উদ্বোধনের অপেক্ষা

রামগড় স্থলবন্দরে বদলাবে চট্টগ্রামবাসীর জীবন

পলাশ চাকমা, রামগড় থেকে
 | প্রকাশিত : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৫৫

তৎকালীন ১৯২০ সালের মহকুমা শহর রামগড়। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার উপজেলা রামগড়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মহামুনি এলাকায় ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সংযোগ সেতু স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দর। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র তিন ঘণ্টায় ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য ভারতের ৭টি রাজ্যে চলে যাবে। আর কম সময়ে স্থলবন্দর হয়ে আগরতলা বিমানবন্দর দিয়ে চিকিৎসা ও ব্যবসার জন্য ভারত যেতে পারবেন চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষ। এতেই বদলাবে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ চট্টগ্রামের মানুষের জীবনধারা।

জানা যায়, রামগড়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মহামুনি এলাকাস্থ ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত প্রথম মৈত্রী সেতু ভারতের ত্রিপুরা সঙ্গে খাগড়াছড়ি রামগড়কে যুক্ত করেছে। ২০১৫ সালের ৬ জুন প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী ঢাকাতে সেতুটির ভিক্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪.৮০ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২.৫৭ কোটি ভারতীয় রুপি। নির্মিত সেতুটি দুই দেশের যোগাযোগ, চিকিৎসা ও আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। সেতুর পূর্ব প্রান্তে বাংলাদেশ অংশে ১৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ হচ্ছে রামগড় স্থলবন্দর। বন্দরের ইমিগ্রেশন ভবনের কাজ শেষ হওয়ায় শিগগিরই ভিসা নিয়ে শুরু হবে দুই দেশের যাত্রীদের যাতায়াত। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ভারতের পণ্য সহজেই বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে। আবার বাংলাদেশের পণ্য ভারতে সহজভাবে প্রবেশ করতে পারবে। তা ছাড়া আগরতলা বিমানবন্দর ব্যবহার করে কম সময়ে ব্যবসা ও চিকিৎসার জন্য ভারতের অন্যান্য রাজ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষ যেতে পারবে। এ স্থলবন্দরের মাধ্যমে তাদের এখানে বাণিজ্য ও চিকিৎসার প্রসার ঘটবে। স্থলবন্দরের সুবিধার্থে বর্তমানে চট্টগ্রামের বড়ইয়ারহাট থেকে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত সেতু ও কালভার্টসহ ৩৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তের কাজ চলছে।

রামগড় উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা গণমাধ্যমকর্মী মোশারফ হোসেন জানান, রামগড় স্থলবন্দরটি ব্রিটিশ আমলে হওয়ার কথা ছিলো। এখন যেটি হচ্ছে, এই বর্তমান যুগে এখানে পর্যটকের পদচারণা বেশি। উদ্দেশ্যের মধ্যে এটিই বিফ্রিং করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, পর্যটক বাংলাদেশের কক্সাবাজার,পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং ভারতের ৭টি রাজ্যগুলোর জন্য কার্যকর হবে। আর যারা ভারতে চিকিৎসার জন্য রেল ব্যবস্থা আছে এবং আখাউড়া এয়ারপোর্ট ব্যবহার করে সহজে যাতায়াত করতে পারবে। সীমান্ত সড়কের কারণে এলাকার পর্যটনের দ্বার খুলবে এবং অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।

এ ছাড়া স্থলবন্দরের সুবিধার্থে বর্তমানে চট্টগ্রামের বাড়ৈয়ারহাট থেকে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত সেতু ও কালভার্টসহ ৩৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তের কাজ চলছে।

রামগড় উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন জানান, রামগড় স্থলবন্দর চালু হলে এই উপজেলার অর্থনীতি ও পর্যটন ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হবে। তবে স্থলবন্দরে কাজ কিছুটা পিছিয়ে গেছে কিছু জটিলতার কারণে। তবে সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে, স্থলবন্দরটি খুব শিগগিরই চালু হবে। স্থলবন্দর চালু হলে পর্যটনের বিশাল সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে, ভারত ইতোপূর্বে ১হাজার ২শত পাসপোর্ট দিয়েছেন এবং তারা রাঙামাটি জেলার সাজেকে পর্যটন কেন্দ্রে আসার জন্য মুখিয়ে আছেন। তবে অপেক্ষায় আছে কবে চালু হবে। সরকারের কাছে একটাই দাবি দ্রুত স্থলবন্দরটি চালু করা হয়।

স্থলবন্দর স্থাপন করে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু উপহার দেওয়ার জন্য রামগড় উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী জানান, আগামী মাসের যেকোনো সময় স্থলবন্দরটি চালু করা হবে। এটি চালু হলে বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ চিকিৎসা জন্য এবং ঘুরতে ভারতে সহজে যাতায়াত করতে পারবে।

তিনি আরো জানান, ১৯২০ সালের রামগড় উপজেলা একটি মহকুমা শহর নামে পরিচিত ছিলো। তবে কালের বির্বতনে অনেক কিছু হারিয়ে গেছে এই উপজেলা থেকে। তবে স্থলবন্দর নির্মাণের মাধ্যমে এই ঐতিহ্যগুলো ফিরে পাবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

রামগড় পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলম কামাল জানান, রামগড় একটি পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে উঠছে। ইতোপূর্বে পর্যটকের আনাগোনা বেড়ে গেছে। এই স্থলবন্দর চালু হলে আরো পর্যটক বাড়বে এবং এই উপজেলার অর্থনীতির চাকা সচল হবে ।

এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, রামগড় স্থলবন্দর চালু হলে ভারতের সাথে বাণিজ্যের আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে, ব্যবসার গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং এখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়বে। তবে স্থলবন্দরটি কবে উদ্বোধন হবে প্রশাসনিকভাবে এখানো নির্দেশনা আসেনি।

(ঢাকাটাইমস/০৩ সেপ্টেম্বর/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :