১০ দিন ধরে বিদ্যুৎহীন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছয় গ্রাম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:৪১

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী দুইটি ইউনিয়েনে পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। উদ্বোধনের দেড় বছরের মাথায় ক্যাবল ছিঁড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে দুই ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম। ফলে ১০ দিন ধরে বিদ্যুৎহীন রয়েছে চরাঞ্চলবাসী। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।

জানা যায়, সদর উপজেলার ইসলামপুরে চাটাইডুবী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র রয়েছে। এর আওতায় মীরেরচর থেকে বাতাশ মোড় পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এবং বাতাশ মোড় থেকে নিশিপাড়া পর্যন্ত পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে প্রায় পৌনে ১৪ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হয়। ১০৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে পদ্মার চরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এটি উদ্বোধন করা হয়। এর মাধ্যমে দুই উপজেলার ৪ হাজার ২০০ গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধায় আসে। কিন্তু দেড় বছরের মাথায় ৪০ কিলোমিটার সাবমেরিন ক্যাবলের তিনটি ফেজের মধ্যে একটি ফেজের সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ১৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার ক্যাবলের দুই দফায় তিনটি ফেজের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে ১০ দিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন দুইটি ইউনিয়ন।

সূত্রটি জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয় প্রায় ৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ কোটি টাকা ব্যয় হয় নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনে। গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে পদ্মা নদীর তলদেশে বসানো সাবমেরিনের সবকটি ক্যাবল ছিঁড়ে যায়। ফলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়েনের চরলীপুর, দক্ষিণ পাকা, নিশিপাড়া চর ও কদমতলা এবং উজিরপুর ইউনিয়নের সেতারাপাড়া।

এসএম জুয়েল নামে দক্ষিণ পাঁকার এক বাসিন্দা জানান, গত ১০ দিন ধরে বিদ্যুৎসেবা পাচ্ছে না তার গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা। ফলে বিদ্যুৎ পরিষেবা পেতে তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বারকে বিষয়টি জানালেও তারা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এতে কয়েকশ’ পরিবার বিদ্যুৎহীন রয়েছে। তারা সবাই সাবমেরিন ক্যাবলের সাহায্যে বিদ্যুৎসেবার আওতায় ছিল।

সদর উপজেলার সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম জানান, ১০ সেপ্টেম্বর রাত থেকে তাদের গ্রাম বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তাদের আশপাশের কোথাও বিদ্যুৎ নেই। এতে তাদের কষ্টের সীমা নেই। সন্ধ্যা হলেই অন্ধকার হয়ে যায় পুরো এলাকা। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।

সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের প্রায় ৩০০ পরিবার অন্ধকারে রয়েছে। নদীর তলদেশে সাবমেরিন কেবল স্থাপনে সমস্যার কথা জানানোর পরও পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক বলেন, সাবমেরিন ক্যাবলের সাহায্যে চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ আসায় এলাকার মানুষের জীবনমান বদলে গেছে। বিদ্যুৎ ছাড়া এখন তাদের জীবনযাত্রা অচল হয়ে যায়। এ মাসের শুরুর দিক থেকেই সাবমেরিন ক্যাবলের দুটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন। লোডশেডিংয়ের সময় চরম ভোগান্তিতে পড়েছিল। তবু এলাকায় কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ এলেও মোবাইল ফোনে চার্জসহ অন্য কাজ করা হয়ে যেত। কিন্তু গত ১০ দিন ধরে চরাঞ্চলে কোনো বিদ্যুৎ নেই। এলাকার মানুষ পদে পদে ভোগান্তিতে পড়ছেন।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার ছানেয়ার হোসেন বলেন, ১০ সেপ্টেম্বর রাতে সাবমেরিন ক্যাবলের তার ছিঁড়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। প্রায় ৭০ কোটি টাকার প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পটি সচল রাখতে কারিগরি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ জনবল অন্য আরেক জায়গায় কাজ করছে। ফলে এখানকার সাবমেরিন ক্যাবলটি মেরামতে সময় লাগতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/২১ সেপ্টেম্বর/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :