স্বাধীনতার পতাকা নিয়ে কথা বলায় সাম্যকে হত্যা করা হয়েছে: রিজভী 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৫ মে ২০২৫, ১৬:৩৮
অ- অ+

স্বাধীনতার পতাকা নিয়ে কথা বলায় ঢাবির ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যা করা হয়েছে, এটি একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের প্রকাশনা ও প্রচার সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ৫ আগস্টের পর এক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা সবাই একটু স্বস্তিতে থাকতে চেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শিক্ষক ছাত্ররা নির্বিঘ্নে ক্লাসে যাবে, ক্লাস থেকে বের হবে। এখন কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অরাজক পরিস্থিতি, তরুণ ছাত্রের লাশ ক্যাম্পাসের মধ্যে চলছে, রক্ত ঝরছে। এখন তো আর আওয়ামী দোসররা নেই। এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, সকল বিরোধী দলীয় যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, তারা সমর্থন করেছেন। তাহলে এখন কেন লাশ পড়বে? গত পরশুদিন রাত ১২ টার সময় ছাত্রদল নেতা সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। কি অন্যায় করেছিল সাম্য! আমার তো মনে হয় এখানে রাজনৈতিক কারণ আছে। তিনজন ভবঘুরে সাম্যকে কেন হত্যা করবে? কয়েকদিন আগে সে ফেইসবুকে শাহবাগে জাতীয় সংগীত বন্ধের জন্য একটা আন্দোলন চলছিল। তার বিরুদ্ধে এবং জাতীয় সংগীতের পক্ষে একটা পোস্ট করেছে। এটাই কি সেই কারণ?

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আমরা দেখেছি ফ্যাসিবাদী আমলে পার্শ্ববর্তী দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে আবরারকে হত্যা করা হয়। আজকে জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, ৭১ এবং স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললে তার জীবন চলে যায়। অর্থাৎ দেশের পক্ষে, যারা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, দেশের স্বাধীনতার পক্ষে, যারা জাতীয় সংগীতের পক্ষে তাদের জীবন চলে যায়। আমি এজন্যই বলেছি, নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ আছে।

পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, আপনারা ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখুন। ভবঘুরেদেরকে গ্রেপ্তার করেছেন, মানুষ এসব বিষয় সহজভাবে নেয় না। মানুষ সহজভাবে নিতো যদি, সবসময় সত্য এবং ন্যায় অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতো। কিন্তু সেটা তারা নেয়নি। যেমন আবরার হত্যাকাণ্ডে নেননি, তেমনি আরও ঘটনাও নেননি। আজকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হাসিনা নেই, দোসররা নেই, রক্তপাত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারপরও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। জানুয়ারি মাসে তফাজ্জল নামে একজনকেও হত্যা করা হয়েছে। ক্যাম্পাস হবে শান্তি, এখানে থাকবে শান্তির পতাকা। সেখানে কেন রক্তপাত হবে। এটা তো হওয়ার কথা নয়।

রিজভী বলেন,'কালকে ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে গিয়েছে ছাত্রদলের নেতারা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মারা গেছে। আপনি বিরক্ত হয়েছেন, ক্ষুব্ধ হয়েছেন, আপনি তুইতোকারি করেছেন ছাত্র নেতাদেরকে। আপনি শুনতে চান না। কারণ, সাম্য ছাত্রদল করে। আপনার রাজনৈতিক চিন্তা দর্শন কি সেটা আমরা ইতিমধ্যে জেনে ফেলেছি। যারা জাতীয়তাবাদের পক্ষে ওখানে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে ছাত্র সংগঠন করে সেটা আপনি পছন্দ করেন না। আপনার উচিত ছিল প্রথমে সেই লাশ দেখা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। ভাইস চ্যান্সেলররা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বিশেষ দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজে নেমে যান, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনোই শান্তি বয়ে আনবে না।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেটা আমরা জানি না। আপনাদেরকে আমরা সমর্থন করেছি, এখনো করে যাচ্ছি। কিন্তু এনসিপি যখন যমুনার দিকে যায়, তখন তাদেরকে সাদরে বরণ করেন। তিন-চারদিন আগে দেখলাম আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে তারা গেলেন, তাদেরকে সাদরে বরণ করলেন। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা তাদের আবাসনের জন্য গেলো, তখন আপনারা তাদেরকে উপহার দিলেন লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ডগ্রেনেড। অন্তবর্তীকালিন সরকারের দায়িত্বে আপনারা রয়েছেন। আপনারা তো সুশীল সমাজের লোক। কিন্তু আপনাদের আচরণের মধ্যে এই দ্বিচারিতা কেন? আপনাদের আচরণের মধ্যে এই বিভাজন কেন?

রিজভী বলেন,পুরোদেশ অশান্তিতে ভরে উঠেছে। অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে। আপনারা সেদিকে না তাকিয়েই কি নিজেদের মত দেশ চালাবেন? কিন্তু ওই যে ফ্যাসিবাদের পতন হয়ে পালিয়ে গেছে, তাদেরকে মদদ দেওয়ার অনেক শক্তি রয়েছে এবং যারা দিচ্ছে। সুতরাং ডানে বামে সবদিকে তাকিয়ে যথাযথভাবে দেশ শাসন করুন। না হলে কেউ রক্ষা পাবেন না। কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল বা কোনো আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে আপনাদেরকে কিন্তু জনগণ ধরে ফেলবে।

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব মোকছেদুল মোমিন মিমুন,সাবেক ছাত্রনেতা মেহবুব মাসুম শান্ত, ওমর ফারুক কাওসার,ছাত্রদল নেতা ডা. তৌহিদ আওয়াল সহ উত্তরবঙ্গ ছাত্র ফোরামের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ।

(ঢাকাটাইমস/১৫মে/জেবি/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ববির নবনিযুক্ত উপাচার্যের যোগদান
ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের চারা রোপণ-উত্তোলন-বিক্রয় নিষিদ্ধ 
গত ৮ মাসে পাচার হয়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকা: মির্জা আব্বাস
গণমাধ্যমের ওপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই: তথ্য উপদেষ্টা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা