সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ না হওয়া পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে অন্তঃবর্তীকালীন সরকার: মান্না

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:৫৪

অন্তঃবর্তীকালীন সরকার কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। বলেন, ‘সুশীল সমাজের এমন প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অন্তঃবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে যারা জনগণের কল্যাণে কাজ করবে। সেই সরকার কেবল তিন মাস নয়, সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ না হওয়া পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে।’

শনিবার সকালে রাজধানীর এক হোটেলে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘অন্তবর্তীকালীন সরকার এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি একথা বলেন। সেমিনারে বক্তব্য দেন বদিউল আলম মজুমদার, নূর খান লিটন, আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আবু সাঈদ খান, আব্দুল হক, শহীদুল্লাহ কায়সার, ডা. জাহেদ উর রহমান। সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার।

অন্তঃবর্তী সরকারের প্রথম কাজ হবে দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা জানিয়ে মান্না বলেন, ‘অন্তঃবর্তীকালীন সরকার আসার পর দ্রব্যমূল্যের দাম যদি আরও বাড়তে থাকে তাহলে নির্বাচনও হবে না, অন্তবর্তীকালীন সরকার কতদিন টিকে তাও বলা যাবে না।’

মান্না বলেন, ‘আমি মনে করি অন্তঃবর্তীকালীন সরকার টেক কেয়ার করবে যাতে দ্রব্যমূল্যের দাম কমে, রিজার্ভ ফিরে আসে আগের মতো, টাকার মান বাড়ে, দেশে অন্যায় দুর্নীতি কমে।’

বাংলাদেশ এই মুহূর্তে যে চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে, সেই সংকট অতিক্রম করে একটি গণতান্ত্রিক, কল্যাণমুখী রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এই সেমিনার জানিয়ে মান্না বলেন, ‘লুটপাট, দুর্নীতির মাধ্যমে সরকার দেশকে চরম অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। একইসঙ্গে অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে আবারও একটি একতরফা প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের পাঁয়তারা করছে।’

‘আমরা সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন তথা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের কথা বলছি। রাষ্ট্রের এমন একটি সংস্কার যাতে সত্যিকার অর্থেই জনগণ রাষ্ট্রের মালিক হয়ে ওঠে এবং নতুন করে কোন স্বৈরাচারের জন্ম হতে না পারে। আমরা একটা সম্ভাবনার সূর্য দেখছি এবং আমাদের বিশ্বাস, ‘আমরা পারব’। আর এই পরিবর্তনের, এই সংস্কারের সূচনা করতে হবে এখনই, ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগের সাথে সাথেই।’

‘পরেছি যবনের হাতে, খানা খেতে হবে’ প্রবাদটি উল্লেখ করে মান্না বলেন, ‘মানুষ কার হাতে পরেছেন তা বুঝেছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেছিলেন, বাঘে ছুলে আঠার ঘা আর উনি ছুলে ছত্রিশ ঘা। এও বলেছিলেন ,অনেকেই একসময় টের পাবে। এখন মানুষ সত্তিই টের পাচ্ছে। তিন করোলা কিনতে হচ্ছে ত্রিশ টাকায়। এতকিছুর পরও সরকার বলছে, ‘যাই হোক নির্বাচন হবেই। সুতরাং এখন পাঞ্জা লড়া ছাড়া ভদ্রতা করে দেশের জটিল সমাধান করা যাবে না।’

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ঘুরেফিরে একটি প্রশ্ন সমানে আছে, তা হলো সরকরের বিরুদ্ধে কোন সংলাপ হবে, এবং সেই সংলাপের মধ্য দিয়ে দেশের জটিল সমস্যার কিভাবে কোনো সমাধান হবে?’

মান্না বলেন, ‘এর থেকে বড় ক্রাইসিসের মুখোমুখিও আমরা হয়েছি। এর চেয়ে বড় প্রশ্নেন সমাধান আগেও আমরা করেছি।

‘আওয়ামী চলে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু বিএনপি বসতে পারবে না। এর আগে একটা নির্বাচন লাগবে, সে নির্বাচনটা যেন বৈধ হয়, সেরকম ব্যবস্থা লাগবে। আর সে ব্যবস্থা করতে পারে একটা অন্তঃবর্তীকালীন সরকার।’ বলেন তিনি।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে এই সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের সাংবিধানিকতা নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। কেবলমাত্র একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতেই সরকার সকল আয়োজন করেছে। আমরা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা কাউকে ক্ষমতাচ্যূত করতে বা কাউকে ক্ষমতায় বসাতে কথা বলছি না। আমরা বলছি জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কথা। আমরা সুজনের পক্ষ থেকে বিবদমান রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ প্রয়োজনীয়তার কথা বলছি এবং সেই আলোকে কাজ করছি। আমি মনে করি, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।

নূর খান লিটন বলেন, ‘এই সরকার একদিকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, অন্যদিকে মানবাধিকার হরণ করেছে। গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বিনা অপরাধে গ্রেপ্তার এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আজকের সেমিনারে নাগরিক ঐক্য যে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছে, সেখানে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে মানবিক, গণতান্ত্রিক হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে, কিছু কর্মসূচি বা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে৷ এগুলো নিয়ে আরও ব্যাপক পরিসরে আলোচনা করা প্রয়োজন। একটি বিষয় পরিষ্কার যে, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তা যে নামেই হোক না কেন, তার অধীনেই নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে।’

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে অনেক আগেই। এখনো প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তিনি বলেন, এই সরকার যে উন্নয়নের কথা বলে সেই উন্নয়ন হয়েছে তাদের সহযোগী লুটপাটকারীদের৷ দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না, এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এটা তো এক দলের সরকার না। এটা এক ব্যক্তির সরকার। উনি যা বলেন, সব মন্ত্রণালয় এমনকি বিচার বিভাগ ঠিক তাই করে। মধ্যযুগীয় রাজাদের মতো ক্ষমতা যার হাতে তার অধীনে আর যাই হোক, কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।’

আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান বলেন, ‘আপনারা যদি জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করেন, জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন, তাহলে তো বিদেশী শক্তি হস্তক্ষেপ করবেই। আপনারাই তো বিদেশী শক্তিকে সেই সুযোগ দিয়েছেন। নাগরিক ঐক্য যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলেছে, আমি মনে করি এরকম একটা সরকার সংকট উত্তরণের জন্য এই মূহুর্তে দরকার। 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে কিনা সেই প্রশ্ন এখন করে লাভ নেই। এই মূহুর্তে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন বিকল্প নেই।’

(ঢাকাটাইমস/২১অক্টোবর/এলএম/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

সরকারের উৎপাদন করার চেয়ে আমদানি করার চাহিদা বেশি: নজরুল ইসলাম খান

‘ফারাক্কা দিবস’ যেকোনো অধিকার আদায়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে: মির্জা ফখরুল 

বাংলাদেশকে রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোল‌নের বিকল্প নেই: দুদু

রিজার্ভ আর অবৈধ সরকারের পতন কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না: এবি পার্টি

ফারাক্কা দিবসের অঙ্গীকার- যৌথ নদী রক্ষায় সোচ্চার হোন: বাংলাদেশ ন্যাপ

অসুস্থ তাঁতীদল নেতা রেজাউল করিমকে দেখতে গেলেন কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ

শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ছাত্রলীগের কর্মসূচি

জাপাকে বিক্রি করে নেতাকর্মীদের ক্রীতদাস বানানোর চেষ্টা হয়েছে: কাজী মামুন

আ.লীগই ষড়যন্ত্র করে: সালাম

দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের কিছুই অবশিষ্ট নেই: জামায়াত

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :