শাহ জাফরের বিএনএমে যোগদান: ফরিদপুরে নিন্দার ঝড়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি ছেড়ে সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম) যোগ দেওয়ায় ফরিদপুর-১ আসনজুড়ে বইছে নিন্দার ঝড়। এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে।

তারা বলছেন, শাহ জাফর কখনোই প্রকৃতপক্ষে বিএনপি করেননি। বরং নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিএনপির সঙ্গে থেকেছেন। তিনি বিএনপির সঙ্গে থেকে দলের মধ্যে বিভেদ-বিভাজন অন্তঃকোন্দল সৃষ্টি করেছেন।

শাহ জাফর বিএনপি ছেড়ে যাওয়ায় বিএনপি উপকৃত হয়েছে বলে মন্তব্য অনেক নেতাকর্মীর।

১৯৭৯ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দল থেকে চার বার ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। ১৯৭০ সালের বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়ে রাজনীতির হাতেখড়ি তাঁর। সে সময় তিনি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ভিপিও নির্বাচিত হন (১৯৭০-৭১)।

তিনি ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন বৃহত্তর ফরিদপুরের মুজিব বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে ফরিদপুর-৪ (বর্তমান ফরিদপুর-১) আসন থেকে প্রথমবার আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮১ সালে প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বাকশালে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ-বাকশাল জোট থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে তৃতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

৯০ পরবর্তীতে জাতীয় পার্টিতে ভাঙন লাগলে তিনি এরশাদকে ছেড়ে নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। পরবর্তীতে শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফর ২০০৩ সালে জাতীয় পার্টি থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিতে যোগদান করেন। সে সময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি সরকারের প্রভাব খাঁটিয়ে ফরিদপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ কাজী সিরাজুল ইসলামকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করান তিনি।

কাজী সিরাজুল ইসলাম পদত্যাগ করলে তার শূন্য আসনে ২০০৫ সালে ফরিদপুর- ১ (বোয়ালমারী-মধুখালী-আলফাডাঙ্গা) উপ-নির্বাচনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাহ জাফর। সর্বশেষ শাহ জাফর কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য হয়ে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আব্দুর রহমানের কাছে ১ লাখ ৫ হাজার ভোটের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হন।

শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরের বিএনপি ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বলেন, শাহ জাফর সাহেবের এটা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্তা নেই। আমাদের দল দলের মতোই আছে। বিএনপির কোনো লোক তার সঙ্গে যাবে না। তিনি সুবিধা পাওয়া এবং ব্যক্তিস্বার্থের জন্য এটা করতে পারেন। বিএনপি যারা করে তারা তার সঙ্গে যেতে পারেন না, আমি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এটা বলতে পারি।

শাহ জাফরের বারবার দল বদলের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, বারবার দল বদলের জন্য তাকে সবাই ধিক্কার দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর-১ আসনের বিএনপির আরেক সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, শাহ জাফর কখনোই প্রকৃতপক্ষে বিএনপি করেন নাই। তার নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিএনপির সঙ্গে থেকেছেন। তিনি বিএনপির সঙ্গে থেকে দলের মধ্যে বিভেদ-বিভাজন অন্তঃকোন্দল সৃষ্টি করেছেন। ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে বারবার নীতি বিসর্জনকারী, আদর্শচ্যুত ব্যক্তি দল থেকে বের হয়ে যাওয়াতে বরং বিএনপি উপকৃত হয়েছে।

এক প্রতিক্রিয়ায় শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর মুঠোফোনে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নির্বাচন করতেই বিএনপি ছেড়ে বিএনএম-এ যোগ দিয়েছি।

তিনি জানান, গত পাঁচ-ছয় দিনের সিদ্ধান্তে তিনি দলটিতে যোগ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পেয়েছেন।

ফরিদপুর-১ আসনের জনসাধারণকে কোনো অরাজনৈতিক মানুষের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, আমি আমার এলাকার মানুষের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাছাড়া আমি সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করেছি। শেষ বয়সে এটাই আমার শেষ নির্বাচন। এটাই আমার শেষ রাজনীতি। আশা করি ফরিদপুর-১ আসনের মানুষ আমাকে ভালোবেসে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন।

(ঢাকাটাইমস/২১ নভেম্বর/জেডএম)