নির্বাচনের আগে অগ্নিসংযোগ-নৃশংসতা হলে আর সহনশীলতা দেখানো হবে না: প্রধানমন্ত্রী

আন্দোলনের নামে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে অগ্নিসংযোগ এবং অমানবিক নৃশংসতার মতো ঘটনা ঘটলে আর কোনো সহনশীলতা দেখানো হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার লন্ডনের স্থানীয় সময় বিকালে সেন্ট্রাল লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার এলাকার ম্যাথডিস্ট চার্চ হলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলনের নামে নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসবাদ বা একইভাবে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা বা হামলার ঘটনা ঘটলে রেহাই দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।’ প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩-১৪ সালে যাত্রীবাহী বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ বহু ধরনের যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে জনগণকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে, সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে সারাদেশে তান্ডব চালিয়েছিল তথাকথিত আন্দোলনের নামে। তিনি বলেন, ‘অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নারীসহ অনেক লোক গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছিল এবং তারা তাদের আঘাত নিয়ে অমানবিক জীবনযাপন করছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলনে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। সন্ত্রাসবাদে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা এবং দেশের সম্পত্তি নষ্ট করা তাদের আন্দোলন। এর আগে ২৯ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জীবন নিয়ে এমন কোনো চেষ্টা করা হলে কোনো ক্ষমা করা হবে না।’
আরওে পড়ুন>> আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিকল্পনা: যেমন পরিস্থিতি তেমন কৌশল
অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সংরক্ষিত নারী সাংসদ সৈয়দা জহুরা আলাউদ্দিন প্রমুখ। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে সকাল ৯টা থেকে সভাস্থলে কয়েক হাজার নেতাকর্মী জড়ো হন। এসময় শেখ হাসিনার নামে বিভিন্ন স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না কারণ তারা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ধোঁকাবাজি খেলেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে।’
দেশের জনগণ কখনই ভোট কারচুপিকারীদের ক্ষমতায় বসতে দেয় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘বিএনপি-জামায়াত জোট ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার নিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করে এবং সেই তালিকা দিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করে’ বলে দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, উল্টো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করেছে। তাদের অনেকেই জীবন উৎসর্গ করেছেন।’
‘বিএনপি এখন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আন্দোলন করছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে তার ওপর ন্যস্ত নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় কারাদন্ড স্থগিত করার পর খালেদা জিয়াকে তিনি বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন।
খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছুই করার নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আইন অনুযায়ী যা করতে পারেন তাই করেছেন।
‘অনেকেই এখন যুক্তি দিচ্ছেন, আইন নিজের গতিতে চললেও খালেদা জিয়ার প্রতি আমি বেশি সহানুভূতি দেখাতে পারি’ বলেন তিনি।
১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, শেখ রেহানার বাড়িটিকে একটি পুলিশ ফাঁড়িতে পরিণত করা, যা তিনি জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রণীত আইনের অধীনে পেয়েছিলেন এবং ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর তাকে (শেখ হাসিনা) খালেদা জিয়ার বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি না দেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কীভাবে খালেদা জিয়ার জন্য আমার কাছ থেকে আরও সহানুভূতি আশা করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আইনীভাবে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যেতে হলে সাজা স্থগিতের আবেদন বাতিল করতে হবে। তখন তাকে কারাগারে যেতে হবে। কারাগার থেকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে আদালতে আবেদন করতে হবে। তখন আদালত কী সিদ্ধান্ত দেবেন সেটা আদালতের বিষয়। আমার যতটুকু ক্ষমতা ছিল আমি মানবিক দৃষ্টিতে তার সাজা স্থগিত করেছি। এর বাইরে আমার কিছু করার নেই।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল। তখন প্রচুর অর্থ সম্পদ বানিয়েছে। জনগণ কিছু না পেলেও তারা মানি লন্ডারিং করে প্রচুর টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তাদের কারণেই দেশে ইমার্জেন্সি হলো। আমাকেই প্রথম জেল খাটতে হলো। তারেক তো জীবনে রাজনীতি করবে না বলে দেশ থেকে পালিয়ে এলো। মায়ের জন্য এতো মায়া থাকলে সে দেশে যায় কেন?’
নির্বাচনের নামে বিএনপি বাণিজ্য করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩০টি সিট পায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আসে নি। ১৮ সালের নির্বাচনে এলো সেখানে মনোনয়ন বাণিজ্য চলল। লন্ডন থেকে একজন, গুলশান থেকে আরেকজন আবার নয়াপল্টন থেকে আরেকজন প্রার্থীর মনোনয়ন যায়। এতে নির্বাচন কমিশন বিভ্রান্ত হয়। মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে বিএনপির তৎকালীন ফরেইন অ্যাফেয়ার্স কমিটির আহ্বায়ক ইনাম আহমেদ চৌধুরীসহ অনেকেই দল ছেড়েছেন। তাদের কাজ হচ্ছে বাণিজ্য করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমাদের স্যাংশনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। যাদের দিয়ে আমরা জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি রোধ করলাম তাদের নামে স্যাংশন জারি করে তারা। এসব স্যাংশনে আমাদের যায় আসে না। এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। প্রয়োজনে আমরাও তাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন জারি করব।’
তিনি প্রবাসীদের সহযোগিতার কথা স্মরণ করে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে আমার নামে মামলা দেয়। আমি তখন লন্ডনে। আমি মামলা ও ওয়ারেন্ট জারির কথা শুনে দেশে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু আমাকে একা দেশে যেতে দিচ্ছেন না প্রবাসী নেতাকর্মীরা। যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী আমাকে নিয়ে দেশে যাচ্ছেন। কিন্তু এয়ারপোর্টে আমাদের যেতে দিচ্ছে না। যুদ্ধ করে আমরা বাংলাদেশে যাই। গিয়ে অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হন। এই প্রবাসীরা যেভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে ছিলেন ঠিক তেমনিভাবে আমারও দুর্দিন-দুঃসময়ে পাশে ছিলেন। বর্তমানেও আছে ভবিষ্যতেও থাকবেন।’
প্রবাসীদের পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও উন্নয়নমূলক কাজ সহজলভ্য করে তোলা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রবাসীদের পাসপোর্ট নবায়ন, এনআইডি সেবা সহজ করে দিয়েছি। এখন প্রবাসীরা প্রবাসে বসে বায়োমেট্রিক কার্ড পাচ্ছেন। দেশে বৈধভাবে টাকা পাঠিয়ে রেমিট্যান্সের ওপর ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছি।’
এসময় হুন্ডির মাধ্যমে টাকা না পাঠাতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
(ঢাকাটাইমস/০৩অক্টোবর/এফএ)

মন্তব্য করুন