প্যান্ট খুলে অধ্যক্ষকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি সহকারী শিক্ষকের, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

বিদ্যালয়ে দিনের পর দিন অনুপস্থিত। আবার উপস্থিত থাকলেও ক্লাস নেন না। চলেন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে। নাম ভাঙান প্রধানমন্ত্রীর অফিসের বড় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য রয়েছে। এরকম নানান অভিযোগ রয়েছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনের বিরুদ্ধে।
একপর্যায়ে বিদ্যালয় থেকে দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির বিষয়ে ওই শিক্ষককে অফিসিয়ালি নোটিশ দিলে তা আমলে না নিয়ে বিদ্যালয়ে এসে অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেন শিক্ষক শাহীন। কলেজের অধ্যক্ষকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি দেখানোর পর জোর করে হাজিরা খাতা নিয়ে স্বাক্ষর করার চেষ্টা করেন এবং নানাভাবে হুমকি-ধামকি প্রদর্শন করেন তিনি।
সোমবার কলেজের অধ্যক্ষ মো. শরওয়ার আলম এসব অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম শাহীন কোনো কিছু অবগত না করেই দীর্ঘদিন লাপাত্তা ছিলেন। এ ঘটনায় অফিস থেকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) কলেজে এসে কক্ষে প্রবেশ করে জানতে চান, কেন এবং কোন সাহসে তাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কার এত ক্ষমতা? তিনি দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন। এই বলে হাজিরা খাতায় জোর করে অনুপস্থিতির দিনগুলোর স্বাক্ষর দিতে যান। স্বাক্ষর দিতে নিষেধ করলে তিনি এগিয়ে আসেন এবং অন্যান্য শিক্ষকদের সামনেই নিজের প্যান্ট খুলে অশ্লীলভাবে অঙ্গ প্রদর্শন করেন। এতে আমরা সবাই বিব্রত হই।
এ ঘটনা শোনার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। ঘটনার পরদিনেই সকালে কলেজের গভর্নিংবডি বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে শিক্ষক শাহিনকে চূড়ান্তভাবে চাকরিচ্যুত করার দাবি করে মানববন্ধন করে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরাসহ এলাকাবাসী। এসময় দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
অধ্যক্ষ আরও বলেন, জাহাঙ্গীর আলম শাহীন একজন ফেনসিডিলখোর। সবসময় নেশার ওপর থাকে। নানান সময় ছাত্রী হেনস্থারও অভিযোগ পেয়েছি। ২০২১ সালে বিজিবির হাতে ফেনসিডিলসহ ধরাও পড়েছিল। সেই মামলাটির চার্জশিটও হয়েছে। তিনি সাংবাদিকতার ভয় দেখান সবখানে। অথচ যেসব কাগজে তিনি কাজ করতেন সবগুলো থেকে তার কর্মের জন্য চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শাহীন শিক্ষক নামের কলঙ্ক। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে শিক্ষকতা চলে না। কোনো শিক্ষকের সঙ্গে তার মিল নেই।
ক্লাস ফাঁকির বিষয়টি তার নতুন নয়। এর আগেও বিদ্যালয়ে তিনি বিভিন্ন সময় উপস্থিত থাকেননি। অফিসিয়ালি তাকে বললে তিনি সবার সাথে খারাপ আচরণ করতেন। আর অধ্যক্ষের সঙ্গে যে অশ্লীল আচরণ করেছেন সেটির বিচার না হলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অভিভাবকের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রী বলেন, ওই শিক্ষকের বিচার চাই। ওনি যা করেন তা সবাই জেনে গেছে। অনেক বড় আপুদের তিনি বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিতেন। তার বিচার দাবি করছি।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বলেন, শাহীনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মের অভিযোগ আসছে। তাকে অনেক সময় শুধরানোর জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু তার পাগলামি আর মাতলামি চরম মাত্রায় অতিক্রম করেছে। এখন সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে অভিযোগ জমা হয়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আন্দোলন করছে মানববন্ধন করছে। যা হবে এখন আইনিভাবেই ফায়সালা হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম শাহীন মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমি অসুস্থ থাকায় মৌখিকভাবে ছুটি নিয়েছিলাম। এরপরও আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। আমি লিখিত উত্তর দেইনি। গত ৩ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে গেলে অধ্যক্ষ আমাকে নোটিশের উত্তরের কথা জিজ্ঞেস করলে আমি রেগে গিয়ে খারাপ আচরণ করেছি। এটা আমার ভুল হয়েছে। তবে সবকিছুর পেছনে একটা বড় শক্তি কাজ করছে। যাতে এই প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে বিতাড়িত করা হয়।’
(ঢাকাটাইমস/৪সেপ্টেম্বর/এআর)

মন্তব্য করুন