আমন ধানে পোকার হানা, দুশ্চিন্তায় কৃষক

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৩:৫৪

চলতি আমন মৌসুমে কুষ্টিয়ায় আমনে কারেন্ট পোকার হানা। পোকার আক্রমণ দেখা দেওয়ায় কৃষকেরা আমন নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। এই পোকার আক্রমণে ধানের গাছ পুরো শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে এতে প্রচুর পরিমাণে চিটা পড়ছে।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৬ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কয়েকশ হেক্টর বেশি জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। ধান আবাদি ৭শ কৃষককে সরকারি প্রণোদনা সুবিধা দিয়ে ৭শ বিঘা জমিতে উপসী জাতের আমন ধানের আবাদ করা হয়। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। হেক্টরে প্রতি ৬.৭ মেট্রিক টন ফলন হচ্ছে। তারা আরো দাবি করেন বিঘা প্রতি ২০-২২ মণ ধানের ফলন হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২৫ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। পৌর এলাকার আংশিক, শোমসপুর ইউনিয়ন, শিমুলিয়া ইউনিয়ন, জানিপুর ইউনিয়নে সরেজমিন ঘুরে মিলেছে ভিন্ন চিত্র। অধিকাংশ খেতে ধানের বেশিরভাগ বাইল মারা গেছে। প্রতিটি ধান গাছের সাথে হলুদ জাতীয় পোকা দেখা যাচ্ছে।

ধান বিক্রি করে পেয়াজ আবাদের টাকা জমাবেন বলে অনেকটা নিশ্চিত ছিলেন কৃষক আরমান আলী শেখ। কিন্তু ধান কাটতে এসে হতাশ হয়েছেন তিনি। কারেন্ট পোকার আক্রমণে তার জমির ১৫ থেকে ২০ ভাগ ধানের গাছের বাইল নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে তার লাভে গুড়ে বালি পড়েছে।

পৌর এলাকার মালিগ্রামের কৃষক জাকির প্রামাণিক ওরফে জাফরকে তার নিজের জমিতে ধান কাটতে দেখা যায়। তিনি আড়াই বিঘা জমিতে উপসি জাতের রোপা আমন ধানের আবাদ করেছিলেন। ধান দুধভরা হওয়া পর্যন্ত ভালো ছিল। এর পরে হঠাৎ ধানের বাইল শুকিয়ে যেতে দেখেন। স্থানীয় দোকানিদের পরামর্শে ওষুধ স্প্রে করেছিলেন। কিন্তু যা ক্ষতি হবার তা হয়ে গেছে। আবাদি জমিতে ৫০ মণ ধান পাবেন বলেন আশা করেছিলেন। তিনি আশা করছিলেন পেঁয়াজ আবাদের টাকা হয়ে যাবে। এখন ৩০ মণ ধান হতে পারে বলে অনুমান করছেন। তার জমির ১৫ ভাগ ধান চিটা হয়ে গেছে। এই মাঠে তার মত ফরিদ শেখ, রমজান আলীসহ প্রতিটি কৃষকের জমিতে একই অবস্থা দেখা যায়।

শোমসপুর ইউনিয়নের বুজরুখ মিজাপুর গ্রামের কৃষক রাজ্জেক শেখ নিজের আট বিঘা জমিতে গোল্ডেন ও ৭৫ জাতের ধান আবাদ করেছিলেন। ইতোমধ্যে দেড় বিঘা জমির ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে হয়ে গেছে। কারণ জানাতে পারেনি এই কৃষক। তার বাকি জমির ২০ ভাগ ধানের বাইল কেটে দিয়েছে কারেন্ট ও মাজরা পোকা। দোকানিদের পরার্মশে জমিতে ওষুধ দিয়েছিলেন। তাতে কাজ হয়নি। তার নিজের জমিতে শুধু ধান আবাদে ব্যয় করেছেন প্রায় ৭০ হাজার টাকা। ১৫০ মণ ধান পাবার আশা করছিলেন। পোকার আক্রমণের ফলন কমে গেছে। এখন বিঘা প্রতি ১৩-১৪ মণ ফলন হচ্ছে। আনুপাতিক হারে তিনি ১০০ মণ ধান পাবেন কী তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন।

একই গ্রামের কৃষক তুহিন শেখ। তিনি ৫ বিঘা জমিতে ধানী গোল্ড ও ৮৭ জাতের ধান রোপণ করেছিলেন। তার জমির ৩০ ভাগ ধানের বাইল কেটে দিয়েছে কারেন্ট ও মাজরা পোকায়। কৃষি অফিসের একজন সহকারী কৃষি অফিসারে পরামর্শে ওষুধ দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজে আসেনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সবুজ কুমার সাহা বলেন, তারা নিজেরা অনেক জমির ধান কাটার সময় মাঠে ছিলেন। সেখানে ফলন হয়েছে ২০-২২ মণ। আবহাওয়া ভালো থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। ফসলের পরিচর্যার ওপর নির্ভর করে ফলন।

তিনি বলেন, কারেন্ট পোকা থাকে গাছের নিচের অংশে। ওই পোকা ধানের বাইলের ক্ষতি করতে পারে না। তবে তিনি স্বীকার করেন হলুদ রঙ এর এক জাতীয় ছত্রাক দেখা যাচ্ছে। যা ফসলের ফলনে কোন প্রকার ক্ষতি করে না।

(ঢাকা টাইমস/১৯নভেম্বর/প্রতিনিধি/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :