প্রবীণ বামপন্থি রাজনীতিক হায়দার আকবর খান রনো আর নেই

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা ও প্রবীণ রাজনীতিক হায়দার আকবর খান রনো আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে রাজধানীর হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও খ্যাতিমান বামপন্থি বুদ্ধিজীবী হায়দার আকবর খান গত ৬ মে সন্ধ্যায় অসুস্থতা নিয়ে একই হাসপাতালে ভর্তি হন।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ক্রনিক ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হায়দার আকবর খান রনো। ফলে তিনি যান্ত্রিক অক্সিজেন সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন।
১৯৪২ সালের ৩১ আগস্ট অবিভক্ত ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন হায়দার আকবর খান রনো। তার পৈতৃক নিবাস নড়াইলের বরাশুলা গ্রামে। বিশিষ্ট বামপন্থী এই নেতা কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় সদস্য। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে তাত্ত্বিক, বুদ্ধিজীবী এবং লেখক। তিনি ২০২২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
হায়দার আকবর খান রনোর মা কানিজ ফাতেমা মোহসীনা বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুলের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা হাতেম আলী খান ছিলেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী। প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ সৈয়দ নওশের আলী তার নানা।
তিনি যশোর জেলা স্কুল, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও সেন্টগ্রেগরি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৫৮ সালে সেন্টগ্রেগরি স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬০ সালে নটরডেম কলেজ থেকে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু কারাবাস ও অন্যান্য কারণে এই বিষয়ে পাঠ সম্পন্ন করতে পারেননি। পরে কারাগারে অবস্থানকালে আইনশাস্ত্রে ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন। হাইকোর্টের সনদও লাভ করেছিলেন তিনি। কিন্তু পরে ওকালতি পেশা গ্রহণ করেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র থাকাকালীন তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত হন। ১৯৬২ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তার সক্রিয় রাজনীতি শুরু। তিনি ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭০ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের রণাঙ্গনের সৈনিক এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও নেতা ছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালে তিনি অন্যান্য রাজননৈতিক সহকর্মীদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (লেনিনবাদী) গঠন করেন। ১৯৭৯ সালে দলের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নামকরণ করা হয়। ১৯৭৯-৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৮২-১৯৯০ এর সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন ও ১৯৯০ এর গণ অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও নেতা ছিলেন।
ঢাকাটাইমস/১১মে/ইএস

মন্তব্য করুন