চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র থেকে সরে আসতে হবে: ১২ দলীয় জোট

চট্টগ্রাম বন্দর দেশের জাতীয় অর্থনীতির প্রধান লাইফলাইন। যেকোনো মূল্যে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দেশি প্রতিষ্ঠানের হাতেই থাকতে হবে। এটি বিদেশি কোম্পানিকে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। বন্দর নিয়ে চক্রান্ত থেকে সরে আসতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ১২ দলীয় জোট।
জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বলেছেন, নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত প্রধান সমুদ্র বন্দর বিদেশি কোম্পানির তত্ত্বাবধানে দেওয়ার তৎপরতা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি। অন্তবর্তীকালীন সরকারের এত বড় জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত এককভাবে নেওয়ার কোন একতিয়ার নেই।
বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে ১২ দলীয় নেতৃবৃন্দ এসব অভিযোগ করেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, দেশের টাকায় নির্মিত জেটি ও নিজেদের অর্থে কেনা যন্ত্রপাতি দিয়ে সাজানো নিরঙ্কুশ চলমান চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বা এনসিটিকে বিদেশি প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিচালনা করার ফ্যাসিস্ট সরকারের সিদ্ধান্তকে অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করছে।
জোটের শীর্ষনেতারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দেশের টাকায় নির্মিত হয়েছে। দেশের টাকায় কেনা হয়েছে যন্ত্রপাতি। বন্দর ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান মিলে ইতোমধ্যে সক্রিয়ভাবে পরিচালিত এই টার্মিনালকে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এখনও অব্যাহত আছে। নির্মাণের ১৭ বছর কেন একটি সফল টার্মিনালকে বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে হবে? এর পেছনে রহস্য কি? কেন জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সরকার ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লেগেছে? নেতারা প্রশ্ন করেন কার স্বার্থ বাস্তবায়নে কাজ করছে এই অন্তর্বর্তী সরকার।
বিবৃতিতে নেতারা প্রশ্ন তোলেন, ‘ইতোমধ্যে দেশীয় শ্রমিকদের বেকারত্বের প্রশ্ন উঠেছে। টার্মিনালটিতে জাহাজ থেকে বার্ষিক ১০ লাখ একক কনটেইনার ওঠানো–নামানোর স্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে। সেখানে দেশীয় অপারেটর গত বছর এই টার্মিনালে জাহাজ থেকে ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার ওঠানো–নামানোর কাজ করেছে। তাহলে কাকে খুশি করতে বা কী চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলছে সরকার?’
বিবৃতিতে নেতারা অভিযোগ করেন, জি টু জি ভিত্তিতে সরকারি–বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) প্রকল্পে ন্যূনতম এক হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। যন্ত্রপাতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ এই টার্মিনালে বিনিয়োগ কোথায় হবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে গণমাধ্যমেও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। মূলত দেশের স্টেকহোল্ডারদের বাদ দিয়ে কোন পক্ষ বা কী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে এই বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লেগেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
জোটের নেতারা আরও বলেন, টার্মিনালটি বিদেশি অপারেটরকে দিয়ে পরিচালনা করালে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয় অর্ধেকের চেয়ে কমে যাবে। এতে করে ভবিষ্যৎ উন্নয়নমূলক কাজও থেমে যাবে বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উল্লেখযোগ্য আরও যেসব ক্ষতি হবে, এরমধ্যে রয়েছে-- ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে নিয়োজিত শ্রমশক্তি কর্মসংস্থান হারাবে; বিদেশি অপারেটররা লাভের অংশ বিদেশি মুদ্রায় বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবে; নতুনভাবে বৈদেশিক বিনিয়োগের কোনও সুযোগ নেই। ফলশ্রুতিতে এটি একেবারে আত্মঘাতী একটি সিদ্ধান্ত। যার পেছনে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বাইরে কিছু দেখা যাচ্ছে না।
অবিলম্বে সরকারকে দেশবিরোধী এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানান ১২ দলীয় জোটের নেতারা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোট প্রধান জনাব মোস্তফা জামাল হায়দার, জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপার) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, লেবার পার্টি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি (পিএনপির) চেয়ারম্যান ফিরোজ মুহাম্মদ লিটন ও নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি এম এ মান্নান।
(ঢাকাটাইমস/১৫মে/জেবি/এমআর)

মন্তব্য করুন