীরতা ততই বাড়ছে আগে আমরা যেটাকে সংকট বলেছি, এখন মনে হচ্ছে সেটা কোনো সংকটই ছিল না তিনি বলেন, দেশের বেশির ভাগ মানুষ আয় দিয়ে সংসার চালাতে পারছে না জিনিসপত্রের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে টাকার অবমূল্যায়নে ডলারের দাম বেড়ে গেছে, মূল্যস্ফিতি হচ্ছে ডলার সংকটের কারণে সরকার আমদানি সংকোচন করেছে এতে অনেক কলকারখানা বন্ধ হয়ে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হয়েছে বেশির ভাগ মানুষ কাজ পাচ্ছে না, খেতে পাচ্ছে না এমন বাস্তবতায় একটি শ্রেণি ইউরোপের স্টাইলে জীবনযাপন করছে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিশাল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছে তারা

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের সব চেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে স্বাধীনতা দেশের মানুষ চেয়েছিল নিজেদের একটি দেশ হবে প্রজাতন্ত্র মানে প্রজারাই দেশের মালিক আমাদের দেশ আমরাই চালাব স্বাধীনতার সেই অর্জন নেই, দেশের ওপর সাধারণ মানুষের মালিকানা ছিনতাই হয়ে গেছে এখন জনগণের কথা বলার অধিকার নেই, কথা বলতে গেলেই নানান ধরনের সমস্যা জনগণের কথা শোনারও যেন দরকার নেই জনগণের কথায় সে চলে না, তার কথায় জনগণকে চলতে বাধ্য করছে

ধনী গরিবের বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, দেশে একটা শক্তিশালী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে, তাদের রাজনৈতিক দল বলে মনে হয় না বৈষম্য সৃষ্টির জন্য কোনো পুরস্কার থাকলে বাংলাদেশ নোবেল প্রাইজ পেত চাকরি, ব্যবসা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই প্রথম প্রশ্ন, আপনি সরকারি দলের সদস্য কি না দ্বিতীয় প্রশ্ন, আপনার পরিবারের কেউ সরকারি দলের বাইরে অন্য কোনো দল করে কি না যে রাষ্ট্রের জন্য মানুষ জীবন দিল সেই রাষ্ট্র আজ চলে গেছে একটি গোষ্ঠীর হাতে যারা আওয়ামী লীগের বাইরে তারা অবাঞ্ছিত অবস্থা এমন যেন... থাকলে দাশ হিসেবে থাকেন, না থাকলে যান কথা বলার অধিকার নেই কারো

জি এম কাদের বলেন, রাজনীতিতে গুণগত একটি পরিবর্তন এসেছে একটি শ্রেণি কিছু সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে তারা ভাবছে, সরকার তো জেঁকে বসেছে, থাকবেই তাদের সঙ্গে লাইন দিয়ে যেটুকু পাওয়া যায় আবার সরকার যাদের নিচ্ছে না, তাদের বাধ্য হয়ে সরকারের বিপক্ষে থাকতে হচ্ছে তারা না চাইলেও জনগণের পক্ষে দাঁড়াতে হচ্ছে আমাদের কিছু জায়গা দিয়েছে এটাই হচ্ছে সর্বনাশ এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিকে দেশে আর রাজনীতি থাকবে না, বিরাজনীতিকরণ চলছে জনগণকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আজকাল নির্বাচনে লোকজন যায় না তাদের বক্তব্য, আমরা গেলেই কী আর না গেলেই কী একদলীয় শাসন ব্যবস্থা সিন্দাবাদের দৈত্য হয়ে মানুষের কাঁধে বসে আছে সামনের দিকে রাজনীতি আরও কঠিন হবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা মানুষের পাশে থাকব, নাকি সুযোগ-সুবিধার পক্ষে থাকব জনগণের পক্ষে থাকতে হলে ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা থাকতে হবে যারা সুযোগ-সুবিধার লোভে পড়েছে, এটা স্বল্প সময়ের জন্য সামনের দিকে হয়তো তাদের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না যারা সরকারের দালালি করেছে, তাদের কিন্তু লাথি দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে

জি এম কাদের বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা ১৩ থেকে ১৬ হাজার মেগাওয়াট হঠাৎ করে গত বছর ১৭ হাজার হয়ে গিয়েছিল তখন ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া ১০ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ প্লান্ট বসিয়ে রাখা হয়েছিল হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেওয়া হয়নি অথচ ২৭ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে ব্যবহার করতে পারছেন না, তাহলে বানালেন কেন? প্রয়োজনের চেয়ে কিছু বেশি বানাতে পারেন তারপরও তো লোডশেডিং আছে লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে তাদের ক্যাপাসিটি চার্জ বসিয়ে বসিয়ে পয়সা দেয়া হচ্ছে, মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আরো উৎপাদন কেন্দ্র বানানো হচ্ছে, সেগুলোতেও বসিয়ে বসিয়ে পয়সা দিতে হবে ঋণের ২০ ভাগ নেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ খাতে অথচ বিদ্যুতের দাম বেড়েছে

জি এম কাদের বলেন, লোকসান কমানোর জন্য বছরে তিনবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে তিন টাকা থেকে বছরে আট টাকা হয়েছে ইউনিট সামনে আরো তিনগুণ বেড়ে যেতে পারে এই টাকা দেওয়া হচ্ছে বসিয়ে রাখা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা কোনো দিনই বিদ্যুৎ উৎপাদন করে নাই আমরা জানি, ক্যাপাসিটি চার্জ ছাড়া চুক্তি হয় ব্যবসায়ীরা ঠিক করবে কেমনে তারা ব্যবসা করবে এই সেক্টরে ব্যবসায়ী আনা হয়নি, কিছু সুবিধাভোগী লোক আনা হয়েছে কোনো ব্যবসা ছাড়াই তাদের হাজার হাজার কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে সামনে বিদ্যুতের দাম বাড়বে, মালামালের দাম বাড়বে, জনগণের কষ্ট আরো বাড়বে

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিদিন চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা আছে এখন আমরা হাজার কম ব্যবহার করছি, কারণ আমরা কিনতে পারছি না বিদ্যুৎ খাতে আমাদের দরকার হাজার ১৩৪ মিলিয়ন ঘনফুট, সেখানে আমরা দিচ্ছি হাজার ৬৮১ মিলিয়ন ঘনফুট শিল্প খাতে ৯৩১ মিলিয়ন ঘনফুট দরকার সেখানে দেয়া হচ্ছে ৭৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট হাজার শো মিলিয়ন ঘনফুট যেখানে দরকার সেখানে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি দিতে পারছি না যেটুকু দিতে পারছি তার ভাগের ভাগ দেশ থেকে দেয়া হচ্ছে আর ভাগ বিদেশ থেকে এলএনজির মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে

জিএম কাদের বলেন, আমাদের গ্যাস থেকে ডলারে পাওয়া যায়। কিন্তু বিদেশ থেকে কিনতে ৩০ থেকে ৪০ ডলার খরচ করতে হয় আমাদের দেশে এখনো যথেষ্ট পরিমাণে গ্যাস মজুদ আছে রিপোর্ট অনুযায়ী এখনো দেশে ৩৮ ট্রিলিয়ান কিউবিক ফিট গ্যাস মজুদ আছে আমরা গ্যাস উত্তোলন না করে পারসেজের দিকে গিয়েছি আমরা যে গ্যাস দিচ্ছি তার একটি বড় অংশ পাচ্ছি বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড থেকে গেল নভেম্বরে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, আল্লাহর রহমতে আমরা বোনাস পাচ্ছি এটি যেকোনো সময়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে তাহলে যে পরিমাণ গ্যাস আমরা আমদানি করছি, আরো সেই পরিমাণ গ্যাস আমদানি করতে হতে পারে

এই জ্বালানি না দিলে বিদ্যুৎসহ সব কিছু বন্ধ হয়ে যাবে উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, আমরা একটা বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছি কারণ, সরকার সময় মতো এক্সপ্লোরেশন করে নাই আমাদের দেশি কোম্পানিগুলো বলেছে আমরা যতটা অনুসন্ধান করেছি তার অর্ধেকেই গ্যাস পেয়েছি বিদেশিরা আমাদের তুলনায় কম গ্যাস পেয়েছে থেকে ১০ বছর আগে যদি আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া হতো তাহলে আমাদের এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না দেশ বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আছে

তিনি বলেন, যদি হঠাৎ করে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড বন্ধ হয়ে যায় তাহলে পরিমাগ্যাস ইমপোর্ট করতে বিলিয়ন ডলার লাগবে বর্তমান বাজার অনুযায়ী শুধু টাকা নয়, আনলোড, ট্রান্সমিশনের সুবিধাও নেই দূরদর্শিতার অভাবে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে শুধু পারসেজের দিকে নজর দেয়ার কারণে কিছু লোকের বিপুল পরিমাণ মুনাফা হয়েছে অন্যায্যভাবে জনগণের সম্পদ চলে যাচ্ছে দেশ বাঁচাতে হলে এগুলো দেখতে হবে

ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক সামছুল হকের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব সুলতান আহমেদের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের সভায় মহানগর উত্তরের ২৬ থানার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন

(ঢাকাটাইমস/১১মে/জেবি/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গাইবান্ধায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে চাচা-ভাতিজাসহ ৩ জনের মৃত্যু
এপ্রিলে ডিএমপির শ্রেষ্ঠ বিভাগ উত্তরা, থানা উত্তরা পশ্চিম
ঐকমত‍্য কমিশনের কাজের অগ্রগতি এখনো অস্পষ্ট: এবি পার্টি 
নিষিদ্ধ দলের কার্যক্রম ও নাশকতা প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা